জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ স্বামীর বিরুদ্ধে কুৎসা রটনোর প্রতিবাদ করায় গৃহবধূকে পিটিয়ে মাথা ফাটিয়ে দিয়েছে আপন বড় ভাই-ভাবি ও ভাতিজা। এসময় আহত গৃহবধূর শরীর থেকে স্বর্ণালংকারও ছিনিয়ে নিয়েছে। সোমবার (৬ জুন) এমনই ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে। আহত গৃহবধূর নাম নুরুন নাহার (৩২)। তিনি শহরের নিউ মুন্সিপাড়া এলাকার বাসিন্দা মোটর সাইকেল মেকার শামীম আহমেদের স্ত্রী।

সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালের তৃতীয় তলায় সার্জারি বিভাগের ২ নং বেডে চিকিৎসারত গৃহবধূ। তার স্বামী জানান, আমার স্ত্রীর বড় ভাই জামাল উদ্দীন (৪৫) প্রায়ই আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটায়। সম্প্রতি আমার ফুফু শ্বাশুড়ী শাবানা আমার কাছে কিছু টাকা গচ্ছিত রেখেছেন তার মেয়ের বিয়ের জন্য। গতকাল সেই টাকা হঠাৎ করে ফেরত চায় ফুফু। কিন্তু টাকাটা ব্যবসায়ীক কাজে খরচ হওয়ায় এক সপ্তাহ সময় নিয়েছি টাকা দেয়ার জন্য। ফুফুও সেটা মেনে নিয়ে সময় দিয়েছে।

এরই মাঝে আজ দুপুরবেলা বড় ভাই জামাল উদ্দীন (৪৫) ফুফুকে বলেছে যে আপনি আর কাজ পাননি শিয়ালের কাছে মুরগী আদি দিয়েছেন। শামীমের কাছ থেকে আর টাকা ফেরত পাবেন না। কথাটা জানার পর আমি স্ত্রীকে বললে সে তার বাবাকে এব্যাপারে নালিশ দেয় যাতে এভাবে আমাকে কটাক্ষ করা বা কুৎসা রটানো অথবা মিথ্যে অপবাদ দেয়া থেকে বিরত হয় বড় ভাই।

এর প্রেক্ষিতে আমার শ্বশুর তাৎক্ষণিক বড় ভাইকে ডেকে পাঠায়। তিনি আসলে বাবা তাকে শাসিয়ে এমন গর্হিত কাজ ভবিষ্যৎ আর না করার জন্য নিষেধ করেন। এতে তিনি তর্ক শুরু করেন বাবার সাথে। এর প্রতিবাদ করায় বড় ভাই আমার স্ত্রীর সাথেও ঝগড়া বাধায়। এরই মাঝে বড় ভাইয়ের স্ত্রী পলি বেগম (৩৮) ও ছেলে স্বপন (১৯) এসে অশ্লীল ভাষায় বাবা ও মেয়েকে গালাগাল করতে থাকে।

প্রতিউত্তর করলে তারা সম্মিলিতভাবে আমার স্ত্রীর উপর চড়াও হয় এবং এলোপাথাড়ি মারপিট করতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে ভাবী পলি বেগম ধান কাটা কাঁচি দিয়ে সজোরে মাথায় আঘাত করে। এতে আমার স্ত্রীর মাথায় সিথি বরাবর গভীরভাবে জখম হয়। রক্তাক্ত অবস্থায়ই ভাই-ভাবি-ভাতিজা আমার স্ত্রীর কানের দুল, হাতের চুরি ও গলার চেইন লকেট স্বর্ণালংকার জোরপূর্বক খুলে নিয়ে তাকে (স্ত্রী) ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে রেখে তাদের বাড়িতে চলে যায়।

পরে প্রতিবেশীরা ছুটে এসে আমার স্ত্রী ও শ্যালক রুবেলকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে। এখানে চিকিৎসক স্ত্রীর মাথার কাটা স্থানে ৮ টি সেলাই দিয়েছে। আর শ্যালককে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়েছে। এই অঘটন ঘটিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে তারা নিজে থেকেই জখম হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

গৃহবধূর ছোট ভাই রুবেল (২২) বলেন, বড় ভাই-ভাবি-ভাতিজা বড় বোনকে মারপিট করলে আমি থামানোর চেষ্টা করলে ভাবী পলি বেগম আমার বাম হাতের কব্জিতে কামড় দিয়েছে। এতে আমিও গুরুত্বরভাবে জখম হয়েছি।

আহত গৃহবধূর বাবা নুর ইসলাম বলেন, আমার বড় ছেলে জামাল বড়ই বেয়াড়া হয়ে গেছে। বউয়ের কথায় সে আমার সাথেও তর্ক করে। আমার মেয়ে জামাইয়ের বিরুদ্ধে বিভিন্ন মিথ্যে প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে বেড়ায়। প্রতিবাদ করায় আমার সামনেই তার স্ত্রী আমার মেয়ে ও ছেলেকে মারধর করে জখম করেছে। আমি আইনগতভাবে বিচার চাই। বড় ছেলের পরিবারের লোকজনদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ।

এই ব্যাপারে অভিযুক্ত জামাল উদ্দিন নিজের দোষ স্বীকার করে বলেন, ফুফুকে শিয়ালের কাছে মুরগী দেয়ার কথা আমি বলেছি। এজন্য ফুফুই আমাকে গালে থাপ্পড় মেরেছেন। তারপরও কেন বাবাকে দিয়ে শাসানো হলো। এতেই ব্যাপারটা বেড়ে গেছে।

তার স্ত্রী পলি বেগম উল্টো অভিযোগ করে বলেন, সামান্য ঘটনাকে নিয়ে তারা পরিকল্পিতভাবে আমার স্বামীকে ডেকে নিয়ে বাবা ভাই বোন মিলে মারপিট করছিল। ঘটনাক্রমে সেখানে গেলে দেখে ফেলায় তারা আমার ও ছেলের উপরও চড়াও হয়েছে।

এই ঘটনায় ভাই-বোন-ভাবি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এখনও এ ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনকে জানানো হয়নি। তবে উভয় পরিবারই আইনী ব্যবস্থা নিবে বলে জানিয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে