রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীসহ স্বাধীনতাবিরোধীদের তালিকা তৈরির আইনি বাধা কাটছে। এ সংক্রান্ত তালিকা তৈরির বিধান রেখে ‘জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল বিল-২০২২’ সংসদে উত্থাপন করা হয়েছে।

রোববার (৫ জুন) মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিলটি সংসদে উত্থাপন করলে পরে তা সাত কার্যদিবসের মধ্যে পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

বিলটি উত্থাপনের আপত্তি জানান বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ। তিনি খসড়া আইনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও আদর্শের সংজ্ঞা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি করেন। এছাড়া, মুক্তিযোদ্ধার সংজ্ঞাও বিলে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান।

বিলটিকে ‘অসম্পূর্ণ’ আখ্যা দিয়ে এমপি হারুন বলেন, যারা বিদেশে ছিল, ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল তাদেরও মুক্তিযোদ্ধা সনদ দেওয়া হচ্ছে। এটা বিব্রতকর।

মুক্তিযুদ্ধের সময় তার পরিবারের ভূমিকা তুলে এ সংসদ সদস্য বলেন, তখন তার বয়স ছিল ১০ বছর। তিনিওতো নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা দাবি করতে পারেন।

এসময় হারুনের আপত্তির জবাব দেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। পরে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন এমপি হারুনের প্রস্তাবে ভেটো দিলে তা নাকচ হয়ে যায়।

বিদ্যমান আইনে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিরোধিতাকারীদের তালিকা প্রকাশের বিষয়ে কিছু উল্লেখ নেই।

বিলে বলা হয়েছে, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যারা মহান মুক্তিযুদ্ধকালীন রাজাকার, আল-বদর, আল-শামস বাহিনীর সদস্য হিসেবে বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মকাণ্ডে লিপ্ত ছিলেন বা আধা-সামরিক বাহিনীর সদস্য হিসেবে সশস্ত্র যুদ্ধে নিয়োজিত থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন বা খুন, ধর্ষণ, লুট, অগ্নিসংযোগের মতো অপরাধমূলক ঘৃণ্য কার্যকলাপের মাধ্যমে নিরীহ মানুষকে হত্যার মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধ সংগঠিত করেছেন অথবা একক, যৌথ বা দলীয় সিদ্ধান্তে প্রত্যক্ষ, সক্রিয় বা পরোক্ষভাবে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছেন তাদের তালিকা প্রণয়ন ও গেজেট প্রকাশের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ প্রেরণ করবে।

উত্থাপিত বিলে আরও বলা আছে, কাউন্সিলের (জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল) সদস্য সংখ্যা ১২ জন করা হয়েছে। আগের আইনে ছিল ৯ জন। কাউন্সিলের প্রধান উপদেষ্টা হবেন প্রধানমন্ত্রী।

কাউন্সিলের আটজন সদস্য প্রধান উপদেষ্টা মনোনয়ন দেবেন। যারা বীর মুক্তিযোদ্ধা, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কোনো ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্য হবেন।

উপদেষ্টা পরিষদে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী থাকবেন। প্রধান উপদেষ্টা কর্তৃক মনোনীত পাঁচজন সদস্য মনোনয়নের ক্ষেত্রে মুক্তিযুদ্ধের ফোর্স কমান্ডার, সাব-সেক্টর কমান্ডার অথবা কমান্ডারসমূহের বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা, এ বিষয়ক কর্মকাণ্ডে সংশ্লিষ্ট কোনো বিশিষ্ট ব্যক্তি বা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এছাড়া মন্ত্রণালয়ের সচিবও এ পরিষদে থাকবেন।

কাউন্সিল মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা সংশ্লিষ্ট সব সংগঠনের নিবন্ধন প্রদান, সাময়িকভাবে স্থগিত ও বাতিল করতে পারবে।

২০১৯ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল আইন সংশোধনের খসড়া তৈরি করে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়। ওই বছরের ২৯ ডিসেম্বর আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় সুপারিশও নেওয়া হয়। ২০২০ সালের মার্চ মাসে আইনের ভাষা পরিমার্জনের জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বাংলা ভাষা বাস্তবায়ন কোষে পাঠানো হয়।

একই বছরের ডিসেম্বরে মন্ত্রিসভার বৈঠকে দুটি সংশোধনী দিয়ে ওই খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেওয়া হয়। চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তা গত বছরের জুনে মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাঠানো হয়। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে খসড়া আইনের চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়া হয়।

Jag/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে