ডেস্ক রিপোর্ট : বিভিন্ন দেশে বাড়ছে প্রবাসী মৃত্যুহার। চলতি বছরের(২০১৭ সাল) জুন মাস পর্যন্ত ১ হাজার ৭শ’ ৫৭জন প্রবাসী বাংলাদেশির মরদেহ দেশে ফেরত আনা হয়েছে। এরমধ্যে হযরত শাহ জালাল বিমান বন্দর দিয়ে ১৫৫৩ জনের মরদেহ, চট্টগ্রামের শাহ আমানত বিমানবন্দর দিয়ে এসেছে ১৭৬ এবং সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে ২৮ জনের মরহেদ এসেছে।
এরমধ্যে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ, হৃদরোগ, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনা, খুন, সড়ক দুর্ঘটনা কিংবা ক্যানসারে মৃত্যুজনিত মরদেহ রয়েছে। এদিকে ২০১৬ সালে বছরজুড়ে মরদেহ এসেছিল ৩ হাজার ৪শ ৮১ জনের।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের সবশেষ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য পাওয়া যায়। ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের তথ্য ও জনসংযোগ সহকারি পরিচালক মো. জাহিদ আনোয়ার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা এসব মৃত্যুর জন্য অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয়কে দায়ী করছেন। তারা বলছেন, খরচ করা টাকা উপার্জন করার জন্য তারা অতিরিক্ত পরিশ্রম এবং মানসিক চাপে থাকেন। প্রবাসী মৃত্যুর অন্যতমও কারণ এটি।
দেশের ৩টি বিমানবন্দর দিয়ে আসা মরদেহের হিসেব থেকে জানা যায়, ২০০৫-২০১৭ সাল পর্যন্ত দেশে ৩১ হাজার ৭শ’ ১৫ জন প্রবাসীর মরদেহ দেশে এসেছে। এরমধ্যে হযরত শাহ জালাল বিমানবন্দরে ২৮ হাজার ৪শ’ ৩৭ জনের, চট্টগ্রাম শাহ্ আমানতে ২ হাজার ৮শ’ ৫৮ জনের, সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ৪শ’ ৩০ জনের মরদেহ এসেছে।

পরিসংখ্যানে আরো দেখা যায়, ২০০৫ সালে আসে ১ হাজার ২শ’ ৪৮ জনের মরদেহ, ২০০৬ সালে ১ হাজার ৪শ’ ২ জন, ২০০৭ সালে ১ হাজার ৬শ’ ৭৩ জন, ২০০৮ সালে ২ হাজার ৯৮ জন, ২০০৯ সালে ২ হাজার ৩শ’ ১৫ জন, ২০১০ সালে ২ হাজার ৫শ’ ৬০ জন, ২০১১ সালে ২ হাজার ৫শ’ ৮৫ জন, ২০১২ সালে ২ হাজার ৮শ’ ৭৮ জন, ২০১৩ সালে ৩ হাজার ৭৬ জন, ২০১৪ সালে ৩ হাজার ৩শ’ ৩৫ জন, ২০১৫ সালে ৩ হাজার ৩শ’ ৭ জন।
খাত বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একটু বেশি আয়ের জন্য বিদেশে অমানুষিক পরিশ্রম করতে গিয়ে প্রায়ই বাংলাদেশিরা প্রাণ হারাচ্ছেন। অল্প বয়সে মারা যাচ্ছেন শ্রমিকরা। কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত টাকা দিয়ে বিদেশে গিয়ে মানসিক যন্ত্রণায় ভোগে। এ কারণে অনেকে আত্মহত্যাও করে থাকেন। এছাড়া অভিবাসন সংক্রান্ত আইন ও নীতিমালায় শ্রমিকের পেশাগত সুরক্ষার বিষয় উল্লেখ থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অভিবাসী শ্রমিকরা এসব বিধি বিধানের সুযোগ-সুবিধা পায় না। ফলে অনিরাপদ পরিবেশে কাজ করার কারণে পেশাগত রোগ ও কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি হচ্ছে।
১৯৭৬ সালে বৈধভাবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসীদের কর্মসংস্থান শুরু হয়। শুরুতে সৌদি আরবে ২১৭ জন, সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ হাজার ৯শ’ ৮৯ জন, ওমানে ১শ’ ১৩ জন, কাতারে ১ হাজার ২শ’ ২১ জন, বাহরাইনে ৩শ’ ৩৫ জন, লিবিয়ায় ১শ’ ৭৩ জন ও বিভিন্ন দেশে ১ হাজার ৩শ’ ৯৬ জন পাড়ি দেন। মোট ৬ হাজার ৮৭ জন শ্রমিক দিয়ে বহির্বিশ্বে কর্মসংস্থান শুরু হলেও ৪০ বছরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ১ কোটি ৩ লাখ ৮৭ হাজার ৫৫৬ জন কাজ করছেন। এরমধ্যে মধ্যপ্রাচ্যে কাজ করছেন ৫০ লাখের বেশি।

এদিকে, প্রবাসীদের মরদেহ আনতে বেশ বিড়ম্বনার শিকার হতে হয়। এ টেবিল থেকে ও টেবিলে ছুটে বেড়ানোর পর মরদেহ আসে। এরপরও রয়েছে নিজ অর্থে মরদেহ আনতে হয়। সম্প্রতি বিদেশে মারা যাওয়া প্রবাসীদের মরদেহ সরকারি উদ্যোগে দেশে আনার দাবি জানিয়েছে ইউরোপ প্রবাসী বাংলাদেশি অ্যাসোসিয়েশন।
প্রবাসীরা বলছেন, দেশে প্রতিবছর প্রবাসীরা ১৬ বিলিয়ন ডলার পাঠান। বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি অর্থ আসে প্রবাসী–আয় থেকে। প্রবাসীরা দেশের অর্থনীতি গড়ছেন। সরকার, ব্যবসায়ী, নাগরিক সমাজ সবাই একসঙ্গে কাজ করলে এ খাতকে আরো এগিয়ে নেয়া যাবে। বিদেশ থেকে লাশ পাঠাতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। ইউরোপে এ চিত্র বেশি।
ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, প্রবাসে মৃত্যুবরণকারী বাংলাদেশি কর্মীর মরদেহ তার পরিবারের মতামত সাপেক্ষে দেশে আনা হয়। যদি কোনো মৃতের পরিবার সংশ্লিষ্ট দেশে লাশ দাফনের ইচ্ছা জানান তাহলে সে দেশ ব্যবস্থা নেয়। মৃতের লাশ দেশে পাঠাতে নিয়োগকর্তা খরচ বহন করতে অপারগতা জানালে এবং মৃতের পরিবার দেশে আনয়নের খরচ বহনে অক্ষম হলে ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ তহবিলের অর্থায়নে আনা হয়।

আর/ট

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে