হাকিকুল ইসলাম খোকন, যুক্তরাষ্ট্র সিনিয়র প্রতিনিধিঃ যুদ্ধের জেরে রাশিয়ার জ্বালানির ওপর যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞা জারি ও তার সুযোগে বিপুল পরিমাণ মুনাফা করতে থাকা মার্কিন বিভিন্ন তেল-গ্যাস কোম্পানিকে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মঙ্গলবার (১ নভেম্বর) হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর সমালোচনা করেন বাইডেন।

এসব কোম্পানির মালিকদের উদ্দেশে প্রেসিডেন্ট বলেছেন, হয় যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের কাছে কম দামে জ্বালানি বিক্রি করতে হবে, নয়তো যুদ্ধের সুযোগে যে অতিরিক্ত মুনাফা তারা করেছে— তা থেকে উচ্চহারে কর দিতে হবে সরকারকে।

মঙ্গলবার হোয়াইট হাউসে এক সংবাদ সম্মেলনে মার্কিন তেল-গ্যাস কোম্পানিগুলোর সমালোচনা করে বাইডেন বলেন—একদিকে এসব কোম্পানি সীমাহীন মুনাফা লুটছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের হাতে নিত্যপ্রয়োজনীয় জ্বালানি কেনার মতো টাকা নেই।

‘যুক্তরাষ্ট্রে বিনিয়োগ করা এবং এই দেশের জনগণের পাশে থাকার কোনো তাগিদ এসব কোম্পানির কর্তৃপক্ষ বোধ করছে না। তাদের মনোযোগ কেবল যুদ্ধের সুযোগে মুনাফা বাড়ানোর দিকে। চলতি বছর এক একটি কোম্পানি মুনাফার পাহাড় গড়ে তুলেছে।’

‘আর এদিকে সাধারণ জনগণের হাতে গাড়ির জন্য জ্বালানি তেল কেনার টাকা নেই। যদি এসব কোম্পানি তাদের মুনাফার কিছু অংশ জনগণের জন্য ব্যয় করত, তাহলে আজ যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি লিটার গ্যাসোলিনের দাম পড়ত মাত্র ৫০ সেন্ট।’

মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘এই মুনাফা যে যুদ্ধের সুযোগে এসেছে— এটা স্বীকার করে নিয়ে এসব কোম্পানির উচিত— যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যেন কম দামে জ্বালানি কিনতে পারে, সেজন্য পদক্ষেপ নেওয়া। অর্থাৎ, দেশের তেল-গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগ করা।’

‘যদি তারা বিনিয়োগ না করে, সেক্ষেত্রে সরকারকে বাড়তি মুনাফা থেকে উচ্চহারে কর দিতে হবে তাদের। সেই সঙ্গে অন্যান্য বিধিনিষেধও যেন তাদের ওপর জারি করা হয়, সেজন্য আমি নিজে কংগ্রেস (যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও তার জেরে রাশিয়ার ওপর জারি করা বিভিন্ন অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞার প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতি দেখা দিয়েছে। খাদ্য, ওষুধসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ পর্যন্ত, আর যাবতীয় জ্বালানি পণ্যের মূল্য হয়েছে প্রায় দ্বিগুণ।

প্রসঙ্গত, যুদ্ধের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ইউক্রেনকে শত শত কোটি ডলারের সমরাস্ত্র ও আর্থিক সহায়তাও দিয়েছে বাইডেন প্রশাসন।

কংগ্রেসের বিরোধী দল রিপাবলিকান পার্টি প্রথম দিকে ইউক্রেনকে সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারটি সমর্থন করলেও বর্তমানে এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। এই দলের জনপ্রতিনিধিদের ভাষ্য, যুক্তরাষ্ট্রে মূল্যস্ফীতি অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছে যাওয়ার আগেই ইউক্রেনে সহায়তা বন্ধ করা প্রয়োজন।

মূল্যস্ফীতি ইস্যুতে সম্প্রতি মার্কিন ভোটারদের কাছে জনপ্রিয়তাও খানিকটা কমেছে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টির।তিনি আরও বলেন, এই মুনাফা যে যুদ্ধের সুযোগে এসেছে এটা স্বীকার করে নিয়ে এসব কোম্পানির উচিত যুক্তরাষ্ট্রের জনগণ যেন কম দামে জ্বালানি কিনতে পারে, সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া। অর্থাৎ, দেশের তেল-গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে বিনিয়োগ করা।

যদি তারা বিনিয়োগ না করে, সেক্ষেত্রে সরকারকে বাড়তি মুনাফা থেকে উচ্চহারে কর দিতে হবে তাদের। সেই সঙ্গে অন্যান্য বিধিনিষেধও যেন তাদের ওপর জারি করা হয়, সেজন্য আমি নিজে কংগ্রেস (যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট) সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করব।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে