……………………………..মোঃ আব্দুল মান্নান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে বাংলাদেশ চেয়েছিলেন তা তিনি বর্ণনা করে গিয়েছেন তাঁর লেখায়। “অসমাপ্ত আত্নজীবনী ও কারাগারের রোজ নামচা” গ্রন্থ দু’টি বর্তমানে সে সাক্ষ্য বহন করছে। তাঁর লেখাই আমাদের জানিয়ে দেয়, তিনি ছিলেন চব্বিশ ঘন্টার রাজনীতিক। তাঁর ব্যক্তিগত জীবন বলতে তেমন কিছুই ছিল না। আজকের বাংলাদেশ তিনি দেখে যেতে পারেন নি, তারপরও তিনি করেছেন একটি মহান কাজ।তিনি বাঙ্গালী জাতিকে বাংলাদেশ নামক একটি রাষ্ট্র উপহার দিয়ে গেছেন। বাঙ্গালী জাতিকে দিয়েছেন আত্নপরিচয়ের সন্ধান। তিনি বাংলাদেশের জন্ম না দিলে পাকিস্তানের গোলামির শিকল থেকে বাঙ্গালী মুক্ত হতে পারত কি না, সে প্রশ্ন হয়ত হাজার বছর পরেও জাতির মনে জেগে উঠবে। আর সে জন্যই বঙ্গবন্ধু প্রজন্ম থেকে আলোর দিশারি হয়ে বাঙ্গালীর জাতির মনে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

বাঙ্গালী জাতির ভিতরে বিশ্বাসঘাতকের অভাব ছিল না পূর্ব থেকেই। সেই বেইমান ও বিশ্বাসঘাতদের জন্যই বাঙ্গালী জাতি দুঃখ কষ্ট ভোগ করছে যুগ যুগ ধরে। আমরা বাঙ্গালীরা জানি ১৭৫৭ সালের পলাশীর যুদ্ধে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারনে বাঙ্গালী জাতি পরাধীন হয়েছে। শুধু তাই নয় এর আগে ১৫৭৬ সালেও বাংলার স্বাধীন রাজা ছিলেন দাউদ কারানী। সেই দাউদ কারানীর উজির ছিল শ্রী হরি বিক্রম আদিত্য এবং সেনাপতি কাদলু লোহানী। তারা দাউদ কারানীর সাথে বেইমানী করে মোগল রাজাদের যোগসাজসে রাজ মাবাদের যুদ্ধে দাউদ কারানী কে পরাজিত করে বাংলাকে মোগলদের হাতে তুলে দিয়েছিল। যেমনটি করে ছিল পলাশীর যুদ্ধে বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর আলী খাঁ সহ আরো অনেকে। তাদের বেইমানীর কারনে ইংরেজরা এদেশ কে প্রায় ২০০ শত বছর শাসন করে বাঙ্গালী জাতিকে পরাধীন করে রেখে ছিল। সেই বিশ্বাস মীর জাফরের বংশধররা বাংলায় বংশ পরম্পরায় বিশ্বাস ঘাতকতা চালিয়েই যাচ্ছে। বহু বিশ্বাস ঘাতকতা করছে এ বাঙ্গালী মীর জাফরের দল।

তারা পরস্পর পরস্পর সাথে গোলমাল ডেকে এনে লোভের বশবর্তী হয়ে বার বার বিশ্বাসঘাতকতা করছে বাংলায়। যেমনি ভাবে উজির শ্রী হরি এবং কাদলু লোহানী এনেছিল মোগলদের মীরজাফর এনেছিল ইংরেজদের, তেমনিভাবে আলবদর, রাজাকারের দল পাকিস্তানী প্রভুদের খুশি করতে হাত মিলিয়েছিল তাদের সাথে। কিন্ত তাদের আশা পূরণ হয়নি। বাঙ্গালী জাতি মাত্র নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমেই বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ছিনিয়ে এনেছি বাংলার স্বাধীনতা। যে স্বাধীনতার জন্য বঙ্গবন্ধু শত দুঃখ কষ্ট সহ্য করেও কখনো আপোষ করেন নি পাকিস্তানী হানাদারদের সাথে।

তাই আমাদের সকলের উচিত বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধরে রাখা, ত্যাগী মানুষ হওয়া, যে শিক্ষা বঙ্গবন্ধু আমাদের জন্য রেখে গেছেন। বাংলায় জন্ম হয়েছে অনেক সোনার ছেলের কিন্তু হাজার বছরের শ্রেষ্ট বাঙ্গালীর তকমাটি শোভা পাবে শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ললাটে। তাই ভারতের বিখ্যাত কবি অন্নদা শংকর রায় বঙ্গবন্ধুকে নিবেদিত করে পংক্তি মালায় লিখেছেন, “ যতকাল রবে পদ্মা-মেঘনা, গৌরি-যমুনা বহমান, ততকাল রবে কীর্তি তোমার শেখ মুজিবুর রহমান।” তার এ প্রত্যাশার সাথে সহমত পোষণ করে বলা সঙ্গত যে, যতদিন বাংলদেশ থাকবে,স্বাধীনতা থাকবে,দেশের নদ-নদীর স্রোত বহমান থাকবে, পাক-পাখালীর কলতান থাকবে, সবুজ শ্যামল বাংলার প্রকৃতি, আকাশ-বাতাস থাকবে, ততদিন আমাদের মাঝে চিরভাস্মর, চির অমর অজেয়, অক্ষয় হয়ে থাকবেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

তাই মহান স্বাধীনতা দিবসে স্মরণে আবারও বলতে হয় সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক কিংবদন্তির নাম। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন নির্ভিক, অমিত সাহসী এবং মানব দরদী। বাংলার আবাল বৃদ্ধ বণিতার অধিকার আদায়ে, তিনি শেষ আশ্রয়স্থল। প্রখর স্মৃতি শক্তির অধিকার, দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এ বিশ্ব নেতার সূদীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের মূল লক্ষ্য ছিল বাঙ্গালী জাতিকে স্বাধীনতার শৃঙখল থেকে মুক্ত করা। আর সে কারনেই হয়ত বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৬৫৪ এর যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন ১৯৫৮ এর আইয়ুব খাঁনের সামরিক শাসন বিরোধী আন্দোলন ১৯৬২ এর শিক্ষা কমিশন বিরোধী আন্দোলন, ১৯৬৬ এর ৬ দফা, ১৯৬৮ এর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ১৯৬৯ এর গনঅভ’ত্থান ও ১৯৭০ এর নির্বাচন সহ ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ তাঁর নেতৃত্বেই পরিচালিত হয়েছিল। তাঁর সম্মোহনি ব্যক্তিত্ব ও ঐন্দ্রজালিক ভাষণ সমগ্র বাঙ্গালী জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে একসূত্রে গেঁথেছিল।

এর ফলশ্রুতিতেই আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভোম বাংলাদেশ। বিকাশ ঘটেছে বাঙ্গালী জাতিস্বত্বার। বঙ্গবন্ধু শুধু জাতির পিতাই নন, তিনি বিশ্বের সকল নিপীড়িত, শোষিত, বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ে মুক্তির অগ্রনায়ক। স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যে সোনার বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়নের জন্য আমাদের নুতন প্রজন্মকে সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতেই হবে। শৈশব থেকেই আমাদের সন্তানদের মাঝে সৎগুনাবলীর উম্মেষ ঘটাতে হবে।

জ্ঞান গরীমা শিক্ষা-দীক্ষা সততা ও দেশ প্রেম এবং নিষ্ঠাবোধ জাগ্রত করার মাধ্যমে আলোকিত মানুষ গড়ে তুলতে হবে। যাতে তারা নিজেদের জীবন গড়ার পাশাপশি দেশ ও মানুষকে ভালবাসতে শিখে এবং দেশ প্রেমের চেতনায় উদ্ধুদ্ধ হয়ে আগামী দিনে জাতি গঠনে অবদান রাখতে সক্ষম হয়। আমাদের সন্তানেরা এ ধারণা নিয়েই বড় হবে। ওরা বলবে“সবার উপরে মানুষ সত্য তাহার উপরে নাই।” ওরা শিখবে মনুষত্ববোধের ধারণাই মানুষের সবচেয়ে বড় ধারণা। মানুষ ধনী হতে পারে গরীবও হতে পারে কিন্তু মানুষ সমাজে নানা পেশার কারনে কখনই উঁচু নিচু শ্রেণীর মানুষ হবে না। মানুষের মানবিক মর্যাদার জায়গা সব সময়ই উন্নত থাকবে। বঙ্গবন্ধুর এ শিক্ষা ও বিশ্বাস নিয়েই আমরা আমাদের সন্তানদের তৈরী করব এভাবেই। বঙ্গবন্ধু আরো বলতেন, “আমাদের সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে যে, দুর্নীতির শাখা প্রশাখা বিস্তার লাভ করছে। তার মুলচ্ছেদ করতে সরকারকে সাহায্য করতে হবে।

এটা আমার, আপনারদের সকলের প্রতি আবেদন।” বঙ্গবন্ধুর সে স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিতে চলছে। অনুমান নয় বাস্তবতা, সাফল্য সম্ভাবনার দেশ এখন বাংলাদেশ। এখন সকলের ভাবনা বাংলাদেশ কবে একটি বিরাট ও বিস্ময়কর সাফল্যের গল্পে পরিগণিত হবে। তবে এখন বাড়িয়ে বলার নয়, বাংলাদেশ এখন সত্যিই সম্ভবনার দেশ। বাংলাদেশের মানুষ এখন গর্বের সাথে দেশের সাফল্যের কথা তুলে ধরতে পারে। বাংলাদেশ এখন অনুস্মরণীয় উন্নয়ন মডেলে রূপান্তরিত মধ্যম আয়ের দেশ।

লেখক ও সাংবাদিক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে