কাওছার হামিদ
দাবানল প্রতিবেদক (নীলফামারী):
মিথ্যা অপহরণ মামলা দিয়ে একটি পরিবারকে সর্বশান্ত করার অভিযোগ উঠেছে নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার মাগুড়া সবুজপাড়া (নদীরপার) গ্রামের জিয়াউর রহমান ওরফে জিয়া নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
প্রকৃত ঘটনা প্রেম অতঃপর বিয়ে। ঘটনাটি ঘটেছে । অভিযোগ সূত্রে সরেজমিনে গিয়ে জানাযায় ২০২৩ সালে ওই গ্রামের জিয়াউর রহমান জিয়ার একমাত্র মেয়ে মোনালিসা আক্তার জেমি (১৯) সাথে একই গ্রামের আলেফ উদ্দিনে কলেজ পড়–য়া ছেলে আনছারুল হকের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং এরেই এক পর্যায় প্রেমকে বাস্তব রূপ দিতে গোপনে বিয়ে করে অজানার উদ্দেশ্যে পাড়ি জমায় তারা।
জেমির পরিবারের লোকজন প্রেমের সম্পর্ক জানার পরেও মেয়েকে উদ্ধারের জন্য জিয়াউর রহমান জিয়া বাদী হয়ে আনছারুল হকসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মিথ্যা অপহরণ মামলা ১৪৫/২৩ দায়ের করেন।
মামলা দীর্ঘদিন চলার পরও পুলিশ আনছারুল হক এবং জেমি আক্তারকে ধরতে ব্যর্থ হওয়ায়, গেলো বছর ২০২৪ ইং সালের ১০ সেপ্টেম্বর আনছারুল হক ও জেমি আক্তার দুজনে কোর্টে আত্মসমার্পণ করেন।
আত্মসমার্পণ করলে স্কুল সনদ অনুযায়ী জেমির বয়স ১৮ বছরের কম হলে জেমিকে বাবা-মায়ের জিম্মায় দিয়ে আনছারুল হককে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। আল্ট্রাসনোগ্রাম রিপোর্ট ও কোর্টের ২২ ধারার জবানবন্দী সুত্রে জানা যায়, সেই সময় জেমি আক্তার ৬ (ছয়) মাসের অন্তসত্বা ছিলেন। আনছারুল হক ৪২ দিন জেলহাজতে থাকার পর উচ্চ আদালতে জামিনে বেড়িয়ে আসেন। জামিনে বেড়িয়ে আসার পর জেমি আক্তার আনছারুল হকের সাথে গোপনে মোবাইল ফোনের টিকটক আইডি থেকে এসএমএস এর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে থাকলে এক পর্যায় চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি ঢাকায় খালার বাসা থেকে জেমি আক্তার আনছারুল হকের কাছে চলে আসেন।
আনছারুল হক জেমির কাছে ৬ (ছয়) মাসের অন্তসত্বার কথা জানতে চাইলে জেমি আক্তার কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন আমার স্বপরিবারে আমাকে রংপুরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক মেডিসিন খাওয়াইয়ে ৬ (ছয়) মাসের অন্তসত্বা নষ্ট করেন এবং সেখানে মৃত বাচ্চা প্রসব হয়।
আনছারুল হক আরো জানান তারা দুজনে পরামর্শ করে তৎকালিন নীলফামারীর জেলা প্রশাসক অফিসে উপস্থিত হয়ে জেলা প্রশাসকের সাথে কথা বলে জেমির পরিবার ও পুলিশের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। পরবর্তীতে আনছারুল হক জেমির কথা মতো বাদী হয়ে নীলফামারী ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে ৬ (ছয়) মাসের অন্তসত্বা নষ্ট করার একটি পিটিশন মামলা ৪৩/২৫ দায়ের করেন। মামলাটি তদন্তধীন রয়েছে। পরবর্তীতে জেমি আক্তার ও আনছারুল হক আবারও ঘর সংসার করতে থাকেন। ইতোমধ্যে ১০ মার্চ ২০২৫ইং তারিখে নীলফামারী কোর্টে ১৪৫/২৩ মামলার হাজিরা দিয়ে বাড়ী ফেরার পথে র্যাব হাতে গ্রেফতার হন আনছারুল হক ও তার ভগ্নিপতি গ্রামপুলিশ আনারুল হক। আনছারুল হক র্যাবের নিকট জানতে চান তাকে কোন মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে। পরে র্যাব জানান ভিকটিম জেমি আক্তারের খালা বাদী হয়ে পল্টন থানা ঢাকায় ৫৯/১/২৫ মামলার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয়। পরবর্তীতে আনছারুল হক ও ভগ্নিপতি গ্রামপুলিশ আনারুল হককে নীলফামারী থেকে ঢাকায় কোর্টের মাধ্যমে জেলহাজতে প্রেরণ করেন। আনছারুল হকের গ্রেফতারের খবর শুনে স্ত্রী জেমি আক্তার ঢাকা ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে আত্মসমার্পন করেন এবং ২২ ধারার জবান বন্দিতে বলেন আমি স্বেচ্ছায় আমার স্বামী আনছারুল হকের নিকট গিয়েছি ও তার সাথে ঘর সংসার করতেছি। আরো বলেন আমার পরিবার পুর্বের ৬ (ছয়) মাসের অন্তসত্বা নষ্ট করেছেন আমি আবারও ২ (দুই) মাসের অন্তসত্বা,আমি আমার বাবা মায়ের নিকট যাব না আমি আমার স্বামীর নিকট যেতে চাই। পরে ম্যাজিস্ট্রেট আমার স্বামীর নিকট না দিয়ে আমাকে সেভ কাষ্টরীতে পাঠান। কয়েক দিন থাকার পর আমি আমার বাবা মায়ের জিম্মায় গেলে পরের ২ (দুই) মাসের অন্তসত্তা আবারও নষ্ট করেন। উক্ত অপহরণ মামলাটি পরবর্তী সময়ে ধর্ষন মামলা হিসেবে কোর্টে প্রতিবেদন পাঠান। আদালতে মামলা চলাকালিন উক্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে আনছারুল হককে আবারও ২১ নভেম্বর শুক্রবার ২০২৫ইং তারিখে সকাল বেলা আনছারুল হক রাস্তায় বের হলে জিয়াউর রহমান জিয়া গংয়ের লোকেরা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে তার উপর আক্রমান চালায় এবং পিঠে এবং হাতে ছোড়া দিয়ে আঘাত করে। উল্লেখ্য যে, আনছারুলের বড় ভাই বিজিবি সদস্য, ভগ্নিপতি গ্রাম পলিশ ও চাচাতো ভাই, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, তাদেরকে বিভিন্ন সময় চাকরি খাওয়ার হুমকি সহ মিথ্যা মামলায় আসামি করেন। এখন পর্যন্ত ৫টি মিথ্যা মামলা দিয়ে পরিবারটিকে হয়রানী করছেন মামলাবাজ জিয়াউর রহমান জিয়া। এ ব্যাপারে জিয়াউর রহমান জিয়ার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হলে তিনি সাংবাদিককে উল্টো ধমক দিয়ে কথা বলেন এক পর্যায় তার ছেলে এবং মেয়েকে ফোন লাগিয়ে দিয়ে অকট্ট ভাষায় গালিগালাজ করেন।