এম ডি বাবুল, চট্রগ্রাম জেলা প্রতিনিধি: র‌্যাব-৭, চট্টগ্রাম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারে যে, কতিপয় মাদক ব্যবসায়ী চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া থানাধীন মাইজপাড়া এলাকার চট্টগ্রাম- কক্সবাজার মহাসড়কের উপর মাদক ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য অবস্থান করছে। উক্ত তথ্যের ভিত্তিতে গত ১৭ মার্চ ২০২৩ ইং তারিখ ১৬১০ ঘটিকায় র‌্যাব-৭, চট্টগ্রামের একটি আভিযানিক দল বর্ণিত এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে আসামী মোঃ মামুনর রশিদ (২২), পিতা- আবুল কাছিম, সাং- দক্ষিণ মিঠাছড়ি, থানা- রামু, জেলা- কক্সবাজার‘কে আটক করে। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে আটককৃত আসামীর হাতে থাকা একটি প্লাষ্টিকের ব্যাগের ভিতর হতে আসামীর নিজ হাতে বের করে দেয়া মতে ৬০ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধারসহ আসামীকে গ্রেফতার করা হয়।

ধৃত আসামীকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানায় সিটি সেন্টারের ২য় তলায় একটি দোকানের ভিতরে আরও কয়েকজন ব্যাক্তি মাদকদ্রব্য ক্রয়/বিক্রয় করছে। র‌্যাব সদস্যরা তাৎক্ষনিক উপস্থিত সাক্ষীসহ ধৃত আসামীকে নিয়ে উক্ত দোকানটি ঘেরাও করে শাটার খুলে ভিতরে প্রবেশ করলে আসামী ১। মিনহাজুর রহমান মিনহাজ (২৩), পিতা- মৃত নজরুল ইসলাম, সাং- বোয়ালিয়া পাড়া, থানা- সাতকানিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম এবং ২। শহর মুলুক রাশেদ (৪৩), পিতা- মৃত কালা মিয়া, সাং- চৌকিদার বাড়ী, থানা- সাতকানিয়া, জেলা- চট্টগ্রাম’কে হাতেনাতে আটক করে। পরবর্তীতে উপস্থিত সাক্ষীদের সম্মুখে দোকানটি তল্লাশি করে দোকানের উত্তর পশ্চিম কোনায় রক্ষিত ০২টি প্লাষ্টিকের বস্তা ও ০১টি বাজারের ব্যাগ হতে ২৫ কেজি গাঁজা এবং ৩৩ বোতল ফেন্সিডিল উদ্ধারসহ আসামীদের গ্রেফতার করা হয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এই সিন্ডিকেট হল সিটি সেন্টার, কেরানীরহাট এলাকার কুখ্যাত মাদক গ্রুপ যা ফোরকান গ্রুপ নামে পরিচিত। সিটি সেন্টার শপিং মলটি স্থানীয়ভাবে মাদকের সকল কর্মকান্ডের কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। সিটি সেন্টার একটি নির্মাণাধীন ৩ তলা শপিং মল যা প্রায় ৮৫০ টি দোকান নিয়ে গঠিত। মাদক সিন্ডিকেট সিটি সেন্টারের ২য় তলায় খালি ফ্লোরে একটি দোকান ভাড়া নেয় যেটি প্রায় সব ধরনের মাদক মজুদ থাকতো। দোকানের ভিতরে খুচরা ভোক্তাদের জন্য তাদের ভোক্তা সুবিধাও ছিল। গ্রেফতারকৃতরা কেরানিরহাট, সাতকানিয়া এলাকার মাদক সিন্ডিকেটের সদস্য। তারা সাধারণত ইয়াবা, গাঁজা ও ফেনসিডিলের কারবার করে এবং কক্সবাজার, ফেনী ও কুমিল্লা থেকে কেরানিরহাট, চট্টগ্রামে এসব মাদকদ্রব্য নিয়ে আসে। উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্যের আনুমানিক মূল্য ০৫ লক্ষ টাকা। গ্রেফতারকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের নিম্নেবর্ণিত তথ্যাবলী পাওয়া যায়ঃ

গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মিনহাজ স্টোরম্যান ও ডিস্ট্রিবিউটর। সে সিটি সেন্টারের চারপাশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজরদারির জন্য নিয়মিত কিশোর গ্রাহকদের একটি দলকে তাদের প্রহরী হিসাবে রাখে। মোঃ মিনহাজ একজন চতুর ব্যক্তি যে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপর নজরদারি রাখে। সে খুব লো প্রোফাইল বজায় রাখে এবং আশেপাশে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার উপস্থিতির অবস্থা সম্পর্কে তার নিয়োগকৃত প্রহরীরা তাকে ক্লীয়ারেন্স দিলেই কেবল তার ক্রেতাদের সাথে দেখা করেন। তাছাড়া, সে মুখ লুকানোর জন্য মাস্ক ব্যবহার করে। কেউ যেন তাকে সহজে সনাক্ত না কর‍তে পারে সেজন্য কাউকে তার মুখ দেখতে দেয় না।

গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ মামুন মূলত কক্সবাজারের স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী যে ইয়াবা নিয়ে আসে এবং বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে গাঁজা ও ফেনসিডিলের বড় চালান নেয়। সে মিনহাজকে গ্রেপ্তার এবং দোকান খুঁজে বের করার মূল চাবিকাঠি ছিল। মামুনকে আটকের পর আভিযানিক দল মিনহাজের মাদক কার্যক্রম পরিচালনার পদ্ধতি সম্পর্কে সাধারণ ধারণা পায়।

গ্রেফতারকৃত আসামী মোঃ শহর মলুক রাশেদ সিন্ডিকেটের প্রধান মোঃ ফোরকানের অংশীদার। শহর মলুক ওই এলাকার বাজার কমিটির বর্তমান সেক্রেটারি যে মাদক ব্যবসায় আশ্রয়, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতি সম্পর্কিত ক্লীয়ারেন্স প্রদান এবং অর্থ বিনিয়োগ করে। সে নিজেই একজন নিয়মিত মাদক সেবনকারী। সে ওই এলাকায় ব্যবসায়ী হিসেবে সুপরিচিত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখে যা তাকে তার সুরক্ষার ছায়ায় এই সিন্ডিকেট চালাতে সহায়তা করে। সে মাদক সিন্ডিকেট নেতা ফোরকানকে দোকান ভাড়া ও ব্যবসা চালাতে সাহায্য করে। শহর মলুক সিটি সেন্টার এর ঠিক পিছন দিকে বসবাস করে। স্থানীয়ভাবে তিনি একজন প্রভাবশালী ব্যক্তি হওয়ায় তার পক্ষে সিন্ডিকেট পরিচালনা করা সহজ ছিল।

গ্রেফতারকৃত আসামী ও উদ্ধারকৃত মাদকদ্রব্য সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে