ডেস্ক রিপোর্টঃ আটকের সাড়ে ৬ ঘণ্টা পর ছেড়ে দেয়া হয়েছে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর বুধবার রাত ১১টার দিকে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এর আগে বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে রাজধানীর শাহবাগ এলাকা থেকে তাকে আটক করে র‌্যাব-৩ এর টিকাটুলি কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল এমরানুল হাসান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

ইমরান এইচ সরকারকে কী কী বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে? তিনি কী জবাব দিয়েছেন- জানতে চাইলে র‌্যাব কর্মকর্তা লে. কর্নেল এমরানুল হাসান বলেন, অনুমতি না নিয়ে সমাবেশ করার বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাছাড়া তাকে আরও বেশ কিছু প্রশ্ন করা হয়েছে।

এ মুহূর্তে ওই সব প্রশ্ন বা প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না। এদিকে ইমরান এইচ সরকারকে আটকের সময় বাধা দেয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লাঠিপেটায় গণজাগরণ মঞ্চের সাত কর্মী আহত হন। তারা হলেন- ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সহসভাপতি অনিক রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ, ঢাকা মহানগরের সভাপতি দীপক শীল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসভাপতি সাখাওয়াত ফাহাদ, সদস্য মীম আরাফাত মানব ও প্রত্ন প্রতিমেধ। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে।

আটকের পর পরই র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল এমরানুল হাসান যুগান্তরকে বলেন, বিকালে শাহবাগে অবৈধভাবে সমাবেশ করা হচ্ছিল। ২-৩ দিন আগেও ইমরানের নেতৃত্বে এ রকম সমাবেশ হয়। তখন পুলিশ তাকে বাধা দেয়।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, পরবর্তী সময়ে এ ধরনের কোনো সমাবেশ করতে হলে যেন পুলিশের অনুমতি নেয়া হয়। কিন্তু কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না নিয়ে বুধবার তিনি ফের সমাবেশ ডাকেন। র‌্যাব কর্মকর্তা হাসান বলেন, আমরা ইমরানের কাছে বেআইনি সমাবেশের কারণ জানতে চেয়েছিলাম। এ সময় তার সহযোগীরা আমাদের সরকারি কাজে বাধা দেয়, হামলা চালায়। এ কারণে তাকে আটক করে র‌্যাব কার্যালয়ে আনা হয়েছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি জানান, ‘চলমান মাদকবিরোধী অভিযানে নির্বিচারে মানুষ খুনের বিরুদ্ধে’ ডাকা প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে তাকে তুলে নিয়ে যায় র‌্যাব। বিকালে জাতীয় জাদুঘরের সামনে থেকে সাদা পোশাকের র‌্যাব সদস্যরা তাকে তুলে নিয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকালে সমাবেশ করতে জড়ো হয় গণজাগরণ মঞ্চ। ‘নির্বিচারে মানুষ খুনের বিরুদ্ধে জাগো বাংলাদেশ’ নামক ফেসবুক ইভেন্টের মাধ্যমে একত্রিত হন তারা। কর্মসূচিতে যোগ দিতে ইমরান বিকাল ৪টায় শাহবাগের সামনে আসেন। এ সময় জাতীয় জাদুঘরের সামনে ছাত্র ইউনিয়নের কর্মসূচি চলছিল।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ইমরান ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় ঘটনাস্থলে একটি মাইক্রোবাস উপস্থিত হয়। বাস থেকে সাদা পোশাকধারী ৭-৮ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নেমে শুরুতে ইমরানের সঙ্গে কথা বলেন। এরপর ‘একটু যেতে হবে’ বলে ইমরানকে গাড়িতে তুলে নেয়। তখন সেখানে র‌্যাব-৩ এর চারটি গাড়ি ছিল। গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীরা বাধা দিতে গেলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের লাঠিপেটা করে।

প্রতিবাদে প্রগতিশীল ছাত্রজোট ও ছাত্র ইউনিয়নের বিক্ষোভ : ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড বন্ধের দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চের পূর্বঘোষিত প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারকে তুলে নিয়ে যাওয়া ও মঞ্চের কর্মীসহ ছাত্র ইউনিয়নের নেতাকর্মীদের ওপর লাঠিচার্জের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে প্রগতিশীল ছাত্র জোট। এ দিন সন্ধ্যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন।

এর আগে ছাত্র ইউনিয়ন এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করে। পৃথক বিক্ষোভ থেকে ইমরান এইচ সরকারের মুক্তি এবং হামলাকারী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের শাস্তির দাবি করা হয়।

প্রগতিশীল ছাত্র জোটের বিক্ষোভ মিছিলটি টিএসসি থেকে শুরু হয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে আবার টিএসসিতে এসে শেষ হয়। এ সময় উপস্থিত ছিলেন- ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি জিএম জিলানী শুভ, সাধারণ সম্পাদক লিটন নন্দী, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের একাংশের সভাপতি নাসির উদ্দিন প্রিন্স, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর আহ্বায়ক সরকার আল ইমরান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের সদ্যবিদ্যায়ী সভাপতি তুহিন কান্তি দাস, ঢাবি শাখার সভাপতি ফয়েজ উল্লাহ প্রমুখ।

মিছিল থেকে ক্রসফায়ারের নামে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডকে সরকারের ফ্যাসিবাদী আচরণের বহিঃপ্রকাশ দাবি করে এর তীব্র নিন্দা জানানো হয়।

J/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে