ডেস্ক রিপোর্ট :  জেলায় ক্ষুদে চিত্রশিল্পীরা ব্যতিক্রমী দীর্ঘ ২ হাজার ৯শ ১৬ বর্গফুট (১ হাজার ফুট লম্বা ও ৩৫ ইঞ্চি চওড়া) ছবি আঁকছে। এ পর্যন্ত ১ হাজার ৮শ ৯৫ বর্গফুট(সাড়ে ৬শত ফুট লম্বা ও ৩৫ ইঞ্চি চওড়া) ছবি আঁকা সম্পন্ন হয়েছে। নড়াইলের শিল্পাঞ্জলি ভ্রাম্যমান অবৈতনিক আর্ট স্কুলের দুই শতাধিক শিশু শিল্পী কার্টিস পেপারে এ ছবি আঁকছে। সম্পূর্ণ নতুন ধারার এবং বৃহৎ এ ছবির উদ্যোক্তা হলেন বরেণ্য শিল্পী এস.এম সুলতানের শিষ্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক বিমানেশ বিশ্বাস। নড়াইল শহরের কুরিগ্রামে এই শিল্পীর নিজ বাড়িসহ হাতে গড়া ৫টি ছবি আঁকার স্কুলের শিশু চিত্রশিল্পীরা এ কাজটি করছে।এদিকে এসব স্কুলের শিশুরা নিয়মিতভাবে ছবি আঁকা শিখে থাকে। এদের ছবি আঁকার খাতা, রং,পেন্সিলসহ বিভিন্ন উপকরণ শিল্পী বিমানেশ ফ্রি সরবরাহ করে থাকেন এবং তার পরিবার থেকে শিশুদের খাবার ব্যবস্থাও করা হয়।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের সহকারি অধ্যাপক চিত্রশিল্পী বিমানেশ বিশ্বাস জানান, ২০০৫ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত প্রথমে নড়াইল শহরের শিবশংকর মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দক্ষিন নড়াইল দিঘির পাড় এলাকার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী শিশুদের নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। এরপর খুলনা বটিয়াঘাটা হাটবাড়ি মন্দিরে এবং খুলনা খালিসপুর প্রাইমারী স্কুলে কয়েক বছর ছোট ছেলে-মেয়েদের ছবি আঁকা শিখিয়েছেন তিনি। ২০১৫ সালের মাঝামাঝি শিশুদের জন্য ‘শিল্পাঞ্জলি ভ্রাম্যমান অবৈতনিক আর্ট স্কুল’ নামে ছবি আঁকার প্রতিষ্ঠান করেছেন। নিজ বাড়ি, সদরের কলোড়া ইউনিয়নের গোবরা বাজার এলাকা, নলদীর চর, বড়েন্দার গ্রাম এবং ভদ্রবিলা ইউনিয়নের চন্ডিতলা পালপাড়া এলাকায় মোট ৫টি স্কুল পরিচালনা করছেন। শিল্পীর নিজের বাসায় ৭০ জন, গোবরা বাজারের পার্শ্বে ৩৫জন, নলদীর চর গ্রামে ৩০জন, বড়েন্দার গ্রামে ৪০জন ও চন্ডিতলা পালপাড়ায় ৪০জন শিশুসহ মোট ২শ ১৫জন শিশু এসব স্কুলে ছবি আঁকা শেখে। এদের মধ্যে ২য় শ্রেণি থেকে ৪র্থ শ্রেণির শিশুরাই বেশী। এর মধ্যে শিল্পীর বাসায় প্রতি শুক্র ও শনিবার এবং অন্যান্য স্কুলে মাসে দু’দিন ক্লাস নেয়া হয়।

শহরের দিঘির পাড় এলাকার শিশু ৫ম শ্রেণির ছাত্র অভি সরদার, ইমন সরদার, ৩য় শ্রেণির ছাত্রী শিলা সরদার ও চন্দ্রিমা মালি, শহরের কুরিগ্রাম এলাকার ৬ষ্ট শ্রেণির ছাত্র অর্পন চেীধুরী, নড়াইল শহরের ৩য় শ্রেণির অহনা, মাছিমদিয়া এলাকার ক্লাস ওয়ানের ছাত্র আলিফ ও ৩য় শ্রেণির তাকিয়া জানায়,এ স্কুলে রং, পেন্সিল ও খাতা ফ্রি দেওয়া হয়। প্রতি শুক্র ও শনিবার বিমানেশ স্যারের বাসায় ক্লাস করি এবং কখনও খিচুড়ি, ডিম বা মাংস ভাত বা পরোটা খেয়ে ছবি আঁকি। শিশুদের যতœ করে খাওয়ানোর কাজটি করে থাকেন শিল্পীর স্ত্রী মমতা বিশ্বাস।

জানা গেছে, শিশুদের খাওয়া ও তাদের ছবি আঁকার উপকরণের পেছনে প্রতি মাসে আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা ব্যয় হয়, যার সমস্ত খরচই শিল্পী নিজে বহন করেন। শিশুদের ছবি আঁকা শেখানোয় সাহায্য করেন একমাত্র সন্তান ভারতের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পেইন্টিং বিভাগে মাস্টার্স করা হীরা বিশ্বাস, নড়াইলের এস.এম সুলতান বেঙ্গল চারুকলা মহাবিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী অন্তরা বৈরাগী ও সৌমিত্র মোস্তবী।খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারি অধ্যাপক বিমানেশ বিশ্বাস আরো জানান, শিশুরা এক হাজার ফুট লম্বা এবং ৩৫ফুট চওড়া (২ হাজার ৯শ ১৬ বর্গফুট) অ্যামেরিকান কার্টিস পেপারে ২০১৬ সালের ২ ডিসেম্বর থেকে এ ছবি আঁকা শুরু করেছে। শিশুরা ওদের ইচ্ছামত নিজের ভাবনায় বিভিন্ন বিষয়ের ওপর ছবি আঁকছে। এসব বিষয়ের মধ্যে রয়েছে মুক্তিযুদ্ধ, গ্রামীন জীবন, মসজিদ-মন্দির, নৌকাবাইচসহ বিভিন্ন লোকজ উৎসব, বর-কনে, পালকি, রাখাল, কৃষক-শ্রমিক, কম্পিউটার, মোবাইল টাওয়ার, মাছ শিকার, ঈদের নামাজ ইত্যাদি। শিল্পীর ইচ্ছা বিশাল এ ছবি ডিজিটাল প্রিন্ট করে বিভিন্ন স্কুলে দেখানোর ব্যবস্থা করবেন, যাতে শিশুরা চারুকলা ও ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ হয়।

শিশুদের নিয়ে এতো বৃহৎ ছবি আঁকার ধারনা কিভাবে পেলেন এ প্রশ্নে তিনি (সহকারি অধ্যাপক বিমানেশ বিশ্বাস) বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই শিশুদের ছবি আঁকা শেখাই। ওরা ছোট এ ফোর সাইজের কাগজে ছবি আঁকে।এ ছবি সংরক্ষণ করা সম্ভব নয়। সেজন্য ভেবেছি এভাবে বড় ছবি আঁকলে সংরক্ষণ করা সম্ভব।এ বছরের মধ্যেই এ ছবি আঁকা সম্পন্ন হবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এ ধরনের ছবি হয়নি। বাংলাদেশ এমনকি বিশ্বে শিশুদের এতো বড় ছবি এই প্রথম বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, এটা আমার গুরু শিল্পী সুলতানের আশির্বাদ। তার আশির্বাদ না থাকলে এত বড় কাজ করতে পারতাম না।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে