বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে ফরাসি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্যারিস সফররত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার (১০ নভেম্বর) দুপুরে প্যারিসে ফ্রান্সের ব্যবসায়ী নেতা ও উদ্যোক্তাদের সঙ্গে এক সভায় এ আহ্বান জানান তিনি।

বাংলাদেশে বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সারাবিশ্বের তুলনায় বাংলাদেশে ফ্রেন্স উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ এখনো অনেক কম। ফ্রেন্স উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে এখানকার বিনিয়োগ সুযোগ-সুবিধা প্রত্যক্ষ করার আমন্ত্রণ জানাই।

বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সঙ্গে কাজ করে জানিয়ে তিনি বলেন, ফরারি বিনিয়োগকারীদের সহায়তা করতে পারলে খুশি হবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আপনাদের বিনিয়োগ প্রবেশ অধিকতর সহজ করতে অংশীদার হিসেবে একজন স্থানীয় উদ্যোক্তাকে খুঁজে নিতে পারেন।

ফরাসি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি অংশীদারত্ব গড়ে তোলার আহ্বান জানান সরকারপ্রধান।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করলে ফরাসি ব্যবসায়ীরা অধিক লাভবান হবে আশা প্রকাশ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি নিশ্চিত ফরাসি উদ্যোক্তারা তাদের বিনিয়োগের সর্বোচ্চ লাভ ফেরত পাবেন।

বাংলাদেশ ব্যবসা এবং বিনিয়োগের আকর্ষণীয় গন্তব্য মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এ অঞ্চলে সবচেয়ে বন্ধুত্বপূর্ণ বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশে বিনিয়োগ করার আমন্ত্রণ জানাই। আমাদের আইনি ও নীতি কাঠামোতে টেকসই সংস্কারের জন্য উন্মুক্ত। আমাদের শক্তিশালী আইনি ব্যবস্থা বিদেশি বিনিয়োগের সুরক্ষা দেয়।

সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং ২৮টি হাইটেক পার্ক স্থাপনের কথা উল্লেখ করে সেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগের কথা তুলে ধরেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে আঞ্চলিক বাজারগুলোতে প্রবেশ সুবিধার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশকে আঞ্চলিক কানেকটিভিটির কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করছি। এ অঞ্চলের সঙ্গে আমাদের সড়ক, রেল, ম্যারিটাইম, জ্বালানি এবং ডিজিটাল কানেকটিভি সত্যিকারের গেইম-চেইঞ্জার হবে।

ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের বড় অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ভৌগলিক অবস্থান সেতু হিসেবে কাজ করবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

মঙ্গলবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, গতকালকের আলোচনায় দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নিতে ঐকমত্য হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অর্থনৈতিক অংশীদারত্বেও দ্বিপাক্ষিক সুসম্পর্কের প্রতিফলন হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে আপনাদের সক্রিয় সহযোগিতার অপেক্ষায় আছে বাংলাদেশ।

দুই দেশের দ্বিপাক্ষিক মানুফার ভিত্তিতে ফরাসি ব্যবসায়ীদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাতে বাংলাদেশ প্রস্তুত বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, সার্বিকভাবে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রবৃদ্ধির জন্য সঠিক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। প্রতিবেশী দেশগুলোর তুলনায় আমাদের অঞ্চলটা অধিকতার শান্তিপূর্ণ এবং নিরাপদ।

মহামারি সত্ত্বেও বাংলাদেশের ব্যাপক বিনিয়োগ ও অবকাঠামো প্রকল্পের কার্যক্রমের গতি কমাতে পারেনি বলে উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা একটি শান্তিপূর্ণ, সার্বজনীন এবং সমৃদ্ধ দেশ গড়া।

২০১৭ সালে প্যারিস সফরের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে যেটা বলেছিলাম, সেটা এখানে আবার বলছি। ফ্রান্স তার প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং বাংলাদেশ তার প্রবৃদ্ধিকে ত্বরান্বিত করতে আরও বিনিযোগ ও বাণিজ্য প্রয়োজন। আমরা একসঙ্গে উভয় দেশের অর্থনীতির জন্য লাভজনক পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে পারি।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ এবং ফ্রান্সের মধ্যেকার দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ধারাবাহিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দুই দেশের বাণিজ্য ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে দাঁড়িয়েছে। ফ্রান্স এখন বাংলাদেশের পঞ্চম রপ্তানি গন্তব্য। ২০২৫ সালের মধ্যে বাণিজ্য দ্বিগুণ করতে হবে।

গত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরেন টানা তিনবারের সরকারপ্রধান। করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও বাংলাদেশ ৫ দশমিক ২১ শতাংশ অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন করার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এশিয়া প্যাসিফিকে এই প্রবৃদ্ধি সর্বোচ্চ।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের কৌশল হচ্ছে জনগণের মধ্যে জীবন ও জীবিকার মধ্যে ভারসাম্য রক্ষা করে কাজ করা।

আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন নীতিমালার কারণে আর্থ-সামাজিক সেক্টরে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে।

তিনি বলেন, ক্ষুধা ও দারিদ্র্য বিমোচন, নারীর ক্ষমতায়ন, প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা, বিনামূল্যে গৃহদান, দুযোর্গ ব্যবস্থপনা এবং সামাজিক সুরক্ষা খাতে বাংলাদেশের অর্জন ব্যাপকভাবে স্বীকৃত।

আগামী বছরের মার্চের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে কোভিড-১৯ টিকার আওতায় আনতে সরকারের পরিকল্পনার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশ থেকে এখন বিশ্বের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক আইটি ফ্রিল্যান্সার কাজ করছে। আমাদের বেশকিছু উদ্যোগ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ পেয়েছে।

ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে