ডেস্ক রিপোর্ট : বর্তমান সরকারের ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশে উন্নয়নের অগ্রযাত্রা নিশ্চিত হয়েছে— মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই সরকারের মেয়াদের ধারাবাহিকতা আছে বলেই দেশের মানুুষ সর্বক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া পাচ্ছে। এর ফলে বিশ্ব এখন বাংলাদেশকে আর করুণার চোখে দেখে না, সম্মানের চোখে দেখে। ’

আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বেচ্ছাসেবক লীগের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে গণভবনে আলোচনাসভা ও পুনর্মিলনীতে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে বিএনপি-জামায়াত জোট যথেষ্ট চেষ্টা করেছিল; কিন্তু সফল হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণ ছিল গণতন্ত্র ও নির্বাচনের পক্ষে। তাই তাদের মানুষ পুড়িয়ে মারা, জাতীয় সম্পদ নষ্ট করা কোনো কিছুই নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। সেই নির্বাচনে জয়ী হয়ে আমরা পুনরায় ক্ষমতায় আসি। ’ তিনি বলেন, ‘আমরা এখন যেকোনো ক্ষেত্রে বিশ্বকে চ্যালেঞ্জ করতে পারি। কারণ আমাদের শক্তি হচ্ছে সততা। এই সততার শক্তিতে আমরা পদ্মা সেতু নিয়ে বিশ্বব্যাংকের দুর্নীতির অভিযোগের প্রতিবাদ করেছিলাম। ’

দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘সফলতা সেই আনতে পারে, যে ত্যাগের ব্রত নিয়ে রাজনীতি করে। আদর্শ ও ত্যাগের মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করতে হবে। ’ রাজনীতিতে সততার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘যারা আত্মত্যাগের মনোভাব নিয়ে রাজনীতি করতে পারবে, জনগণের মনে তারাই স্থান করে নিতে পারবে। ’ তিনি বলেন, ‘কী পেলাম, কী পেলাম না—সেটা বড় কথা নয়, তুমি জনগণের জন্য কী করতে পারলে সেটাই একজন রাজনীতিবিদের আদর্শ হওয়া উচিত। আমি আশা করি, সেই মানসিকতা নিয়েই নিজেদেরকে গড়ে তুলবে। ’

এ সময় নিজের সন্তানদের সুসন্তান হিসেবে গড়ে তোলায় প্রধানমন্ত্রী মহান রাব্বুল আলামিনের শোকরিয়াও আদায় করেন। তিনি বলেন, ‘আমি তিনবার প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছি; কিন্তু তারা (সন্তানেরা) কখনো টাকা-পয়সা, বিষয় সম্পত্তি বা একটা ব্যবসা—কিছুর জন্যই কখনো বিরক্ত করে নাই। ’

ছেলে জয়ের জন্মদিনে তাঁর জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকের দিনটা জয়ের জন্মদিন। দেশবাসীর কাছে দোয়া চাই। জয়ের জন্য দোয়া করবেন। ’

অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মোহাম্মদ আবু কায়সার ও সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ এমপি বক্তব্য দেন। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য এবং আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মকবুল হোসেন ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম এ সময় মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সংগঠনের কেন্দ্রীয় এবং ঢাকা মহানগরী উত্তর শাখার নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে ফুলের তোড়া দিয়ে শুভেচ্ছা জানান।

বৃত্তিমূলক শিক্ষা প্রসারের আহ্বান : এদিকে আরেক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জ্ঞানভিত্তিক ও বৃত্তিমূলক শিক্ষাকে সন্নিবেশিত করে দেশের গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, দক্ষ জনশক্তিই একটি দেশ ও জাতির সামষ্টিক উন্নয়নকে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার। জ্ঞানভিত্তিক দক্ষতা ও প্রায়োগিক দক্ষতার সমন্বয়ে মানবসম্পদ উন্নয়নে শিক্ষাকে ঢেলে সাজাতে হবে। তাই কারিগরি শিক্ষাকে পর্যায়ক্রমে মূল ধারার শিক্ষায় সম্পৃক্ত করতে হবে।

গতকাল দুপুরে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অন স্কিলস ফর দ্য ফিউচার ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্ক অ্যান্ড টিভিইটি ফর গ্লোবাল কম্পিটিটিভনেস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

আইডিইবি ও আন্তর্দেশীয় রাষ্ট্রীয় সংস্থা কলম্বো প্ল্যান স্টাফ কলেজ (সিপিএসসি) ম্যানিলা, শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং ন্যাশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলের সহযোগিতায় তিন দিনের এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, দেশের জনসংখ্যা বোঝা নয়। ১৬ কোটি মানুষ আমাদের এক অমূল্য সম্পদ। দক্ষ মানবসম্পদের চেয়ে কোনো সম্পদই বড় নয়। আমরা জনশক্তিকে জনসম্পদে পরিণত করার জন্য বিজ্ঞান এবং কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষার সম্প্রসারণ ও মানোন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছি। ’ তিনি বলেন, ‘বিশ্ব কর্মব্যবস্থায় শতকরা ৯৩-৯৪ ভাগ কর্মীই নিম্নপর্যায় থেকে মধ্যম স্তরের। তাই পরিবর্তিত বিশ্বব্যবস্থায় উন্নয়ন, উৎপাদন ও সমৃদ্ধির জন্য এই স্তরের জনশক্তি তৈরিতে মনোনিবেশ করতে হবে। তা করতে হলে আমাদের টেকনিক্যাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং বা টিভিইটিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। ’

শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ এবং সিপিএসসি মহাপরিচালক ও স্টিয়ারিং কমিটির কো- চেয়ারম্যান ড. রামহরি লামিছানে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন।

ক/ল/ক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে