ডেস্ক রিপোর্ট : তুলনামূলক কম মূল্যের ফসল আবাদি জমিতে উচ্চ মূল্যের ফল আমের বাগান করে অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হচ্ছেন জাজিরা উপজেলার কৃষকরা। কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতা এবং ব্যক্তিগত উদ্যোগে উপজেলার ২০ হেক্টর জমিতে গড়ে উঠেছে ছোট বড় ১৯৯ টি বিভিন্ন জাতের আমের বাগান। এত বছরে ৩ কোটি টাকা আয়ের আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন কৃষক ও কৃষি বিভাগ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দ্বিতীয় শস্য বহুমূখীকরণ প্রকল্পের আওতায় দেশের ২৭ টি জেলার ৫২ টি উপজেলায় গতানুগতিক ফসল আবাদের পরিবর্তে উচ্চ মূল্যের ফসল আবাদ করে কৃষকদের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে ২০১২ সালে এই প্রকল্পের কার্যক্রম শুরু হয়। দশ বছর মেয়াদী এই আম বাগান করতে প্রথম বছরে গড়ে হেক্টর প্রতি ২ লাখ ৩০ হাজার থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় হলেও তৃতীয় বছর থেকে প্রতি বছর আয় হবে ১৪-১৫ লাখ টাকা।

এবং সাথী ফসল ও বেড়া ফসল হিসেবে অতিরিক্ত ২ লাখ টাকা আয় হবে হেক্টর প্রতি প্রথম পাঁচ বছর। ২০১২ সালে প্রকল্প শুরু হলেও ২০১৫ সাল থেকে উপজেলার অনেক কৃষকই তুলনামূলক উঁচু ও কমমূল্যের ফসল আবাদি জমিতে আম বাগান করছেন। আম বাগানে বেড়া ফসল হিসেবে লেবু ও আন্ত ফসল হিসেবে পেয়ারা, কুমড়া, ফুলকপি, বাধাকপি ও ধনে পাতা আবাদ করছেন। এতে মূল ফসলের পরেও অতিরিক্ত ফসল থেকে আয় হচ্ছে।
জাজিরা উপজেলার মুলনা ইউনিয়নের লাউখোলা গ্রামের উদ্যমী যুকক মো. মোশারফ হোসেন মোল্লা বলেন, ২০১২ সালে কৃষি বিভাগের পরামর্শ ও সহযোগিতায় ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ব্যয় করে এক একর জমিতে আমের বাগান করি। প্রথম দুই বছর আম না ধরলেও তৃতীয় বছর থেকে আমের ফলন পেতে শুরু করি। এখন বছরে ৩০-৪০ হাজার টাকা খরচ করে প্রতি বছর ৪-৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করছি। আমার বাগানের আম কেমিক্যালমুক্ত হওয়ায় বাজারের আমের চেয়ে বেশী দামে ক্রেতারা আগ্রহী হয়ে কিনছেন। এই জমিতে আমের বাগান করার আগে অন্য সবজি আবাদ করে ৬০-৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে আমি বছরে ১ লক্ষ থেকে ১ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা আয় করতে পারতাম।

আম বাগানের চার পাশে বেড়া ফসল হিসেবে লেবু আবাদ করে বছরে আরও ৫০-৬০ হাজার টাকা অতিরিক্ত আয় করছি। আমার আমের বাগান দেখে এলাকার অনেক কৃষকই এখন উৎসাহী হয়ে আমের বাগান করছেন।
একই গ্রামের কৃষক ফারুক হোসেন মোল্লা বলেন, প্রথমে কৃষি বিভাগ আমাকে আমের বাগান করতে বললেও আমার তেমন একটা আগ্রহ ছিল না। কিন্তু মোশারফ মোল্লার সাফল্য দেখে আমি গত মৌসুমে এক একর উঁচু জমিতে আমের বাগান করি। এ বছর সামান্য কিছু আম ধরলেও আশা করছি আগামী বছর ৩-৪ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারব।
মাদারীপুর জেলার কালকিনী উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা এস এম এ রহমান উদ্বুদ্ধকরণ ভ্রমণে ২০ জন কৃষক নিয়ে জাজিরার আম বাগান পরিদর্শন শেষে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, উচ্চমূল্যের ফসল আবাদে কৃষককে সংযুক্ত করতে পারলে তারা অর্থনৈতিকভাবে বেশ লাভবান হবেন।

আমি এলাকায় গিয়ে কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফসল আবাদের লাভ ও সুযোগ সুবিধার বিষয় উদ্বুদ্ধ করব। আমি আশা করছি আগামী বছর থেকে কালকিনীতেও অনেক আমের বাগান করা সম্ভব হবে।জাজিরা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হাবিবুর রহমান বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দ্বিতীয় শস্য বহুমূখীকরণ প্রকল্পের আওতায় উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ প্রকল্পের আওতায় জাজিরা উপজেলায় কৃষি বিভাগের আওতায় ৭২ টি ও ব্যক্তিগত পর্যায়ে ১২৭ টি আমবাগান গড়ে উঠেছে। যা কৃষককের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, সামাজিক উন্নয়ন ও ব্যক্তিগত স্বাবলম্বিতা অর্জনে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে।

আমাদের হিসেব অনুযায়ী আম বাগান থেকে তৃতীয় বছর থেকে কৃষক হেক্টরপ্রতি ১৫ লাখ টাকার আম বিক্রি করতে পারবেন এবং বাগানে বেড়া ফসল ও আন্ত ফসল আবাদ করে প্রথম পাঁচ বছর হেক্টরপ্রতি ২ লক্ষ টাকা অতিরিক্ত আয় করতে সক্ষম হবেন। প্রকল্পের প্রথম পর্যায়ে কৃষকদের মধ্যে তেমন আগ্রহ না দেখা গেলেও এখন আম বাগানীদের সাফল্যে অনেক কৃষকই আম বাগান করার জন্য আমাদের পরামর্শ ও সহযোগিতা গ্রহণ করছেন।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে