ডেস্ক রিপোর্টঃ তেজগাঁও থেকে ধানমন্ডির সীমান্ত স্কয়ারে বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে মন্ত্রীর গাড়ি এবং তাঁর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের গাড়ি যানজটে আটকা পড়ে। যাত্রাপথ পরিষ্কার করে দেওয়ার জন্য মন্ত্রীর নিরাপত্তা দলের সদস্য সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহাবুদ্দিন দায়িত্বরত ট্রাফিক পুলিশ সদস্যের সঙ্গে কথা বলতে এগিয়ে যান। ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে তিনি যখন কথা বলছিলেন, তখনই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

বিস্ফোরণের সময় মন্ত্রীর গাড়ি ঘটনাস্থল থেকে মাত্র ১০০ গজ দূরে ছিল। এ ঘটনায় এএসআই শাহাবুদ্দিন এবং ট্রাফিক পুলিশের কনস্টেবল আমিনুল (৪০) আহত হয়েছেন। তাঁদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। শাহাবুদ্দিনের দুই পায়ে স্প্লিন্টারের আঘাত লেগেছে। আর আমিনুল হাতে আঘাত পেয়েছেন।

গতকাল শনিবার রাত সোয়া ৯টা থেকে ৯টা ২৫ মিনিটের মধ্যে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। কে বা কারা হামলা চালিয়েছে, তাৎক্ষণিকভাবে তা জানা যায়নি। 

এর আগে গত ৩০ এপ্রিল গুলিস্তানে ট্রাফিক পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা ছোড়া হয়। গত ২৬ মে মালিবাগে পুলিশের এসবি (বিশেষ শাখা) কার্যালয়ের সামনে একটি পিকআপে বোমা হামলার ঘটনা ঘটে। এসব ঘটনায় দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস)। পুলিশ বলছে, ওই দুটি ঘটনার সঙ্গে গতকাল সায়েন্স ল্যাবের ঘটনারও মিল রয়েছে। ২৪ জুলাই রাতে ফার্মগেটের খামারবাড়ি ও পল্টন এলাকার পুলিশের দুটি তল্লাশিচৌকির পাশ থেকে বোমাসদৃশ বস্তু উদ্ধার করেছিল পুলিশ। এ ঘটনায়ও আইএস দায় স্বীকার করে।

গতকাল রাত পৌনে ১১টার দিকে সায়েন্স ল্যাবে গিয়ে দেখা যায়, ঘটনাস্থল পুলিশের সদস্যরা ঘিরে রেখেছেন। সায়েন্স ল্যাব পুলিশ বক্সের ১০ থেকে ১২ গজ উত্তরে আহত পুলিশ সদস্যদের রক্ত পড়ে জমাট বেঁধে আছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের কর্মকর্তারা বিস্ফোরণের আলামত সংগ্রহ করেছেন। 

ঘটনার বিষয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী রাতে মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, তেজগাঁওয়ের নিজের কার্যালয় থেকে তিনি সায়েন্স ল্যাব মোড় হয়ে সীমান্ত স্কয়ারে একটি বিয়ের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাচ্ছিলেন। সায়েন্স ল্যাব মোড়ে যানজট দেখে প্রটোকলের দায়িত্বে থাকা এএসআই শাহাবুদ্দিন সেখানে ট্রাফিক পুলিশের সঙ্গে কথা বলতে যান। তখনই বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে।

মন্ত্রী বলেন, শাহাবুদ্দিন নেমে ১০০ গজের মতো দূরে গিয়েছিলেন। পুলিশ বক্সের ওখানে তখন আরও পাঁচ-সাতজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। বিস্ফোরণের আওয়াজ পেলেও সেটা যে ককটেল হামলা, তা তখন বুঝতে পারেননি তিনি। ভেবেছিলেন কোনো গাড়ির চাকা ফেটে গেছে। তাই তাঁর এবং পুলিশের গাড়ি সীমান্ত স্কয়ারের দিকে রওনা হয়। পরে পুলিশের কন্ট্রোল রুম থেকে তাঁকে এই হামলার খবর জানানো হয়।

নিজের প্রটোকলের দায়িত্বে থাকা পুলিশ সদস্যকে রেখেই চলে যাওয়ার বিষয়ে মন্ত্রী বলছেন, অন্যান্য পুলিশ সদস্য ভেবেছিলেন, তিনি মনে হয় হেঁটেই অনুষ্ঠানস্থলে চলে যাবেন।

পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী রাত সাড়ে ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আইইডি (ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস) বিস্ফোরণে পুলিশের দুই সদস্য আহত হয়েছেন। এর আগে রাজধানীর মালিবাগ ও গুলিস্তানে পুলিশকে লক্ষ্য করে হামলার সঙ্গে এর মিল রয়েছে। তবে হামলার লক্ষ্যবস্তু কারা, তা তদন্তে বেরিয়ে আসবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

এর আগে রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া সাংবাদিকদের বলেন, পুলিশ বক্সে পুলিশকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়েছে। সড়ক বিভাজক ও বেড়া থাকায় সরাসরি পুলিশ বক্সে বোমা ছুড়তে ব্যর্থ হয়েছে হামলাকারীরা। তিনি আরও বলেন, রাজধানীর হোলি আর্টিজান বেকারিতে হামলার পর থেকে জঙ্গি নির্মূলে পুলিশ ব্যাপক অভিযান চালিয়েছে। সেই ক্ষোভ থেকে পুলিশের ওপর হামলা হচ্ছে।

P/A/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে