ডেস্ক রিপোর্টঃ মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার স্থগিতের প্রায় এক বছর অতিবাহিত হতে যাচ্ছে। সম্ভাবনাময় এ শ্রমবাজারটি খোলার ব্যাপারে প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী যে ডেটলাইন দিয়েছিলেন সেই সময়ও আজ শনিবার শেষ হচ্ছে। এ সময়ের মধ্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ (তখন প্রতিমন্ত্রী) মালয়েশিয়া সফরে গিয়ে বাংলাদেশ কমিউনিটির একটি অনুষ্ঠানে আগস্ট মাসের মধ্যেই শ্রমবাজার উন্মুক্ত হয়ে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলেন। তার এমন বক্তব্যে হতাশাগ্রস্ত হাজারো রিক্রুটিং এজেন্সির মালিক এবং শ্রমিক পাঠানোয় সম্পৃক্ত সারা দেশের লাখো মানুষ আশায় বুক বেঁধেছিলেন। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ততই তারা হতাশায় নিমজ্জিত হচ্ছেন। কারণ গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত মাহাথির মোহাম্মদ সরকারের পক্ষ থেকে বিদেশী শ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক কোনো ঘোষণাই আসেনি।

এ দিকে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদ দায়িত্ব নেয়ার পর পরই মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারে আর কোনো সিন্ডিকেটকে প্রশ্রয় দেয়া হবে না বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। তারপর থেকে সেভাবেই দুই দেশে কার্যক্রম চলছে। তবে সম্প্রতি মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে দেশটির হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রির পাঠানো এক চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, মালয়েশিয়ায় শ্রমিক আমদানির ক্ষেত্রে আগের মতো আর ১০ রিক্রুটিং এজেন্সিকে মনোপলি ব্যবসা (সিন্ডিকেট) করতে দেয়া হবে না। আগের ‘জি টু জি প্লাস’ পদ্ধতিতেই কর্মী নিতে চাইলেও তারা এবার ‘মোর বিআরএ’ (বেশি সংখ্যক বাংলাদেশী রিক্রুটিং এজেন্সি) পারটিসিপেশন চাচ্ছে বলে ওই চিঠিতে উল্লেখ রয়েছে। 

মালয়েশিয়ার মানবসম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে দেয়া ওই চিঠিতে ‘মোর বিআরএ’ শব্দ উল্লেখ থাকার বিষয়ের সত্যতা জানাতে গতকাল শুক্রবার রাতে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মুহ: শহীদুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তাকে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি এর কোনো উত্তর দেননি। 
গতকাল জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বায়রার একজন সদস্য নাম না প্রকাশের শর্তে নয়া দিগন্তকে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার সম্পর্কে বলেন, একটি মহল নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারের জন্য এখন মরিয়া হয়ে উঠেছে। তারা এবার শ্রমবাজার নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে মনে হয় মালয়েশিয়ার শ্রমবাজারের পরিস্থিতিকেই ঘোলাটে করতে নানাভাবে পাঁয়তারা চালিয়ে যাচ্ছে। 

এক বছর ধরে গুরুত্বপূর্ণ শ্রমবাজার এখনো স্থগিত থাকার কারণ কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার জানা মতে মালয়েশিয়ার হিউম্যান রিসোর্স মিনিস্ট্রি থেকে চলতি আগস্ট মাসের ৮ এবং ২৩ তারিখ দু’টি চিঠি মালয়েশিয়ায় আমাদের বাংলাদেশ হাইকমিশনকে দেয়া হয়েছে। ওই দু’টি চিঠির এক জায়গায় শুধু বলা হয়েছে আমরা আগের মতো আর ১০ জনের (মনোপলি) সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাংলাদেশ থেকে কোনো শ্রমিক আর নেবো না। তবে আমরা চাচ্ছি এবার মোর বিআরএ (বাংলাদেশ রিক্রুটিং এজেন্সিজ) সদস্য শ্রমবাজারে পার্টিসিপেশন করুক।

এখানে মোর বিআরএ সদস্য বলতে কী বোঝানো হয়েছে জানতে চাইলে ওই বায়রা সদস্য নয়া দিগন্তকে বলেন, মালয়েশিয়া সরকার এখনো ‘ওপেন ফর অল’ অর্থাৎ সব রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে কর্মী নেয়ার পক্ষে অটল। তবে তারা চাচ্ছে না এই মার্কেট খোলার পর কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হোক। এ ক্ষেত্রে তারা ‘মোর’ বলতে ১০ এজেন্সির পরিবর্তে ৩০-৫০টি রিক্রুটিং এজেন্সিকে বুঝিয়ে থাকতে পারে। পাশাপাশি চিঠিতে তারা আরেকটি বিষয়ের ওপর বেশি জোর দিয়েছে। সেটি হচ্ছে অভিবাসন ব্যয়। আসলে এবার কত কম টাকার মধ্যে একজন শ্রমিককে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হবে সে বিষয়ে তারা বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে গ্যারান্টি চাচ্ছে। বিদেশগামীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য মেডিক্যাল সেন্টারের তালিকা করা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মেডিক্যাল সেন্টার নিবন্ধনের জন্য প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্প্রতি পত্রিকায় একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। এখানে সবাইকে নিবন্ধনের সুযোগ দেয়ার কথা বলা হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে মেডিক্যাল নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের চাওয়ার কিছু নেই। এটা নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে মালয়েশিয়ান সরকার। তবে এবার স্বচ্ছপ্রক্রিয়ায় মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে কর্মী যাবে এটি শতভাগ নিশ্চিত করতে চাচ্ছে দুই দেশই। আর তা সম্পন্ন হলে শ্রমবাজার যেকোনো সময় খুলে যাওয়ার ঘোষণা আসতে পারে। 

N/D/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে