নীলফামারী জেলার বিভিন্ন স্থানে কোরবানির পশুর চামড়া ২০০ থেকে সর্বোচ্চ ৩০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। চামড়া ব্যবসায়ীদের টাকা বকেয়া পড়ে থাকায় ফড়িয়ারা এই সস্তায় চমড়া কিনেছে।

জেলার সৈয়দপুরে চামড়া গুদাম নামে একটি মহল্লায় দেশের উত্তরাঞ্চলের বড় আড়ত ছিল। বিভিন্ন জেলা থেকে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা এখানে গরু-ছাগলের চামড়া বিক্রি করতে আসত। সেসব চামড়া রেলপথে চলে যেত ঢাকাসহ পার্শ্ববর্তী ভারতের কলকাতায়। কিন্তু ‘৯০-এর দশকে ভারতে কাঁচা চামড়া রফতানি বন্ধ হয়ে গেলে এ শিল্পে লোকসান দেখা দেয়। কাঙিক্ষত দামের চেয়ে কম মূল্যে দেশীয় ট্যানারি ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনলেও নানা টালবাহানা দেখিয়ে সময়মতো তা পরিশোধ করত না। বিগত ৫-৬ বছরে ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে এমনিভাবে প্রায় ৪ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে।

চামড়া ব্যবসায়ী সরফরাজ মুন্না বলেন, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে ট্যানারি মালিকেরা চামড়ার দাম দেয় না। লবণযুক্ত মালামাল হওয়ায় উপায়হীন হয়ে তাঁদের কাছে ধরনা দিতে হয়। বলতে গেলে এক রকম জিম্মি হয়ে ব্যবসা করতে হয়। তা ছাড়া এবারে লবণের দামও বেড়েছে। গত বছর ৭০ কেজি ওজনের লবণের বস্তার দাম ছিল ৬৫০ টাকা। এবারে তা কিনতে হচ্ছে ১০৬০ টাকায়। তাই ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করতে গেলে এবারে ব্যবসায়ীরা নিশ্চিত পুঁজি হারাবে।

সৈয়দপুরের লক্ষণপুরের কোরবানিদাতা মিঠু জানান, কোরবানির গরু কিনেছি ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায়। সেই গরুর চামড়া মাত্র ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। উপজেলার কামারপুকুরের হাসান আলী জানান, ৭০ হাজার টাকার কোরবানির গরুর চামড়া মাত্র ২৫০ টাকায় বিক্রি করেছি।  
সৈয়দপুর চামড়া ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সভাপতি ও মেসার্স আল আমিন ট্রেডার্সের মালিক মো. আজিজুল হক বলেন, আজ থেকে ৮-১০ বছর আগে সৈয়দপুর থেকে কোরবানি ঈদে ১০ কোটি টাকার চামড়া রফতানি হতো। ট্যানারি মালিকদের কাছে আটকে থাকা পুঁজি ও মৌসুমি ব্যবসায়ীর দৌরাদ্র্যতায় বর্তমানে এক থেকে দেড় কোটিতে নেমে এসেছে। অপরদিকে, বকেয়া টাকা আদায় না হলেও ব্যবসায়ীদের নেওয়া ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধ করতে হচ্ছে।

এ বিষয়ে নীলফামারী চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শফিকুল আলম জানান, এখনো উত্তরাঞ্চলের চামড়ার বড় ব্যবসার কেন্দ্র হচ্ছে নীলফামারীর সৈয়দপুর। কিন্তু ট্যানারি মালিকদের কাছে থাকা বকেয়া টাকা তুলতে না পেরে ঈদে চামড়া কেনা নিয়ে ব্যবসায়ীরা আতঙ্কে রয়েছেন। আগে কাঁচা চামড়া যেভাবে সবাই রফতানি করতে পারত সেই ব্যাবস্থা করার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।  

Ban/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে