রোহিঙ্গা সংকটে ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ আঞ্চলিক সীমানার বাইরে ছড়িয়ে পড়ার আশংকা প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শিগগিরই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে বিশ্ব নেতাদের গুরুত্বসহকারে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।

বৃহস্পতিবার (১১ নভেম্বর) স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় প্যারিসে ল্যা ভিলেটের গ্র্যান্ড হলে প্যারিস পিস ফোরামের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শিগগিরই রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে বিশ্বকে গুরুত্বসহকারে কাজ করতে হবে। অন্যথায় এই সংকটের ‘নিরাপত্তা ঝুঁকি’ আমাদের সীমান্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। আমরা ইতিমধ্যে সেই লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি।

মানবিক দিক বিবেচনা করে জাতিগত নিধনের শিকার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়া প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জোরপূর্বক বিতাড়িত মিয়ানমারের রোহিঙ্গা নাগরিকদের সাময়িক আশ্রয় দিয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বকে বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাত এড়াতে সহায়তা করেছে।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক সীমান্তে আটকে থাকা হাজার হাজার অভিবাসীর প্রশ্নের জবাব খুঁজে বের করা দরকার। আমাদের অবশ্যই জাতি, বর্ণ এবং জাতিগত বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে। আমাদের নারী এবং মেয়েদের কাঁচের দেওয়াল ভাঙ্গার অনুমতি দিতে হবে। সবার জন্য উপযুক্ত কাজের সুযোগ তৈরি করতে হবে। অবশ্যই আমাদের কথা এবং কাজের মিল থাকতে থাকতে হবে।

বাংলাদেশ বিশ্বাস করে সারা বিশ্বে শান্তি হলো আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় নিশ্চয়তা। আমরা সংঘাতের পথ এড়িয়ে চলি এবং বিরোধের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই।

এক্ষেত্রে আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শান্তিপূর্ণ ভাবে সীমান্ত ও সমুদ্র বিরোধ নিরসনের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

যেকোন ধরনের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স নীতির কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের দেশের মাটি অন্য যেকোন দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে দেই না।

বিশ্বকে অস্ত্র প্রতিযোগিতা পরিহার করে সম্পদকে শান্তি ও টেকসই উন্নয়নে ব্যবহার করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্ব এখনো অনেক দ্বন্ধ-সংঘাতের মধ্যে রয়েছে। পুরোনো এবং নতুন সংঘাতগুলো শান্তিপূর্ণ ও স্থায়ী সমাধানে আমাদের সবার দায়িত্ব রয়েছে।

এই মহামারীকে অনুসরণ করে আন্তর্জাতিক শান্তি কুটনীতি বৃদ্ধি করার তাগিদ দেন তিনি।

১৯৯৭ সালে ঐতিহাসিক শান্তি চুক্তির মাধ্যমে চট্টগ্রামে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

জাতিসংঘের শান্তি রক্ষা কার‌্যক্রমে সর্বোচ্চ সংখ্যক শান্তিরক্ষী সদস্য দিয়ে বাংলাদেশের অবদানের কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

কোভিড-১৯ মহামারী আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ত্রুটির রেখাগুলো (fault-lines) বেরিয়ে এসেছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের অবশ্যই মনে রাখতে হবে এবং সেই ফাঁকগুলো বন্ধ করতে হবে।

সবার জন্য ভ্যাকসিন সুবিধা নিশ্চিত করার তাগিদ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবার জন্য টিকা নিশ্চিত করা ছাড়া লাখ লাখ মানুষকে সুরক্ষিত করা সম্ভব না।

মানুষের জীবন-জীবিকা এবং বাড়িঘর বাঁচাতে জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে উচ্চাকাঙ্খা বাড়াতে বলেন প্রধানমন্ত্রী।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়্যেল ম্যাক্র্যোঁ, নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদু বুহারি, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট কামালা হারিস।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্যারিস পিস ফোরামের প্রেসিডেন্ট প্যাসক্যাল ল্যামি।

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে