জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ মেডিকেল, বুয়েটে সাফল্যের পর এবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) এক সঙ্গে ভর্তির সুযোগ পেলেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের সেই বিজ্ঞান কলেজর ৩১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ২৬ জন ছেলে ও ৫ জন মেয়ে রয়েছে। গত সোমবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘ক’ ইউনিটের ২০২১-২২ ব্যাচের স্নাতক ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলাফল হতে এ তথ্য জানা যায়। এতে করে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে আনন্দ বিরাজ করছে।

গতকাল বুধবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, সৈয়দপুর শহরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি বিজ্ঞান কলেজ। বরাবরই এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করে এই কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিংসহ বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা মেধার স্বাক্ষর রাখছে। এ বছর মেডিকেল, বুয়েটের পর ঢাবির ভর্তি পরীক্ষাতেও সাফল্য দেখিয়েছ। শিক্ষার্থীদের এই অর্জনে আমরা গর্বিত।

তিনি আরও বলেন, আমরা এখানে শিক্ষার্থীদের গ্রিন-ক্লিন লার্নিং পদ্ধতিতে পড়ানোর চেষ্টা করি। এতে সবার মাঝে প্রতিযোগিতা ও মননশীলতা বৃদ্ধি পায়। এ কলেজে ভর্তি পরীক্ষা অত্যন্ত স্বচ্ছ। মেধাবী শিক্ষার্থীরাই কলেজে পড়ার সুযোগ পায়। কলেজের শিক্ষক, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে আমরা এক ধরনের সেতুবন্ধন তৈরি করি।

ক্লাসরুমেই সম্পূর্ণ পাঠদান সম্পন্ন করা হয়। এর ওপর ভিত্তি করে শিক্ষার্থীদের যাবতীয় প্রয়োজনীয়তা মাথায় রাখা হয়। তবে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর বাড়তি কোনো চাপ দেওয়া হয় না।

অধ্যক্ষ গোলাম আহমেদ ফারুক বলেন, প্রতি বছরই আমাদের ভালো করার প্রাণান্ত চেষ্টা থাকে। আমরা সেভাবেই শিক্ষার্থীদের প্রস্তুত করে থাকি। করোনাকালে আমরা মুখোমুখি ক্লাস নিতে পারিনি। তবে আমাদের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস চালু ছিল। নিয়মিত তদারকি ছিল। এ ব্যাপারে ভালো সহযোগিতা পেয়েছি অভিভাবকদের শিক্ষার্থী-শিক্ষক ও অভিভাবকদের সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা ধারাবাহিক সাফল্য দেখাতে পারছি বলে জানান তিনি।

সৈয়দপুর বিজ্ঞান কলেজ সূত্রে জানা যায়, নীলফামারীর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজের পূর্বের নাম ছিল সরকারি কারিগরি মহাবিদ্যালয়। ২০১৯ সালে শিক্ষা মন্ত্রণালয় নাম পরিবর্তন করে সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ নাম রাখে। কলেজটিতে কেবলমাত্র বিজ্ঞান বিষয়ে পড়ার সুযোগ রয়েছে। ১৯৬৪ সালে দেশের চারটি শিল্পাঞ্চলে টেকনিক্যাল স্কুল গড়ে ওঠে। দেশের সর্ববৃহৎ সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার সুবাদে এখানেও গড়ে ওঠে টেকনিক্যাল স্কুল। উদ্দেশ্য ছিল এখান থেকে সৈয়দপুর রেলওয়ে কারখানার জন্য দক্ষ, কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন শিক্ষার্থী গড়ে তোলা। পরে ১৯৭৭ সালে প্রতিষ্ঠানটি কলেজে উন্নীত হয়।

চলতি বছর সৈয়দপুর সরকারি বিজ্ঞান কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় (এইচএসসি) মোট ২৬৮ জন পরীক্ষার্থী অংশ নেন। উত্তীর্ণ হয়েছেন ২৬৫ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছেন ২৪৯ জন। তাদের মধ্যে এর আগে ৩৯ জন শিক্ষার্থী সরকারি মেডিকেল কলেজে ও ১৬ জন শিক্ষার্থী বুয়েটে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন।

ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া নুর আলম বলেন, আল্লাহর রহমত, বাবা মায়ের মায়ের দোয়া আর শিক্ষকদের সঠিক দিক নিদের্শনায় ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পেয়েছি। এটা আমার জন্য যে কতটা আনন্দের, তার ভাষা আমার জানা নেই।

ঢাবিতে ভর্তির সুযোগ পাওয়া আরেক শিক্ষার্থী ঈশিকা বলেন, করোনাকালে ক্লাস না হলেও আমাদের অনলাইন ক্লাস চালু ছিল। শিক্ষকরা নিয়মিত তদারকি করতেন। মা-বাবা, শিক্ষক ও আমার সম্মিলিত চেস্টায় এ ফলাফল অর্জণ করতে পেরেছি। নিজেকে যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলে দেশ ও মানুষের সেবা যেন করতে পারেন এ জন্য সবার কাছে দোয়া কামনা করেন তিনি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে