ডেস্ক রিপোর্ট : উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিল ঘোষণার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করেছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। রায় প্রদানকারী বিচারপতিদের স্বাক্ষরের পর আজ মঙ্গলবার সকালে ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. সাব্বির ফয়েজ আজ সাংবাদিকদের এ কথা জানান। তিনি বলেন, এ রায় সুপ্রিমকোর্টের ওয়েবসাইটেও আপলোড করা হয়েছে।
গত ৩ জুলাই প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র সুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগ এ রায় দেয়। ওইদিন রায়ে বলা হয়, সর্বসম্মতভাবে রাষ্ট্রপক্ষে আনা আপিল খারিজ করা হয় (বাই ইউন্যানিমাস্ ডিসিশান দ্যা আপিল ইজ ডিসমিস্ড)।

আপিলে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তি পেশ করেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত এটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। রিট আবদনকারী পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মনজিল মোরশেদ। বিষয়টি নিয়ে আপিল শুনানিতে ১০ বিশিষ্ট আইনজীবীর এমিকাস কিউরি হিসেবে মত নেয়া হয়। তারা হচ্ছেন- টিএইচ খান (পক্ষে তার পূত্র আফজাল এইচ খান), ড. কামাল হোসেন, ব্যারিষ্টার এম আমীর-উল ইসলাম,এ এফ হাসান আরিফ, আজমালুল হোসেন কিউসি, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, ব্যারিষ্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ, এম আই ফারুকী, এ জে মোহাম্মদ আলী ও ব্যারিষ্টার ফিদা এম কামাল।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণ ক্ষমতা সংসদের হাতে অর্পণ সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করে হাইকোর্টের ১৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় গত বছর ১১ আগস্ট প্রকাশ করা হয়। বিচারপতি মঈনুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত বৃহত্তর বেঞ্চ গতবছর ৫ মে বিষয়টির ওপর সংক্ষিপ্ত রায় দেয়। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য ছিলেন- বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল। রায়টি লিখেছেন, বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী। রায়ের সঙ্গে একমত পোষণ করেছেন বেঞ্চের অপর বিচারপতি কাজী রেজাউল হক। তবে বেঞ্চের কনিষ্ঠ বিচারপতি মো. আশরাফুল কামাল রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে আরেকটি রায় দিয়েছেন। উচ্চ আদালতের রুলস অনুযায়ী, সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে যে রায় দেয়া হয়, সেটাই চূড়ান্ত হবে।
এক রিটের প্রেক্ষিতে কেনো ষাড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করা হবে এ মর্মে রুল নিষ্পত্তি করে এ রায় দেয় হাইকোর্ট। এ মামলায় ৫ বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন, এম আমীর-উল ইসলাম, মাহমুদুল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও আজমালুল হোসেন কিউসিকে এমিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেয় আদালত।

এরই মধ্যে বিশিষ্ট আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম মৃত্যুবরণ করেন। বিষয়টির ওপর এমিকাস কিউরিগণের মধ্যে অপর চারজন তাদের মতামত আদালতে তুলে ধরেন। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর আলোকে বিচারপতি অপসারণের জন্য একটি খসড়া আইন প্রস্তত করা হয়েছে। অসদাচারণের জন্য সুপ্রিমকোর্টের কোনো বিচারকের বিরুদ্ধে তদন্ত ও তাকে অপসারণের প্রক্রিয়া নির্ধারণ করে ‘বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বিচারক (তদন্ত) আইন’-এর খসড়ার গতবছর ২৫ এপ্রিল মন্ত্রিসভা নীতিগত অনুমোদন দেয়। সর্বোচ্চ আদালতের বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়। পরে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আইন-২০১৪-এর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিমকোর্টের নয় আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদনটি দায়ের করে।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে