একাত্তরের রণাঙ্গনে যুদ্ধরত মেজর রফিকুল ইসলাম শত্রুপক্ষকে আঘাত করতে অ্যাম্বুশে থাকার কারণে মেজর জিয়াউর রহমানকে ধরে এনে তাকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র পাঠ করানো হয় বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। জিয়াউর রহমান অস্ত্র হাতে সরাসরি যুদ্ধ করেননি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় (ভার্চ্যুয়াল) এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রথমে মেজর রফিককে স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করতে বলা হয়। তিনি তখন পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন এবং অ্যাম্বুশ করে বসে আছেন। তিনি বলেন, আমি যদি সরে যাই তাহলে ওরা এটা দখল করে নিবে। জিয়াউর রহমান তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর একজন হয়ে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে চায়। জনতা তাকে ঘেরাও করে এবং ধরে নিয়ে আসে। পরবর্তীতে তাকে দিয়ে স্বাধীনতার ঘোষণাটা পাঠ করানো হয়।

(মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রাম এবং পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে সেক্টর-১ এর কমান্ডার ছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম। মুক্তিযুদ্ধে সাহসিকতার সঙ্গে লড়াই করার জন্য বীর উত্তম খেতাব পান মেজর (অব.) রফিক। )

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার যে ঘোষণাটা, সেই ঘোষণা ২৬ তারিখ দুপুর বেলা, চট্টগ্রামের যিনি সাধারণ সম্পাদক হান্নান সাহেব তিনি প্রথম পাঠ করেন। এরপরে একে একে আমাদের ওখানে যারা নেতৃবৃন্দ সবাই পাঠ করেন। সে সময় নেতৃবৃন্দের মধ্যে একটা কথা ছিল একজন সামরিক অফিসারকে দিয়ে যদি ঘোষণাটা পাঠ করানো যায়, একটা যুদ্ধ হচ্ছে সেই যুদ্ধ যুদ্ধ মনে হবে। তখনই জিয়াউর রহমানকে ওখান থেকে ধরে নিয়ে আসা হয়। ‘

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মেজর রফিক আমাদের সংসদ সদস্য, তার বই যদি পড়েন সেখানে তিনি স্পষ্ট লিখেছেন – প্রথমে তাকে বলা হয়। তিনি তখন পাকিস্তানিদের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন এবং অ্যাম্বুশ করে বসে আছেন। তিনি বলেছেন, আমি যদি সরে যাই তাহলে ওরা এটা দখল করে নিবে। জিয়াউর রহমানকে যখন ধরে আনা হলো এবং কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র, ট্রান্সমিশন অফিস সেখানে, সেখান থেকে তাকে দিয়ে ঘোষণাটা পাঠ করানো হলো। প্রথম দিকে পাঠ করতে যেতে অনেক আপত্তি ছিল। যাই হোক তাকে দিয়ে পাঠ করানো হলো। সেইভাবে জিয়াউর রহমানের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। ‘

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২৫ মার্চ জাতির পিতা স্বাধীনতার ঘোষণা দেওয়ার পরও কিন্তু জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদেরই একজন সৈনিক হিসেবে, তাদের একজন সামরিক অফিসার হিসেবে কাজ করছিল। তার হাতে চট্টগ্রামে বহুলোক, আমাদের নেতাকর্মী যারা বেরিকেড দিচ্ছিল তার হাতে কিন্তু অনেকেই নিহত হয়েছে। তাদেরকে সে সব সময় বাধা দিয়েছে। ‘

‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী পাকিস্তান থেকে অস্ত্র প্রেরণ করেছিল সোয়াত জাহাজে, জিয়াউর রহমান পাকিস্তানি বাহিনীর একজন হিসেবে সে জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিল। … জিয়াউর রহমান যখন এই সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র নামাতে যায় সেখানে, কিন্তু পাবলিক তাকে ঘেরাও দেয় এবং ধরে নিয়ে আসে। ‘

বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, ‘২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নিরস্ত্র বাঙালির ওপর প্রথমে রাজারবাগ পুলিশ ফাঁড়ি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পিলখানায় তখন ইপিআর এবং ধানমন্ডি ৩২ নম্বর রোডে। পূর্ব থেকে যেহেতু প্রস্তুতি ছিল এবং একটা নির্দেশনাও ছিল এবং স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা সেটাও এই ইপিআরের ওয়ারলেসের মাধ্যমে সেটা প্রচার করে দেওয়া হয়, যখনই তারা আক্রমণ শুরু করে দেয় তার পরবর্তীতে, সেটা প্রচার করা হয়। যে চারজন ওখানে ছিলেন সুবেদার মেজর শওকত আলীসহ তারা কিন্তু পাকিস্তান আর্মির কাছে ধরা পড়ে। অত্যাচার করে তাদের হত্যা করা হয়। ‘

(সুবেদার মেজর শওকত আলী ইপিআর থেকে টেলিগ্রাফিক মেসেজের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র প্রচার করেছিলেন। )

‘জিয়াউর রহমানের নাম ছিল মিস্টার রিট্রিট’

বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান অস্ত্র হাতে সরাসরি যুদ্ধ করেননি বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, ‘এ কথা সত্য, জিয়াউর রহমান কোন ফিল্ডে বা কোথাও যুদ্ধ করেছে এ রকম ইতিহাস কিন্তু শোনা যায় না। আমাদের অনেক মুক্তিযোদ্ধা আহত হয়েছে, বিভিন্ন ফিল্ডে যুদ্ধ করেছে কিন্তু তার সে রকম ইতিহাস নাই। ‘

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমাদের চট্টগ্রামের নেতারা, আমাদের মোশাররফ হোসেন তিনিও সরাসরি অস্ত্র নিয়ে যুদ্ধ করেছেন। তারা কিন্তু জিয়াউর রহমানের নাম দিয়েছিলেন মিস্টার রিট্রিট। যেখানেই যুদ্ধ লাগতো তার থেকে তিন মাইল দূরে থাকতো জিয়াউর রহমান। সে কখনো অস্ত্র হাতে নিয়ে সামনাসামনি যুদ্ধ করে নাই। তাকে নেতৃত্ব দেওয়া হয়েছিল কিছু দিনের জন্য। ‘

‘সে (জিয়াউর রহমান) কখনো বাংলাদেশের অস্তিত্বে বিশ্বাস করতো না, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করতো না। ‘

(মুক্তিযুদ্ধের সময় এক নম্বর সেক্টরে প্রথমে এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর জিয়াউর রহমান এবং জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কমান্ডার ছিলেন মেজর রফিকুল ইসলাম। )

বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক এস এম মান্নান কচির সঞ্চালনায় স্মরণসভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফী, সাধারণ সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির।

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে