ডেস্ক রিপোর্ট: অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কখনো কোন মানুষের সাথে খারাব ব্যবহার বা জুলুম নির্যাতন করতে নেই, আসুন জেনে নেই এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে।

পবিত্র কোরআনে উল্লেখ আছে তোমরা কি জানো ইউসুফ ও তার সহোদরের প্রতি তোমরা কিরূপ আচরণ করেছিলে, যখন তোমরা ছিলে অপরিণামদর্শী। (সুরা : ইউসুফ, আয়াত : ৮৯)

তাফসির : ইউসুফ (আ.)-এর ভাইয়েরা তৃতীয়বার মিসরে গিয়ে নিজেদের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেছিল। ভাইদের দুরবস্থা দেখে ইউসুফ (আ.)-এর মন আবেগে উদ্বেল হয়ে ওঠে। তিনি নিজের পরিচয় গোপন রাখতে পারেননি। তাই তিনি এক রহস্যময় প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে ভাইদের চমকে দেন।

তিনি বলেন, তোমাদের কি মনে আছে, অজ্ঞতা ও অপরিণামদর্শিতার কারণে তোমরা তোমাদের ভাই ইউসুফ ও তার সহোদরের সঙ্গে কী আচরণ করেছ? তিনি এ প্রশ্নের মাধ্যমে বোঝাতে চেয়েছেন, তাদের সব অপকর্মের ব্যাপারে তিনি অবগত। কাজেই এ দুরবস্থার মধ্যে তারা যদি তাদের অপরাধের জন্য ক্ষমাপ্রার্থী হয় তাহলে আল্লাহর দরবারে অবনত মস্তকে তাদের তাওবা করা উচিত।

হজরত ইউসুফ (আ.) মিসরের অত্যন্ত ক্ষমতাধর ব্যক্তি হওয়া সত্ত্বেও ভাইদের নিষ্ঠুর আচরণের প্রতিশোধ গ্রহণের চিন্তাও করেননি। বরং তিনি অত্যন্ত বিনীতভাবে বৈমাত্রেয় ভাইদের অভাব-অনটন দূর এবং পরকালীন মুক্তির পথ প্রশস্ত করার উদ্যোগ নেন। এটাই ইসলামের শিক্ষা। এটাই নবী-রাসুলদের আদর্শ। মানুষের অসহায়ত্বের সুযোগ কখনো ব্যবহার করতে নেই।

ইউসুফ (আ.) অবশেষে নিজের পরিচয় প্রকাশ করেন। এর সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেন, তোমাদের কি মনে আছে ইউসুফ ও তার ভাইয়ের সঙ্গে কী আচরণ করেছিলে? তাঁর মুখে ইউসুফের অতীত প্রসঙ্গ শুনে ভাইয়েরা অবাক হয়। তারা ভাবতে শুরু করে, তাহলে কি তিনিই ইউসুফ। তিনি যদি ইউসুফ না-ই হন, তাহলে ইউসুফের সঙ্গে মিসরের আজিজের সম্পর্ক কী?

আমাদের ভাই ইউসুফের ঘটনা তিনি জানবেন কী করে? তারা অতীতের স্মৃতিচারণা করে দেখল, শৈশবে ইউসুফ স্বপ্ন দেখেছিল। যার ব্যাখ্যা ছিল, সময়ের ব্যবধানে তিনি উচ্চ মর্যাদার অধিকারী হবেন। তাঁর সামনে ভাইদের মাথা নত করতে হবে। এসব ভেবে তারা বুঝে নেয়, মিসরের এই আজিজই তাদের ভাই ইউসুফ। তাই তারা প্রশ্নবোধক বাক্যের মাধ্যমে উচ্চারণ করল, ‘আ ইন্নাকা লা আনতা য়ূসুফু—সত্যি সত্যিই কি তুমি ইউসুফ?

জবাবে তিনি বললেন, হ্যাঁ, আমিই ইউসুফ। বিনিয়ামিন আমার সহোদর ভাই। এখানে ভাইয়ের প্রসঙ্গটি যুক্ত করে দিয়ে মূলত তিনি তাদের চিন্তামুক্ত করছেন, তোমরা যে দুই ভাইয়ের খোঁজে পিতার নির্দেশে এখানে এসেছ, তারা দুজনই তোমাদের অপেক্ষায় আছে। এ নিয়ে চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।

লক্ষ করার মতো বিষয় হলো, ইউসুফ (আ.) তাদের সঙ্গে অহংকারসুলভ কোনো আচরণ করেননি। তিনি বলেছেন, আমার আজকের এই সম্মান ও ক্ষমতা পুরোপুরি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও দয়ার ফসল। যারা তাকওয়া ও সবর অবলম্বন করে, আল্লাহ তাদের উত্তম পুরস্কার দান করেন। এগুলোই সাফল্যের চাবিকাঠি। বিপদের উত্তম রক্ষাকৌশল। গুনাহের কাজ বর্জন করলে, বিপদের মুহূর্তে সবর করলে আল্লাহ তাঁর বান্দাদের হতাশ করেন না। তাই বিশেষ মর্যাদা ও ক্ষমতা পাওয়ার পরও আল্লাহর দরবারে অবশ্যই শোকরিয়া আদায় করতে হবে। অধীনস্থ ও নিকটজনদের সঙ্গে কিছুতেই অহংকারী আচরণ করা যাবে না।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে