উজ্জ্বল রায়, নড়াইল থেকে: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায় ড্রাগন ফল চাষে ঝুঁকছেন কৃষকেরা। টক-মিষ্টি ও মিষ্টি স্বাদের ড্রাগনের চাষে ব্যাপক সফলতা পাচ্ছেন তার।

পরীক্ষা মূলকভাবে এক একর জমিতে ড্রাগন চাষ করা কৃষকের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে ফলটির চাষে আগ্রহ বাড়ছে কৃষকদের মাঝে। নড়াইলের লোহাগড়ায় ড্রাগন ফল চাষের অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করেছেন সৈয়দ রওশন আলী। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লোহাগড়া উপজেলার এসএইচবিআর আলিম মাদ্রাসার সাবেক সিনিয়র শিক্ষক এখন ড্রাগনচাষী। স্বল্প মূলধন ও অল্প জায়গায় ড্রাগন চাষ করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হয়েছেন সৈয়দ রওশন আলী। তার সাফল্য দেখে ড্রাগন চাষে এগিয়ে এসেছেন এ উপজেলার অন্য কৃষকেরা।

উপজেলার ৩ নম্বর শালনগর ইউনিয়নের শেখ পাড়া বাতাসি গ্রামের মাঠে ড্রাগন চাষ করেছেন তিনি। সৈয়দ রওশন আলী বলেন, একটি বীজতলা থেকে প্রতি ১৫ দিন পরপর অন্তত ২০০টি ফল সংগ্রহ করা যায়। তেমন রোগ বালাই না থাকায় একটু পরিচর্যায় অনেক ভালো ফলন পাওয়া যায়। তিনি বলেন, প্রথমে ৫৩২টি খুঁটিতে চারা রোপণ করেছি, প্রতিটি খুঁটিতে পাঁচটি চারা রোপণ করে মোট দুই হাজার ৬৬০টি চারা রোপণ করি। এতে দশ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। এপ্রিল থেকে মে মাসে ফুল আসে আর শেষ হয় নভেম্বর মাসে।

ফুল আসার ৩০ থেকে ৪০ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। নভেম্বর মাস পর্যন্ত ফুল ফোটা এবং ফল ধরা অব্যাহত থাকে। রওশন আলী জানান, একটি ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে এক কেজিরও বেশি হয়ে থাকে। একটি পূর্ণাঙ্গ গাছ থেকে ১০০ থেকে ১৩০টি পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। সঠিক পরিচর্যা করতে পারলে একটি গাছ হতে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত ফলন পাওয়া সম্ভব। ড্রাগন প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে ফল বিক্রি হয়। এ সময় চলতি মৌসুমে প্রায় পঁচিশ লাখ টাকার ফল বিক্রির আশা ব্যক্ত করেন তিনি। লোহাগড়া উপজেলার কাউড়িখোলা গ্রামের শিক্ষিত যুবক প্রসাদ কুমার গাইন বলেন, বতর্মান যে অবস্থা তাতে চাকরি পাওয়া অনেক সমস্যা। আমি ড্রাগন বাগান করতে চাই। সৈয়দ রওশন আলী স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে আমি এখান থেকে চারা নিয়ে ড্রাগন ফলের বাগান করব।

লোহাগড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. রইচউদ্দিন বলেন, সৈয়দ রওশন আলীর ড্রাগন চাষের সফলতা দেখে উপজেলায় অনেকেই এখন ড্রাগন ফলের চাষ করছেন। বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন চাষ বেশ জনপ্রিয় হলেও লোহাগড়ায় তেমন সাড়া পড়েনি। তবে সম্প্রতি ড্রাগন চাষ বেড়েছে। কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হলে উপজেলাতে বাণিজ্যিকভাবে ফলটির চাষ করা সম্ভব।

শালনগর ইউনিয়নের উপসহকারি কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত কুমার সাহা বলেন, ড্রাগন চাষের জনপ্রিয়তা ইউনিয়নে কৃষকদের মাঝে অনেকটা বেড়েছে। নিজ উদ্যোগে চাষ করে সফলতা পেয়েছেন চাষিরা। মাঠ পর্যায়ে আমাদের সরকারি প্রদর্শনী নেই তবে কর্মকর্তারা চাষের ক্ষেতে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে