ডেস্ক রিপোর্টঃ ইলিশের প্রজনন সময় শুরু হওয়ায় আগামী ২২ দিন লক্ষ্মীপুরের মেঘনায় ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। এর ফলে গতকাল শনিবার রাত ১২টা থেকে ২৮ অক্টোবর পর্যন্ত লক্ষ্মীপুরের রামগতি থেকে চাঁদপুরের ষাটনল পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার মেঘনা নদী এলাকায় মাছ ধরা যাবে না। এ সময় মাছ শিকার, পরিবহন, মজুদ, বাজারজাতকরণ ও বিক্রি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, আশ্বিন মাসের বড় পূর্ণিমার আগের চার দিন, পূর্ণিমার দিন ও পরের ১৭ দিনসহ মোট ২২ দিন ইলিশের প্রজনন সময়। এ সময় সাগর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে মা ইলিশ  লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে এসে ডিম ছাড়ে। একটি বড় ইলিশ ২৩ লাখ পর্যন্ত ডিম ছাড়তে পারে। বেশি ইলিশ উৎপাদনের লক্ষ্যে নির্বিঘ্নে যাতে মা ইলিশ ডিম ছাড়তে পারে সেজন্যই ইলিশসহ সব প্রজাতির মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। আর এই আইন আমান্য করলে ১ বছর থেকে ২ বছরের জেল অথবা জরিমানা এবং উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরো জানা গেছে, আগামী ২২ দিন জেলেদের মাছ ধরা থেকে বিরত রাখতে সরকার লক্ষ্মীপুরের জেলেদের মধ্যে ভিজিএফের চাল বিরতণ করবে। এ ছাড়াও প্রজনন মৌসুমে মা ইলিশ রক্ষা অভিযান সফল করতে আরও কিছু সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে লিফলেট, পোস্টার ও মাইকিংয়ের মাধ্যমে জেলেসহ সবার মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি, বরফ কলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন, অন্য কোথাও থেকে বরফ আসতে না দেওয়া, নদী সংলগ্ন খাল থেকে নৌকা বের হতে না দেওয়া, মাছঘাট সংলগ্ন বাজারের নৌকা ও ট্রলারের জ্বালানি তেলের দোকান বন্ধ রাখা, নদীর মধ্যে জেগে ওঠা চরের মাছঘাটগুলো বন্ধ রাখা প্রভৃতি।

এ ব্যাপারে সম্প্রতি সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, দুই দফায় বর্তমান সরকারের ৯ বছরে ইলিশের উৎপাদন ৬৬ শতাংশ বেড়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ইলিশের উৎপাদন ছিলো ২ লাখ ৯৮ হাজার মেট্রিক টন, যা বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে প্রায় ৫ লাখ মেট্রিক টন। যার বর্তমান বাজারমূল্য প্রায় ১৮ হাজার কোটি টাকা।

মন্ত্রী জানান, বাংলাদেশের মোট উৎপাদিত মাছের প্রায় ১২ শতাংশ আসে শুধু ইলিশ থেকে। দেশের জিডিপিতে ইলিশের অবদান এক শতাংশের বেশি। কাজেই একক প্রজাতি হিসেবে ইলিশের অবদান সর্বোচ্চ। দেশ আজ মাছে স্বয়ংসম্পূর্ণ বলেও দাবি করেন তিনি।

নারায়ণ চন্দ্র চন্দ বলেন, বিশ্বে ইলিশের উৎপাদনে বাংলাদেশ একাই ৭০-৭৫ ভাগ উৎপাদন করে। গত ৯ বছরে সার্বিক মাছের উৎপাদনও ২৭ লাখ ১ হাজার মেট্রিক টন থেকে বেড়ে ৪১ লাখ ৩৪ হাজার মেট্রিক টনে উন্নীত হয়েছে। এটি ২০১৬-১৭ সালের উৎপাদন-লক্ষ্যমাত্রা ৪০ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টনের চেয়ে ৮৪ হাজার মেট্রিক টন বেশি। তাই ২০১৭-১৮ সালে ইলিশের উৎপাদন যেমন ৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যাবে তেমনই মাছে উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়ে ৪২ লাখ ৭৭ হাজার মেট্রিক টন হবে বলে আশা করছেন তিনি।

K/K/N.

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে