আসাদুজ্জামান পাভেল, ডিমলা প্রতিনিধি: ১৩ জুন সোমবার নীলফামারীর ডিমলায় উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ড ও মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ডের আয়োজনে প্রতারণা পূর্বক অপ্রাপ্ত বয়সে মুজিব নগর সরকারের কর্মচারী হিসাবে মুক্তিযোদ্ধা হওয়ার প্রতিবাদে বীরমুক্তিযোদ্ধাদের মানববন্ধন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারক লিপি প্রদান ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন।

সংবাদ সম্মেলনে ডিমলা উপজেলার সকল বীরমুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে বীরমুক্তিযোদ্ধা সামছুল হক, গেজেট নম্বর-৬৫৩ সাবেক উপজেলা কমান্ডার তার লিখিত বক্তব্যে বলেন, মোঃ আব্দুর রহমান, পিতা- মৃত হাজি নায়েব আলী, মাতা-আফিয়া খাতুন, সাং-পশ্চিম খড়িবাড়ী, উপজেলা- ডিমলা, জেলা-নীলফামারী।

ভোটার আইডি নম্বর ৭৩১১২৮৪৩১৬৫৮, জন্ম তারিখ ০২/০৯/১৯৫৭ ইং অনুযায়ী ২৫ মার্চ ১৯৭১ ইং সালে বয়স ছিলো ১৩ বছর ৬ মাস ২৫ দিন ।

এত অল্প বয়সে তিনি মুজিব নগর সরকারের কর্মচারী সেজে কুট কৌশল করে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটিকে উপক্ষো করে মুজিব নগর সরকারর কর্মচারী হিসাবে গেজেট ভূক্ত হয়।

তিনি কুমলাই নদী খনন প্রকল্পের ৬ লাখ ৩৪ হাজার ৮’শ ৬৩ টাকা (১১ মে.টন গম) আত্বসাৎ করায় তার বিরুদ্ধে মামলা হলে রংপুর জজ আদালতে ৩ বছর বিনাশ্রম কারাদন্ড ৬ লাখ ৩৫ হাজার টাকা জড়িমানা অনাদায়ে আরো ৬ মাসের কারাদন্ড প্রদান করা হয়।

সাজা প্রাপ্ত হয়ে তিনি তার বদলে অন্য এক ব্যক্তিকে আব্দুর রহমান সাজিয়ে রংপুর জেলা কারাগারে ঢুকিয়ে দিয়ে কর কমিশনার পদে চাকুরী নেন।

দীর্ঘদিন এভাবে পলাতক থেকে চাকুরী করা অবস্থায় ঘটনা ফাঁস হলে তিনি ০৮ফেব্রুয়ারী’১২ গ্রেফতার হন। পরের দিন ০৯ ফেব্রুয়ারী প্রথম আলো পত্রিকায় “সেই আব্দুর রহমান ধরা পড়লেন “দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রতারক আব্দুর রহমান অবশেষে গ্রেফতার” দৈনিক মায়া বাজার পত্রিকায় “অবশেষে প্রেফতার হলেন ৩ বছরের সাজা প্রাপ্ত দূর্নীতিবাজ এক প্রতারক” “দুর্নীতির তথ্য গোপন করে ৮ বছর সরকারের কর্মকর্তা পদে দায়িত্ব পালন ” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়।

মামলা নং-৪০৯/২০১৪, স্মারক নং-০০৮.০০৬.১৪-১৬১০ ০১নভেম্বর’১৫ ইং তারিখে সহকারী কমিশনার (রাজস্ব) আসমা মোজাম্মেল, সিলেট “আব্দুর রহমান কোন ধরনের সম্পত্তি ক্রয় বিক্রয় করতে না পারেন “শিরোনামে উপজেলা নির্বাহী অফিসার, ডিমলা বরাবরে একটি পত্র প্রেরণ করেন।

সিআর মামলা নং-৯০৪/২০১৩, ৪ নভেম্বর’১৫ আব্দুর রহমানকে ১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। স্মারক নং-৫৭/১৭ ৪ এপ্রিল’১০। দুনীতি দমন কমিশন (দুদক), ঢাকা, আব্দুর রহমান সাজা প্রাপ্ত আসামী চাকুরীতে থাকার কারণ ও তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে বিভাগীয় কমিশনার রংপুরকে নির্দেশ প্রদান করেন।

মুজিব নগর সরকারের কর্মচারী হিসাবে প্রকাশতি গেজেট হইতে তার নাম বাতিল ও মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা বন্ধ রাখিয়া তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য অভিযোগ দিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে পত্র প্রেরণ করেন উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষে সাবেক কমান্ডার, ডিমলা, সামছুল হক, যাহার স্মারক নং- বামুস/ডিম/নীল/অভিযোগ/২০২১ ২৮জুন’২১।

মুক্তিযোদ্ধাদের অভিযোগ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতা কমিটির সিন্ধান্ত ছাড়াই আব্দুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয় থেকে জেলা প্রশাসক, নীলফামারী বরাবরে ভাতা বরাদ্দ নিয়ে আসেন।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বীরমুক্তযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, গেজেট নম্বর-৬৬৮, বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই গেজেট নম্বর-৭০৩, বীরমুক্তিযোদ্ধা রোকুনুল হক, গেজেট নম্বর-৬৩১, লতিফর রহমান, গেজেট নম্বর-৫২৮, বীরমুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ, গেজেট নম্বর-৭৬৮, বীরমুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র সরকার, গেজেট নম্বর-৬০২, কোরবান আলী গেজেট নম্বর-৬৫৮, মোকবুল হোসেন গেজেট নম্বর-৬২৭ বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুল বারী , গেজেটে নম্বর-৩৮ সহ ৩৪ জন বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন এডিসি জেনারেল, নীলফামারী বরাবরে।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ডিমলা, বীরমুক্তিযোদ্ধা তবিবুল ইসলাম, গত ০৭ জুন’২২ তারিখে লিখিত বক্তব্যে বলেন, আব্দুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না।

এমন কি তিনি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহন করেন নাই। তিনি আরো বলেন, মোঃ আবুল খায়ের নামের উচ্চ পদস্ত কর্মকর্তা (কাষ্টম) তিনি মুজিব নগর তৎকালীন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাজ উদ্দিন আহম্মেদ অস্থায়ী সরকারের আওতায় ভূঁয়া মুজিব নগর কর্মকর্তা বানিয়ে চাকুরী দিয়ে দেন এবং এর সাথে অনেকেই জড়িত ছিলো।

উপজেলা সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সামছুল হক গেজেট নম্বর-৬৫৩ বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা ছিলো না এমনি কি তিনি মুজিব নগর সরকারের কর্মচারীও ছিলো না।

সেই সময়ে তার পরিবারের সকল সদস্য মুসলিমলীগ ও পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলাম দল করেছিলো। পরবর্তীতে বিএনপি এবং বর্তমানে বাংলাদেশ-ন্যাপ পার্টিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত।

তার বড়ভাই ইশারত আলী ছিলো রাজাকার। রাজাকার ইশারত আলী মুুক্তিযুদ্ধের সময় এলাকাবাসীর উপর অত্যাচার এবং বিভিন্ন কর্মকান্ডে এলাকাবাসী অতিষ্ঠ হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদেরকে অভিযোগ করায় তাকে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন মুক্তিযোদ্ধারা হত্যা করে। ১৯৭১ সালে আব্দুর রহমান ৭ম শ্রেণীর ছাত্র ছিলো। কোন ভাবেই আব্দুর রহমান মুজিব নগর সরকারের কর্মচারী ছিলো না।

বীরমুক্তিযোদ্ধা এম এ ফজলুল বারী গেজেট নম্বর-৩৮ তিনি তার লিখিত বক্তব্যে উল্লেখ করেন আব্দুর রহমান কোন ভাবেই মুক্তিযোদ্ধা হতে পারেন না। আব্দুর রহমান মুক্তিযুদ্ধে যায়নি এবং মুজিব নগরেও যায়নি বলে তিনি সাক্ষ্য প্রদান করেন। মানববন্ধনে বীরমুক্তিযোদ্ধার দাবী তুলে উচ্চ পর্যায়ে সরজমিনে তদন্ত সাপেক্ষে আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে