ডেস্ক রিপোর্টঃ   গাজীপুরে আবাসিক হোটেলে শুক্রবার অভিযান চালিয়ে ৪০জন যৌনকর্মীসহ ৬৭ জনকে আটক করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।আটককৃতদের মধ্যে ৩৯জনকে একমাস করে এবং ২৮জনকে ১৫ দিন করে কারাদন্ড দেওয়া হয়েছে। পরে হোটেল দু’টি তালাবদ্ধ করে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।এদিন পুলিশের ‘একশানে’ দারুন খুশি স্থানীয়রা। ‘গতানুগতিক’ অভিযানের মত ছিলোনা এবারের অভিযান। আটক হওয়া যৌনকর্মী ও খদ্দেরদের টেনে হিচড়ে কোমরে রশি বেঁধে গাড়িতে তোলেন  পুলিশ সদস্যরা। এসময় উচ্ছ্বসিত জনতাকে করতালির মাধ্যমে উল্লাস করতে দেখা যায়।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘ দিন ধরে গাজীপুরের আবাসিক হোটেলগুলোতে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগ করে আসছিল স্থানীয়রা। কিন্তু এ ব্যাপারে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনের কোনো ভূমিকা রাখতে দেখেনি স্থানীয়রা। এরই এক পর্যায়ে গাজীপুর চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার রাজমনি আবাসিক হোটেল মালিক পরিচয়ে বৃহস্পতিবার গাজীপুরের জেলা প্রশাসককে মোবাইল ফোনে হুমকি দেয়া হয়।এ সংবাদ বিভিন্ন গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এ প্রেক্ষিতে শুক্রবার দুটি হোটেলে অভিযান চালানো হলো। শুক্রবারের অভিযানে স্থানীয়দের মাঝে ব্যপক স্বস্তি এসেছে।

এছাড়াও টঙ্গীর আবাসিক হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপের প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে স্থানীয়রা। স্থানীয়দের অভিযোগ গাজীপুরের প্রায় সব আবাসিক হোটেলেই হোটেল ব্যবসার আড়ালে বীরদর্পে চালানো হয় অসামাজিক কার্যকলাপ।গাজীপুরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বিএম কুদরত-ই-খুদা জানান, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট রাহেনুল ইসলামের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট বিএম কুদরত-ই-খুদা, মোরশেদ খান ও রাসেল মিয়া আনসার বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে জেলার আবাসিক হোটেলগুলোতে অভিযান পরিচালনা করেন।

শুক্রবার সকালে মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার রাজমনি ইন্টারন্যাশনাল নামের এক আবাসিক হোটেলে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে ওই হোটেল থেকে ১৯জন যৌণকর্মী ও খদ্দের এবং হোটেল কর্মচারী-দালাল ২০জনসহ মোট ৩৯জনকে আটক করা হয়।এসময় অসামাজিক ও অশ্লীল কর্মকান্ড পরিচালনা করে গণউপদ্রব সৃষ্টি করার অভিযোগে আটককৃতদের প্রত্যেককে একমাস করে বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় এবং হোটেলটি তালাবদ্ধ করে দেয়া হয়।অভিযানের খবর পেয়ে হোটেলের মালিক বাবুল হোসেন ওরফে টুন্ডা বাবুল ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়।

এদিকে প্রায় একই সময়ে চান্দনা চৌরাস্তার ভোগড়া এলাকার দক্ষিণ বাংলা আবাসিক হোটেলে অভিযান চালায় ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানকালে এ হোটেল থেকে ২১জন যৌনকর্মী ও খদ্দের এবং হোটেল কর্মচারী-দালাল ৭জনসহ মোট ২৮জনকে আটক করা হয়। এসময় অসামাজিক ও অশ্লীল কর্মকান্ড পরিচালনা করে গণউপদ্রব সৃষ্টি করার অভিযোগে আটককৃতদের প্রত্যেককে ১৫দিন করে বিনাশ্রম কারাদন্ডের আদেশ দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয় এবং হোটেলটিতে তালা লাগিয়ে দেয়া হয়। পরে তালাবদ্ধ হোটেল দু’টি জয়দেবপুর থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তিনি আরও জানান, হোটেল দুইটির বিদ্যুৎ ও পানি সংযোগ বিচ্ছিন্নের জন্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেও নির্দেশ দেয়া হয়েছে।জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমায়ূন কবির জানান, সমাজে অশ্লীলতা ও অসামাজিক কর্মকান্ড কোন অবস্থাতেই বরদাশত করা হবে না। অসামাজিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে গাজীপুর জেলা প্রশাসন নিয়মিতভাবে অভিযান পরিচালনা করবে। শর্তভঙ্গকারী আবাসিক হোটেলসমূহের লাইসেন্স নবায়ন করা হবে না।

উল্লেখ্য, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক প্রশাসক ড. দেওয়ান মুহাম্মদ হুমায়ূনকে অভিযান না চালানোর জন্য বৃহস্পতিবার মোবাইল ফোনে হুমকি দেয় চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার রাজমনি ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেলের মালিক। এ ব্যাপারে জেলা প্রশাসক বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় সাধারণ ডায়েরী (জিডি) করেন।

সাধারণ ডায়েরী সূত্রে জানা গেছে, মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকার রাজমনি ইন্টারন্যাশনাল নামের এক আবাসিক হোটেলের মালিক পরিচয় দিয়ে এক ব্যাক্তি বৃহস্পতিবার দুপুরে গাজীপুর জেলা প্রশাসকের দাপ্তরিক মোবাইল নম্বরে ফোন দেয়। এসময় ওই ব্যাক্তি তার হোটেলে অনৈতিক কর্মকান্ডের অভিযোগে কোন নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা না করার জন্য বলে। অভিযান পরিচালনা করা হলে জেলা প্রশাসককে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয় ওই ব্যাক্তি।

 

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে