ডেস্ক রিপোর্ট : আদর্শ শিক্ষক মানুষ গড়ার কারিগর। আদর্শ শিক্ষকই একটি জাতির পথপ্রদর্শক। এমনই একজন মডেল শিক্ষক হচ্ছেন- মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তরিফা নাজমিনা। তার স্কুলে শিক্ষার্থীদের শতভাগ উপস্থিতি নিশ্চিত। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে প্রতিটি ক্লাস নেন। অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীরা আর দশটা স্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের সাথে দুপুরে এক সাথে বসে খাবার খায়। সে জন্য তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক বন্ধুদের আর্থিক সহযোগিতায় বিদ্যালয়ের অস্বচ্ছল পরিবারের শিক্ষার্থীদের জন্য মিড ডে মিলের ব্যবস্থা করেছেন। কোন শিক্ষার্থী যেন শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত না হয়। সে জন্য তিনি প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে অভিভাবকদের বুঝিয়ে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করেছেন। বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী উমাইয়া খাতুন দুস্থ পরিবারের সন্তান। উমাইয়ারে উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে তরিফার ফেসবুক বন্ধু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক দায়ভার নিয়েছেন।
সরেজমিনে সোমবার বিকেলে গাড়াডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, স্কুল ছুটি শেষে সেখানে স্কুলের দুস্থ শিক্ষার্থীদের মায়েদের নিয়ে সুই সুতোর প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তরিফা। দুস্থ মায়েরা নকশী কাঁথা, বিছানার চাদর, মেয়েদের শাড়ি, কামিজ, ছেলেদের ফতুয়া মায়েদের হাতের ছোঁয়ায় ফুটে উঠেছে গ্রামীণ চিত্র। এ জন্য মায়েরা একটা পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। এসব জিনিস নিজ উদ্যোগে বিক্রি করে লাভের টাকায় স্কুলের দুস্থ পরিবারের শিক্ষার্থীদের মিড ডে মিল দিয়ে থাকেন। বিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষক, গ্রামবাসি তরিফার কাজে মুগ্ধ হয়ে সব ধরণের সাহায্য সহযোগিতায় এগিয়ে এসেছেন।
কথা হয় বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মোজাহিদ হোসেন ও জান্নাতুল ফেরদৌস মিম-এর সাথে। তারা দু’জনেই অভিন্ন সুরে বলে- তরিফা ম্যাডাম আমাদের শিক্ষক না আমাদের মা। মায়েরা যেমন সন্তানরা না চাইতেই সব দেয় তেমনি ম্যাডামও আমরা না চাইতেই লেখা-পড়া এবং খেলা-ধুলোর সব ব্যবস্থা করে দেন। লেখাপড়া শিখে আমরা ম্যাডামের মতো হতে চাই।
বিদ্যালয়ের দুস্থ এক শিক্ষার্থীর মা আশিয়া বেগম বলেন, আমরা গরীব মানুষ। সন্তানদের লেখাপড়া শেখানোর ক্ষমতা আমাদের নেই। কিন্তু হেড ম্যাডাম আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করে নিয়েছেন। বিনা বেতনে আমার ছেলে-মেয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। দুপুরে খাবার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। তাদের পড়ালেখা যেন বন্ধ না হয়ে যায় সে জন্য তিনি আমাদের হস্তশিল্পের কাজের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। এ জন্য পারিশ্রমিকও দেন। সে টাকা সংসারে অনেক উপকারে আসে।
বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আব্দুর রশিদ বলেন- বর্তমান প্রধান শিক্ষকের কর্মকান্ডে আমি অত্যন্ত গর্বিত। তিনি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যন লেখপড়া চালিয়ে যেতে পারে সে ব্যবস্থা করছেন।
গাড়াডোব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক লতিফা হেলালী বলেন- এটা একটা যুগান্তকারি পদক্ষেপ। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উপকার হচ্ছেন। মায়েদের প্রতিভা বিকশিত হচ্ছে এবং তাদের কর্মের সুযোগ হচ্ছে।
তরিফা নাজমীনা বলেনÑ ওরা দেশের ভবিষ্যৎ। ওদের সেভাবে গড়ে তোলার দায়িত্ববোধ থেকেই স্কুল ছুটি শেষে দুস্থ মায়েদের কাজের ব্যবস্থা এবং ফেসবুক বন্ধুদের টাকায় মিডডে মিল চালু করেছেন।
জেলা প্রশাসন পরিমল সিংহ সোমবার বিকেলে সরেজমিনে পরিদর্শনে গিয়ে দুস্থ মায়েদের নিপুন হাতে তৈরি সামগ্রী দেখে মুগ্ধ হন। তিনি তাৎক্ষণিক কুড়ি হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য করেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে বিদ্যালয়ে সার্বক্ষণিক বিদ্যুৎ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতাসম্পন্ন সোলার প্রদানের আশ্বাস দেন। যেকোন ধরনের সহযোগিতার জন্য তাকে জানাবার জন্যও বলেন। তিনি এমন পদ্ধতি জেলার প্রতিটি স্কুলে চালু করার আগ্রহ প্রকাশ করেন।\

বি/এস/এস/এন


একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে