(নীলফামারী)  কিশোরগঞ্জ থেকে : নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান ও সহকারী শিক্ষা অফিসার নিলুফা আক্তারের বিরুদ্ধে দূর্ণীতি, উৎকোচ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে ।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, কিশোরগঞ্জ সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ কেশবা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলী আকবরকে একটি কুচক্রী মহল পারিবারিক মিথ্যা মামলায় জরিয়ে ০১ ফেব্রুযারী/১৭ তারিখে কিশোরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করে। কিন্তু গত ৩১জানুয়ারী/১৭ইং কিশোরগঞ্জ থানা পুলিশ মামলার এজাহার পাওয়ার আগেই আলী আকবরকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে ০১ ফেব্রুয়ারী তাকে নীলফামারী আদালতে নেয়া হলে আদালত জামিন না মঞ্জুর করে তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করে।
উপজেলা শিক্ষা অফিসার তার জমিনের সুবিধার জন্য তার অফিসিয়াল প্যাডে আলী আকবরের নামে প্রত্যয়ন পত্র প্রদান করেন। ০৪ ফেব্রুয়ারী/১৭ ইং তারিখে আলী আকবরের জামিন মঞ্জুর হলে তিনি কর্মস্থলে ফিরে আসেন।

এর পর আলী আকবর উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান ও সহকারী শিক্ষা অফিসার নিলূফা আক্তারের সাথে সক্ষাত করেন। গ্রেফতারের কারণে তাঁর চাকুরীর কোন ক্ষতি হবে কিনা জানতে চাইলে তারা জানান, আপনার পরিবারের সাথে এ বিষয়ে আলাপ হয়েছে। বাসায় ফিরে আলী আকবর তাঁর স্ত্রীর নিকট জানতে পারে যে, চাকুরী বাঁচাতে হলে উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী শিক্ষা অফিসারকে যথাক্রমে ৫০ হাজার ও ৩০ হাজার টাকা উভয়কে উৎকোচ দিতে হবে। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসারদ্বয়ের সাথে আলোচনা করে শিক্ষা অফিসার ৩০ হাজার ও সহকারী শিক্ষা অফিসার কে ১০ হাজার টাকা প্রদান করা হয়। এবং যথাক্রমে প্রতি মাসে শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসানকে তিন হাজার সহকারী শিক্ষা অফিসার নিলুফা আক্তারকে ০১ হাজার করে উৎকোচ দিতে হবে। তারী ধারাবাহীকতায় উৎকোচের টাকা এপ্রিল/১৭ পর্যন্ত প্রদান করে।

গত মে/১৭ ইং মাসে উৎকোচের টাকা প্রদানে অস্বীকৃতি জানালে শিক্ষা অফিসার ক্ষিপ্ত হয়ে ০৭ মে/১৭ তারিখ সকাল ৯.৩০ মিনিটে দক্ষিণ কেশবা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পরিদর্শনে আসেন, প্রধান শিক্ষককে না পেয়ে তার বিষয়ে অবগত না হয়ে তাকে গড় হাজির করেন। পরের দিন সহকারী শিক্ষা অফিসার নিলুফা আক্তারও ০৮ মে/১৭ ইং সকাল ১০ টায় স্কুলে পরিদর্শনে আসেন। তিনিও প্রধান শিক্ষকের বিষয়ে অবগত না হয়ে শিক্ষক হাজিরা খাতা নিয়ে যান ও প্রধান শিক্ষক আলী আকবর কে গড় হাজির করেন। এতেই তারা ক্ষান্ত হন নি। তারা স্থানীয় থানা পুলিশের সাথে হাত মিলিয়ে পুলিশকে প্রভাবিত করে আলী আকবরের বিরুদ্ধে রুজুকৃত মিথ্যা মামলার ০৪ মাস পরে চার্জশীট কর্তৃপক্ষের কোন চাহিদাপত্র ছাড়াই সপ্রণোদিত হয়ে কিশোরগঞ্জ থানা থেকে সরাসরি জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার, নীলফামারীর নিকট প্রেরণ করেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা, নীলফামারী অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক আলী আকবরকে চাকুরী থেকে সাময়িক বরখাস্ত করার সুপারিশ করে বিভাগীয় উপ-পরিচালক প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর, রংপুর বরাবরে পত্র প্রেরণ করেন ।

বিভাগীয় উপ-পরিচালক উল্লেখিত সূত্র মতে আলী আকবরকে ০১ ফেব্রুয়ারী/১৭ ইং তারিখ থেকে সাময়িক বরখাস্তের আদেশ দেন। পত্র নম্বর ৯৮৯ তারিখঃ ০৫ মে/১৭ইং। সংশ্লিষ্ট শিক্ষা অফিসারদ্বয় মুসলেকা গ্রহণ পূর্বক মে/১৭ ইং মাস পর্যন্ত মাসিক বেতন ও ভাতা প্রদান করেন।৩১ জানুয়ারী/১৭ ইং তারিখ বিনা পরওনায় পুলিশ গ্রেফতার করলে ও সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার ও সহকারী শিক্ষা অফিসার উৎকোচের টাকার আশায় বিষয়টি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে তাৎক্ষণিকভাবে অবহিত করেন নাই। উৎকোচের টাকা না পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে পুলিশের সাথে যোগসাজসে পুলিশ কে প্রভাবিত করে সংশ্লিষ্ট প্রধান শিক্ষকের আর্থিক ক্ষতি সাধন ও সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করার হেনমন্নতায় ভুগে গ্রেফতারের চার মাস পর অত্যন্ত তৎপরতার সাথে সাময়িক বরখাস্ত করতে সমর্থন হন।

গেল বছর আগে রুপালি কেশবা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জনৈক সহকারী শিক্ষককে জুয়া খেলারত অবস্থায় পুলিশ কতৃক গ্রেফতার ও তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব সিদ্দিকুর রহমানের ভ্রাম্যমান আদালত ১ মাসের কারাদন্ড প্রদান করেন। যা উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোটা উৎকোচের বিনিময়ে ওই শিক্ষকের কারদন্ডের বিষয়টি সম্পূর্নভাবে গোপন রাখেন। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে কোন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ না করে বরং তাকে তার বেতন ভাতাদি সম্পূর্ণরুপে স্বাভাবিক নিয়মে প্রদান করেন। যা সাধারণ মানুষের মনে উৎকোচ, দূর্ণীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের চিত্র পরিষ্কার ভাবে ফুটে উঠেছে।

সরজমিনে গিয়ে জানাযায়, প্রাধমিক শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসান শুধু এখানেই ক্ষ্যান্ত নয় সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী কেজি স্কুল গুলোকে নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রতিটি কেজি স্কুলের নিকট থেকে স্কুলের নাম উল্লেখ করে মোটা অংকের উৎকোচ গ্রহণ করেন। এছাড়া ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার অপকর্মের আরো চিত্র বিদ্যমান রয়েছে। উল্লেখিত কেজি স্কুল গুলোতে প্রথম পর্ব/১৭ পরীক্ষার নামে প্রশ্ন বাণিজ্য করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেন ও জোর পূর্বক প্রশংপত্র চাপিয়ে দেন। যার কোন সরকারী নির্দেশনা ও পরিপত্র নাই।

এমনি নানা ধরণের দূর্ণীতি, অনিয়ম, প্রত্যারণা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের সঠিক তদন্ত হলে থলের বিড়াল বেড়িয়ে আসবে। এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মাসুদুল হাসানের সাথে সরাসরি তার অফিস কক্ষে কথা হলে এক পর্যায়ে তিনি হটাৎ করে বলেন, আমার পারমিশন ছাড়াই আমার কথা রেকর্ড করছেন, আমি আর কোন কথা বলবো না বলে চেয়ার থেকে উঠে বাইরে যান। এ ব্যাপারে সহকারী শিক্ষা অফিসার মুঠো ফোনে কল দিলে তার মেয়ে ফোন রিসিভ করে বলে তার মা বাইরে আছে আবার একটু পরে বলে মা এখন নামাযে আছে।এবিষয়ে মামলার তদন্ত অফিসারের সাথে কথা হলে তিনি বলেন অভিযোগ পাওয়ার পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে