একজন নারীকে যদি একটি বন্য পশু আক্রমণ করে তাহলে তার সম্ভ্রম যায় না। কিন্তু একজন নারীকে যদি একটি মানুষরূপী পশু আক্রমণ করে তাহলে তার সম্ভ্রম যায়- এই প্রশ্ন তুলে ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে ধর্ষিতার নয়, ধর্ষকের সম্ভ্রমহানি হওয়ার কথা বলে মনে করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।

তিনি বলেছেন, ধর্ষণের সঙ্গে সম্ভ্রমের একটা সামাজিক যোগাযোগ করে ফেলেছি। কিন্তু ধর্ষণ অন্য যেকোনো ধরনের অপরাধের শিকার হবার মতো যেন হয়।

আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) আয়োজনে আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

দীপু মনি বলেন, এখন নারীর এত পিছিয়ে থাকার বড় কারণ সহিংসতার ভয়। তার পদে পদে ধর্ষণের ভয়। আমরা ধর্ষণের সঙ্গে নারীর সম্ভ্রমকে এক করে দিয়েছি। আমার কাছে মনে এই জায়গাটা খুব গোলমেলে।

‘একজন নারীকে যদি একটি বন্য পশু আক্রমণ করে তাহলে তার সম্ভ্রম যায় না। কিন্তু একজন নারীকে যদি একটি মানুষরূপী পশু আক্রমণ করে তাহলে তার সম্ভ্রম যায়। সম্ভ্রম তো কোনো নারীর কোনো বিশেষ অঙ্গে বাস করে না। সম্ভ্রম যদি কারো যায় তাহলে মানুষরূপী যে পশুটি তাকে আক্রমণ করেছে তার সম্ভ্রমহানি হয়েছে। একজন নারী কেন ধর্ষিতা হয়, তার জীবন নষ্ট হয়ে যায়, কেন সে সমাজে মুখ দেখাতে পারবে না, কেন আইনের কাছে গেলে বার বার তাকে আরও ভেকটিমাইজ করা হবে। কেন আমরা মনে করব তার জীবনটাই শেষ হয়ে গেল!’

দীপু মনি বলেন, দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। পৃথিবীতে সব জায়গায় ঘটছে, ঘটা উচিত নয়। তারপরও ঘটছে, নানান কারণে ঘটছে। সেই কারণ বিশ্লেষণের এখানে সময়ও নেই, এটি জায়গাও নয়। কিন্তু সেটি ঘটলে কেন নারীর সম্ভ্রম যাবে এই একটি মাত্র ধর্ষণের একটি ঘটনা বা দুর্ঘটনা অপরাধ সে অপরাধ, যে অপরাধ নারীর বিরুদ্ধে সংঘটিত হয়। সেই অপরাধে কেন অপরাধীর নয়, অপরাধের শিকার নারীর জীবন নষ্ট হবে কেন বন্য পশুর দ্বারা আক্রান্ত হলে তার সম্ভ্রম যায় না, কিন্তু বন্য পশুরূপী একজন মানুষ কর্তৃক আক্রান্ত হলে একজন নারীর সম্মান যায়।

শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি বলেন, সমাজের এই চিন্তার জায়গা যতক্ষণ না পরিবর্তন হবে ততক্ষণ নারী দিনে রাতে ঘরে বাইরে যেকোনো জায়গায় এই এক বিভীষিকার ভয় মাথার পেছনে নিয়ে নিয়ে তার পথ চলতে হবে। তার পথ চলতে প্রতিটি পদক্ষেপ অনেক ভারী। অনেক ভারী। তাকে প্রতি মুহূর্তে এই এক ভয়ের কথা মাথায় রাখতে হয়।

‘আমরা তার মুক্তির কথা বলি, এই একটা জায়গায় আসুন আমরা তাকে মুক্তি দেই। ধর্ষণের সঙ্গে সম্ভ্রমের একটা সামাজিক যোগাযোগ করে ফেলেছি, এটাকে বিযুক্ত করে দেই। যে অপরাধী সম্ভ্রমহানি হবে তার, ধর্ষিতার নয়।

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে