এম ডি বাবুল, চট্রগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানাধীন কেরানীহাট-বান্দরবান সড়কস্থ স্থানে লাইসেন্স বিহীন অবৈধভাবে কাভার্ডভ্যানে অত্যন্ত ঝুকিপূর্ণ ও অনিরাপদ ভ্রাম্যমান সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন করে সিএনজি চালিত অটোরিক্সাসমূহে তরল গ্যাস বিক্রয় করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৬ মার্চ ২০২২ তারিখে ১০:টার দিকে র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম এর একটি আভিযানিক দল বর্ণিত স্থানে অভিযান পরিচালনা করে লাইসেন্স বিহীন অবৈধ ভ্রাম্যমান সিএনজি ষ্টেশন হতে ০৪টি কাভার্ড ভ্যানের ভিতরে বিশেষ কায়াদায় সংযুক্ত ৬১৪টি গ্যাস সিলিন্ডারসহ আসামী ১। মোঃ আজিজুল হক (৪৫), পিতা- মোঃ আব্দুল হক, সাং-কেঁওচিয়া, থানা- সাতকানিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম, ২। মোঃ আলমগীর (৪০), পিতা- মৃত আব্দুল রহমান, সাং- কেঁওচিয়া, থানা- সাতকানিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম এবং ৩। হুমায়ুন কবির (২৭), পিতা- মৃত আহমদ হোসেন, সাং- হাতুরাপাড়া, থানা- সাতকানিয়া, জেলা- চট্টগ্রামকে আটক করে। পরবর্তীতে উপস্থিত স্বাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে তারা কোন বৈধ কাগজপত্র দেখাতে পারেনি। এছাড়াও তাদের কাছে বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কোন অনুমোদন ছিলা না।

এ ধরনের অস্থায়ী অবৈধ ফিলিং স্টেশন গুলো অনিরাপদ মারাত্মক ঝুঁকি পূর্ণ জেনেও অসাধু ব্যবসায়ীরা অধিক লাভের কারণে বিভিন্ন জায়গায় রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় থাকা কিছু ব্যক্তিকে সঙ্গে রেখে এ ধরনের রাতারাতি আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার চেষ্টা করছে যা সাধারণ পাবলিকের জন্য মারাত্মক ঝুকি হয়ে পড়েছে দেশে ইতিমধ্যে কয়েকটা বড় ধরনের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ শোনা গেছে অনেকেই অনলাইনে দেখেছে এরপরেও অবৈধ ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় তারা দীর্ঘদিন যাবৎ অবৈধভাবে রিফুয়েলিং স্টেশন স্থাপন করে ও জব্দকৃত কার্ভাড ভ্যানগুলির বডির সহিত সংযুক্ত সিলিন্ডারের মাধ্যমে সিএনজিতে রূপান্তর কারখানা স্থাপন করে সিএনজি চালিত অটো রিক্সায় বিক্রি করে আসছিল। এই চক্রটি মূলত সিএনজি ফিলিং স্টেশনের আড়ালে সরাসরি গাড়িতে জ্বালানি সরবরাহ করার পাশাপাশি বিশেষ প্রক্রিয়ায় কাভার্ড ভ্যানের ভেতর সিলিন্ডার স্থাপন করে মিটার ব্যতীত মুল গ্যাস লাইন থেকে গ্যাস মজুদ করে তা অবৈধ ভাবে চট্রগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া,বাশখালীসহ কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকায় চড়া মূল্যে বিক্রি করে। প্রত্যেকটি কাভার্ড ভ্যানে আনুমানিক গড়ে ১৫৩টি করে সিলিন্ডার স্থাপন করা রয়েছে।

এইসকল গ্যাস সিলিন্ডারসমুহ অবৈধ ও সম্পূর্ণ অনিরাপদ পদ্ধতিতে একত্রে কাভার্ড ভ্যানে স্থাপিত যা সরকারীভাবে প্রদানকৃত নীতিমালা বহির্ভুত। উক্ত সিলিন্ডারসমুহের মেয়াদ সম্পর্কিত কোন তথ্যাদিও জব্দকৃত কাভার্ড ভ্যান ও আটককৃত আসামীগন হতে পাওয়া যায়নি। এছাড়াও আসামীদের ভাষ্য অনুযায়ী এসকল সিলিন্ডার অনেক পুরাতন এবং কখনোই এগুলোর নিরাপত্তা ও কার্যকারিতা পরীক্ষা করা হয়নি। ফলে, এইসকল সিলিন্ডার হতে বড় ধরনের দূর্ঘটনা, পরিবেশ ও মানব বিপর্যয় ঘটার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও কিছু কিছু সিলিন্ডার পরীক্ষা করে দেখা যায় যে, তা অত্যন্ত নাজুকভাবে সংযুক্ত করা যা কাপড় দিয়ে আটকে রাখা হয়েছে। ফলে কোন ধরনের বিস্ফোরন ঘটলে তার ফলাফল অত্যন্ত ভয়াবহ হতে পারে বলে প্রতীয়মান।

উক্ত সিলিন্ডারসমুহ হতে অত্যন্ত নাজুক পদ্ধতিতে এবং অনিরাপদভাবে একটি ডিস্ট্রিবিউশন মেশিনে লাইন নিয়ে সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা ও বিভিন্ন গাড়িতে গ্যাস প্রদান করা হত। উক্ত মেশিন যাচাই করে দেখা যায় তা চালনা করার জন্য কারেন্টের সংযোগটিও অবৈধভাবে গ্রহনকৃত এবং অত্যন্ত দূর্বলভাবে কারেন্টের তার ও সুইচ বোর্ডের মাধ্যমে সংযোজিত। এছাড়াও উক্ত মেশিন পরীক্ষা করে দেখা যায় যে ভিতরে সস্তা তার দিয়ে নাজুকভাবে ইলেক্ট্রিক সংযোগ দিয়ে আলোর জন্য লাইট লাগানো হয়েছে যা থেকে যেকোন সময় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে অগ্নিসংযোগ হতে পারে এবং বৃহৎ আকারের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে।

মূলত এই চক্রটি সিএনজি গ্যাস সংগ্রহ করে বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমান সিএনজি স্টেশন স্থাপন করে প্রতি লিটার প্রচলিত বাজার মূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রয় করে। সিএনজি স্টেশনে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ৪৩ টাকা দরে বিক্রির পরিবর্তে চোরাই পথে ৬২ টাকা দরে বিক্রি করে এবং সরবরাহকারীরা পরবর্তীতে বিভিন্ন স্থানে সুযোগ অনুযায়ী আরো বেশি টাকা দরে বিক্রি করে। এই কাজের মাধ্যমে চক্রটি বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০ এর ১৩(ক)/১৯ ধারার সকল নীতিমালা ভঙ্গ করে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।

এভাবে অবৈধ ভাবে গ্যাস চোরাই পথে সরবরাহ ও বিক্রির সময় বড় ধরনের বিস্ফোরণ ঘটতে পারে। এছাড়াও অবৈধ ও অনিরাপদভাবে গ্যাস সরবরাহ ও বৈদ্যুতিক সংযোগ এর কারনে ও এই গ্যাস বিক্রির ফলে তারা বিপুল পরিমান সরকারী রাজস্ব ফাকি দিচ্ছে এবং সরকার বিপুল পরিমান আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।

গ্রেফতারকৃত আসামীগণ এবং উদ্ধারকৃত মালামাল সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে