…………………..মাহফুজার রহমান মণ্ডল

কাজের তাগিদে উত্তরা থেকে সদরঘাট প্রায়ই যেতাম। আমার ডিউটি থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কিন্তু কোনদিন আর সন্ধ্যায় বাসা ফেরা হয়নি। যেদিন তাড়াতাড়ি ফিরতাম সেদিনও রাত ৯টা বাজতো। কারণটা কি জানেন, উত্তরা থেকে সদরঘাট ১ ঘণ্টার পথ নয় বিশ্বাস না হলে সকাল বেলা ভ্রমন করেন কিন্তু সকাল ৯টার পর বাসে উঠলে ১২/০১টা বাজবেই কারণ সবাই আপনার পিছ ছাড়লে যানজট ছাড়বে না। তাই মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য ড্রিম প্রোজেক্ট তথা যানজট নিরসনের অন্যতম কৌশল।

আমি এক সময় ইংল্যান্ড-এ ছিলাম। জীবিকা নির্বাহ করতাম পার্টটাইম জব করে। দেশে থাকা অবস্থায় যখন বাপ-ভাইয়ের হোটেলে খেতাম তখন টের পাইনি সময়ের কত মূল্য। বিদেশে পার্টটাইম জব করে ঘণ্টায় ৭/৮ পাউন্ড কামাতাম সে নেশাটা রয়েই গিয়েছিলো কিন্তু দেশে ফিরে সেই সময়ের মূল্য আর নেই। ঘণ্টানুযায়ী আর পেমেন্ট পাই না। এমনকি মাস শেষ করেও ঠিক সময় পেমেন্ট পাই না। যেখানে এক স্থান থেকে আর এক স্থান যেতে ৩/৪ ঘণ্টা লাগে সেখানে সময়ের মূল্য আর আসবে কোথা থেকে।

বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। এদেশের প্রধান ফসল ধান ও পাট। ধান ও পাট ছাড়াও চা, আলু, গম ও নানান ধরনের শাক-সবজিতে পরিপূর্ণ আমাদের এ দেশ। দেশে আয়তনের তুলনায় জনসংখ্যা অতিদ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে নানান সমস্যার আমরা সন্মুখিন হচ্ছি। নানান সমস্যার মধ্যে যানজট মারাত্মকভাবে প্রতিফলিত হচ্ছে। আমাদের সরকার এই যানজট নিরসনে নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন যার মধ্যে রয়েছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে ও মেট্রোরেলের মতো মেগা প্রকল্প। তাইতো সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় মন্ত্রনালয়ের অধীনে খুব শীগ্রই আমরা ৩ টি ড্রিম প্রোজেক্ট-এর সুফল আমরা পেতে যাচ্ছি। যা ২০২২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধন করবেন।

রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়িতে পরীক্ষামূলক মেট্রোরেল চলাচল উদ্বোধন শেষে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাংবাদিকদের জানান- ২০২২ সালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩টি ড্রিম প্রোজেক্ট উদ্বোধন করবেন। অনেক চরাই উৎরাইয়ের পর প্রোজেক্টগুলো একটি একটি করে দার হয়ে গেল। প্রোজেক্টগুলো উপর অনেক ষড়যন্ত্র চলছিল কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশ নেত্রী মানিনীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা করো কথায় কান না দিয়ে নিজ প্রচেষ্টায় দেশের অর্থায়নের পদ্মা সেতু হবে ঘোষণা দিলেন। আজ বাস্তবায়ন করে তিনি প্রমান করে দিলেন যেমন বঙ্গবন্ধু হানাদার বাহিনীর কাছ থেকে বাংলার স্বাধীন পতাকা ছিনিয়ে নিয়ে এদেশের মানুষকে মুক্ত করেছিলেন।

আজ এই প্রোজেক্টগুলো আমাদের কাছে সত্যিই স্বপ্নের মতো। পদ্মা সেতু হওয়ার ফলে মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ের সঙ্গে শরীয়তপুর ও মাদারীপুর যুক্ত হবে এতে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের সঙ্গে উত্তর-পূর্ব অংশের সংযোগ ঘটবে যা বিরল ঘটনা। দেশে প্রথম মেট্রোরেল যা অকল্পনীয় আপনি অতি দ্রুত ও কম খরচে ঢাকা মেইন পয়েন্টগুলোতে অবতরন করতে পারবেন। আর চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল যার মাধ্যমে বৃহত্তর চট্টগ্রামে বিনিয়োগ, শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।

পদ্মা সেতুর কথা প্রথমে না বললেই নয়। সেই ২০১৪ সাল থেকে নির্মাণ কাজ শুরু হয়। আজ অবদি প্রায় ৯৪.২৫% কাজ শেষ হয়েছে। বাকি আছে প্রায় ৫.৭৫% কাজ আর এই কাজের জন্য দ্রুত বাস্থবায়নে সেতু কর্তৃপক্ষ রাতদিন পরিশ্রম করে যাচ্ছে। প্রথমে একটি পরে আরও তিনটি দাতা সংস্থা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন থেকে সরে যায় যেখানে ২০১২ সালে বিশ্বব্যাংক দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ধরা হয়। মূলত এই সেতু নির্মাণে দেশ ও দেশের বাইরে থেকে নানান চাপ আসে। আজ এই সেতু দৃশ্যমান হওয়ায় শত্রুপক্ষ আজ বুঝতে পেরেছে কোন ষড়যন্ত্র আর বঙ্গবন্ধুর কন্যার কাছে ভীর জমাতে পারবে না। এই সেতুর ফলে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সাথে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন হবে যা ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। কৃষিপণ্য সহজেই ঢাকায় পোঁছাবে ফলে পচন থেকে রক্ষা পাবে কৃষকের কৃষিপণ্য। মানুষের আরও কর্মসংস্থান আরও বাড়বে। সব জেলার সাথে যোগাযোগ ব্যাবস্থা আরও সুদৃঢ় হবে।

মেট্রোরেল প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের জুনে। এখন কাজ চলছে তবে পরীক্ষামূলক চলাচলের উদ্বোধন করে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। যানজট ও জনদুর্ভগের কথা মাথা রেখে এই প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই ট্রেন প্রতি ঘন্টায় ৮০,০০০ যাত্রী পরিবহন করতে পারবে বলে কর্তৃপক্ষ বলেছেন। ফলে রাস্তায় যাত্রী এবং পরিবহন উভয়ের ওপরই চাপ কমবে আসবে বলে আশাবাদী। ইহা উত্তরা থেকে পল্লবী হয়ে মতিঝিল পর্যন্ত স্থাপন করা হবে তবে বর্তমান উত্তরা থেকে পল্লবী পর্যন্ত পারফরমেন্স দেখান হয়েছে। বর্তমান ভাড়া নির্ধারণ ও জনবল নিয়োগ প্রক্রিয়া চলছে। আশাবাদী ২০২২ সালে আমরা এই মেট্রোরেলে ভ্রমন করবো।

২০১৬ সালে মাননীয় প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনা ও চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং যৌথভাবে চট্টগ্রামবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্নের কর্ণফুলী টানেলের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এর ফলে এর বৃহত্তর চট্টগ্রামে শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। কর্ণফুলী নদীতে ঘন ঘন ব্রিজ নির্মাণে পারের উভায় পার্শে মাটি জমে আবাদি ফসল নষ্ট হয়ে যায় তাই চাহিদাপূরণের লক্ষে এই বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ করা হয়। এর ফলে রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের সাথে দূরত্ব কমে আসবে দক্ষিণ চট্টগ্রাম ও পর্যটননগরী কক্সবাজারের।

এই প্রোজেক্টগুলো অত্যন্ত গুরুপ্তপূর্ণ ছিল। যেহেতু ২০২২সালে হাতের নাগালেই পাচ্ছি তাই আমাদের নিকট ওগুলো ড্রিম মনে হয়। দেশ এগিয়ে যাচ্ছে এতে কোন সন্দেহ নেই। দেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশে পরিনত হচ্ছে। বাংলাদেশ এখন নিম্ন আয়ের দেশ থেকে বেরিয়ে এসেছে যা মধ্যম আয়ের দেশের তালিকা স্থান করে নিয়েছে। বিশ্বব্যাংক মধ্যম আয়ের দেশগুলোকে দুটি শ্রেণিতে ভাগ করেছে। একটি হচ্ছে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, অন্যটি উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশ। সেই হিসেবে আমাদের দেশ এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় থাকবে।

ড্রিম প্রোজেক্টগুলো আমাদের হৃদয়কে নাড়া দিচ্ছে। সেই সদর ঘাট যেতে হয়তো আর ৩/৪ ঘণ্টা লাগবে না। পদ্মা পাড়ি দেওয়ার জন্য আমাদের আর ওয়েট করতে হবে না। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লোকগুলো যেন জন্ত্রনা থেকে মুক্তি পাবে। রাজধানী ঢাকা ও বাণিজ্যিক নগরী চট্টগ্রামের সাথে পর্যটননগরী কক্সবাজারের দূরত্ব কমে আসবে। সবকিছু মেলে আমাদের বঙ্গবন্ধুর সোনার বাঙলা আগামী প্রজন্মের কাছে প্রধান মন্ত্রী শেখ হাসিনার কার্যকলাপ চির স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

লেখক- কলামিস্ট, সাহিত্যিক ও সম্পাদক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে