ডেস্ক রিপোর্ট : ‘পাটযাত্রা: সোনালী আঁশ ও রূপালী কাঠির নতুন দিন’ শীর্ষক শ্লোগানে গতকাল সোমবার আয়োজিত এক রোড শো কর্মসূচীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে কৃষি বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের মাঝে সেমি-অটোমেটিক মেশিন ‘আঁশকল’ এর ব্যবহার জনপ্রিয় হলে পাটের সোনালী দিন আবার ফিরে আসবে।
সেমি-অটোমেটিক মেশিন ‘আঁশকল’ ব্যবহারের মাধ্যমে পাটের ছাল ছাড়ানোর আধুনিক প্রযুক্তির সঙ্গে কৃষকদের পরিচয় করিয়ে দিতে রংপুর থেকে লালমনিরহাটের মুস্তফী মোড় পর্যন্ত উক্ত ‘পাটযাত্রা’ শীর্ষক রোড শো শেষে সেখানে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে রংপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো: রুহুল আমিন মিয়া সকালে রংপুরের আরডিআরএস কার্যালয় প্রাঙ্গন থেকে উক্ত ’পাটযাত্রা’ রোড শো উদ্বোধন করেন।
বর্তমানে ৬০ জন উদ্যোক্তা উত্তরাঞ্চলের রংপুর, কুড়িগ্রাম, লালমনরিহাট ও গাইবান্ধা জেলায় আঁশকল দিয়ে পাটের ছাল ছড়ানো শুরু করেছেন।
পাটের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধির লক্ষ্যে “জুট টেক্সটাইল ও লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের মাধ্যমে বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে টেকসই কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন” শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় ‘পাটযাত্রা’ ক্যাম্পেইনটি বাস্তবায়ন করছে বেসরকারি আন্তর্জাতিক সংস্থা প্র্যাকটিকেল অ্যাকশন বাংলাদেশ।
ইউরোপিয়ন ইউনিয়ন এর আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সহায়তা করছে আরডিআরএস বাংলাদেশ, রংপুর চেম্বারস অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, কারুপণ্য রংপুর লিমিটেড এবং রংপুর জেলা লেদ মেশিন শ্রমিক ইউনিয়ন।
পাটযাত্রা রোড শো পূর্ববর্তী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন রংপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক স.ম আশরাফ আলী, প্র্যাকটিকেল অ্যাকশন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান, আরডিআরএস বাংলাদেশের পরিচালক (উন্নয়ন কর্মসূচী) মঞ্জুশ্রী সাহা, প্র্যাকটিকেল অ্যাকশন বাংলাদেশের হেড অব পলিসি প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রোগ্রাম ডেভেলপমেন্ট ড. ফারুক-উল-ইসলাম, রংপুর চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সহ-সভাপতি মঞ্জুর আহমেদ প্রমুখ।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বলেন, “ ‘আঁশকল’ এর ব্যবহার কৃষিক্ষেত্রে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনবে। ধান, ভুট্টা ও গম মাড়াইয়ের জন্য এতদিন অটোমেটিক মেশিন ছিল। পাটের জন্য ছিল না। কৃষকরা আগে পাট অনেক দিন ধরে ‘জাগ’ দিয়ে তারপর এর ছাল ছাড়াতেন। এখন তাদের সে কষ্ট করতে হবে না। তারা সহজেই এখন মেশিনে ছাল ছাড়িয়ে শুধু মাত্র ছাল জাগ দিতে পারবেন। এর ফলে খরচও কমে আসবে। পাট কাঠিও নষ্ট হবে না।”
কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর রংপুরের উপ-পরিচালক স.ম আশরাফ আলী বলেন, “পাটের মান ঠিক না থাকলে কৃষকরা সঠিক মূল্য পান না। আঁশকল পাটের মান ঠিক রাখবে, এতে করে ফ্যাশকা জাতীয় অপচয় হবে না।”
প্র্যাক্টিকেল অ্যাকশন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান বলেন, “আমরা অল্প কিছু আঁশকল দিয়ে ‘পাট যাত্রা’ ক্যাম্পেইনে আঁশকলের সঙ্গে কৃষকদের পরিচয় করিয়ে দিলাম, তারা এবার নিজেরাই এর ব্যবহার করতে পারবেন।”
তিনি জানান, শুরুতে আঁশকলের যন্ত্রপাতি বিদেশ থেকে আমদানি করা হলেও তারা স্থানীয়ভাবে কিছু উদ্যোক্তাকে প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন, যারা দেশেই এ আঁশকল বানাতে পারবেন। এতে করে একটা উদ্যোক্তা শ্রেণীও গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
হাসিন জাহান আরো বলেন, প্রথাগত পদ্ধতিতে পাটের আঁশ ছাড়াতে যে খরচ হয়, তার তিন ভাগের এক ভাগ খরচ হবে আঁশকলে। আঁশের গুণগত মানও ভালো থাকে।
আঁশকল ক্যাম্পেইনের উদ্বোধনের পর একটি ট্রাকে পাটের ছাল ছাড়ানোর অটোমেটিক মেশিন নিয়ে রংপুর শহর প্রদক্ষিণ করা হয়। এ সময় ‘আঁশকল’ ব্যবহারের উপকারিতা সম্বলিত লিফলেটও বিতরণ করা হয়।
পরে বিকেলে রোড শো’টি লালমনিরহাটের মুস্তফী মোড়ে পৌঁছলে সেখানে অনুরূপ অনুষ্ঠান ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। সেখানে শত শত কৃষকের উপস্থিতিতে লালমনিরহাট ও ঢাকা থেকে আগত কৃষি বিষেশজ্ঞগন ‘আঁশকল’ ব্যবহার এর ওপর বক্তব্য রাখেন।

বি/এস/এস/এন


একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে