ডেস্ক ‍রিপোর্ট : জেলার আত্রাই ও রাণীনগর উপজেলায় বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই বিভিন্ন হাট বাজারে দেশী প্রজাতির ছোট জাতের মাছ ধরার গ্রাম বাংলার সহজ লভ্য প্রাচীনতম উপকরণ বাঁশের তৈরি চাঁই বিক্রির ধুম পড়েছে। উপজেলার হাটবাজারগুলোতে প্রতিদিন শত শত চাঁই বা খলশানি বিক্রি হচ্ছে। উপজেলার ঐতিহ্যবাহী আহসানগঞ্জ হাটের খলশানি পট্টিতে বেচা কেনার জন্য জনসাধারণের উপস্থিতি ছিল চোখে পড়ার মতো।
তথ্যঅনুসন্ধানে জানাযায়, উপজেলার সিংসাড়া সহ পার্শ্ববর্তী রানীনগর উপজেলার নিজামপুর, ঝিনা, খট্টেশ্বর, কৃষ্ণপুর-মালঞ্চিসহ বিভিন্ন গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের লোকেরা তাদের স্ত্রী, পূত্র, কন্যাসহ পরিবারের সকল সদস্যরা মিলে এই অবসর মৌসুমে তাদের নিপুণ হাতের তৈরি চাঁই বা খলশানি উপজেলার আহসানগঞ্জ, কাশিয়াবাড়ি, সুটকিগাছা, পাইকরা, বজ্রপুর, বান্ধাইখাড়া, মির্জাপুর-ভবানিপুরসহ বিভিন্ন হাটে বিক্রির জন্য পসরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন।
বাঁশ, কটের সুতা এবং তাল গাছের আঁশ দিয়ে তৈরি এসব চাঁই মানের দিক দিয়ে ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ হয়ে থাকে। বিশেষ করে হাওর অঞ্চলে মাছ শিকারীরা এসব হাট-বাজার থেকে পাইকারি মূল্যে সেগুলো কিনে নিয়ে যান। বর্ষা মৌসুমে চাঁই বা খলশানির কদর বেশি হওয়ায় এবং এর ফলে অধিক মূল্য পাওয়ায় এ পেশায় জড়িত পরিবারগুলো বর্ষা মৌসুমে মাত্র দুই তিন মাসেই চাঁই বা খলসানি বিক্রি করে তারা প্রায় বছরের খোরাক ঘরে তুলতে পারেন।
লাভ খুব বেশি না হলেও বর্ষা মৌসুমে এর চাহিদা থাকায় রাত দিন পরিশ্রমের মাধ্যমে চাঁই বা খলশানি তৈরি করে তারা বেজাই খুশি। এক দিকে যেমন সময় কাটে অন্য দিকে লাভের আশায় বাড়ির সকল সদস্যরা মিলে চাঁই বা খলশানি তৈরি কাজ করে।
রানীনগর উপজেলার ঝিনা গ্রামের ঋষি সম্প্রদায়ের সুনীল, দুলাল, নিশিথ জানিয়েছেন, এসব চাঁই বা খলশানি তৈরিতে প্রকার ভেদে খরচ হয় ৭০ থেকে ২শ’ টাকা, বিক্রি হয় ১৫০ টাকা থেকে ৩ শ’ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি চাঁই বা খলশানি বিক্রি করে নীট লাভ করছেন ৭০ টাকা থেকে দেড়শ টাকা পর্যন্ত।
কিন্তু জীবনের তাগিদে তারা একেবারে কর্মহীন থাকতেও চায় না। তবে সরকারি বেসরকারী পৃষ্টপোষকতা ও সহযোগিতা পেলে মৌসুমের আগে বেশি সংখ্যক খলশানি মজুত করতে পারলে ভরা মৌসুমে বেশি দামে বিক্রি হলে লাভ ভালো হয়।
রানীনগর উপজেলার কাশিমপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যার মোঃ মোখলেছুর রহমান বলেছেন ঋষিরা খুবই পরিশ্রমী। বাঁশ বেত ইত্যাদি দিয়ে নানা সামগ্রী বিক্রি করেই চলে তাদের জীবন। কাজেই তাদের এই কর্মকে স্বীকৃতি দিয়ে প্রয়োজনীয় ঋণের ব্যবস্থা করা গেলে তাদের এই কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত হয়। আরও ব্যপকভাবে তাদের এই শিল্পকে এগিয়ে নিতে পারবে।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে