সিরাজগঞ্জ থেকে,মারুফ সরকারঃ যমুনা নদীর ক্রমাগত ভাঙনে সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলায় আবাদি জমি, বসত-ভিটার পাশাপাশি গত ৪ বছরে প্রায় ৭৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এর মধ্যে চলতি বর্ষা মৌসুমে ৪ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়েছে। যে কারনে এসব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা বিস্তারে বিপর্যয় নামায় ঝড়ে পড়ছে প্রায় দেড় হাজার শিক্ষার্থী। আর ভেঙ্গে যাওয়া এই স্কুল গুলোর অধিকাংশের ঠাঁই হয়েছে বাড়ির উঠান অথবা ওয়াবদাবাঁধে খোলা আকাশের নিচে। এ কারনে রোধ-বৃষ্টিতে কষ্ট করে কোমল মতি শিক্ষার্থীদের সেখানেই ক্লাস করতে হচ্ছে। এছাড়া নদী ভাঙন অব্যাহত থাকলে আরো ৫-৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীতে বিলীন হবার আশংঙ্কা রয়েছে।

শিক্ষা অফিস ও স্থানীয়রা জানায়, এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই যমুনা নদী ভয়ংকার মূর্তি ধারন করে ক্রমাগত ভাবে বসত-বাড়ি, ফসলি জমি, দোকান পাট, বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সরকারী-বেসরকারী স্থাপনাসহ পশ্চিম শৌলজানা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাষপয়েল সাথিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউসুফশাহী সলঙ্গী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও মিস্ত্রিগাতী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এছাড়া গত চার বছরে হিজুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর ছলিমাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সম্ভুদিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া উত্তর পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চৌবাড়িয়া পূর্ব পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, অ্যয়াজি ধুপুলীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পয়লা পূর্বপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথরাইল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বৃদাশুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুরিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বৃদাশুরিয়া পশ্চিম পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাটাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়,

দত্তকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাথরাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মধ্য শিমুলিয়া পূর্বপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, থাক মধ্য শিমুলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফানিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাফানিয়া-২ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, করুয়াজানি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর বোয়ালকান্দি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, খাষদেলদার পুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও চৌহালী মহিলা ফাজিল মাদরাসা, এসবিএম কলেজ, চৌবাড়িয়া কাগিগরি কলেজ, মুঞ্জুর কাদের কারিগরি কলেজ, দত্তকান্দি কেএম উচ্চ বিদ্যালয়, হাটাইল নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আর আর কে দাখিল মাদরাসা, পয়লা দাখিল মাদরাসা, পয়লা উচ্চ বিদ্যালয়, খাষপুখরিয়া বিএম উচ্চ বিদ্যালয়, চৌহালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়, খাষকাউলিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় সহ প্রায় ৭৫ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বসতি সহ প্রায় ২০ হাজার একর আবাদি জমি যমুনা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। আরো ৫-৭টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বর্তমানে নদী ভাঙনের মুখে রয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ঠাঁই হয়েছে কারো বাড়ির উঠান, খোলা মাঠে অথবা ওয়াবদাবাঁধে। এ কারনে ঝড়ে গেছে অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী।

আবার কোন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেঙ্গে যাওয়া ঘরের চালের টিন দিয়ে কোন রকম ছাপড়া তুলে চলছে পাঠদান। এতে রোধ-বৃষ্টি উপক্ষা করে গাদাগাদি করে ক্লাস করতে হচ্ছে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের। বুধবার বিকেলে সরেজমিন মিস্ত্রিগাতী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দেখা গেছে, শিক্ষার্থীদের সুন্দর পরিবেশে পাঠদানের জন্য ২০০৯-২০১০ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি) বরাদ্দকৃত ৩৮ লক্ষ টাকা ব্যায়ে নির্মীত একাডেমিক ভবন যমুনার ভাঙনে বিধ্বস্ত হয়ে পড়ে আছে। ওই বিদ্যালয়ের ্র প্রায় দুইশত শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। তারা পাশের একটি বাড়িতে কোন রকম খুপড়ী ঘর তুলে পাঠদান অব্যাহত রেখেছে বলে স্কুলের প্রধানা শিক্ষক নুরুল আলম জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, যমুনায় বিলীন হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলোর ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে অন্যের বাড়ি অথবা খোলাস্থানে ঘড় তুলে পাঠদানের ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য সরকারী ভাবে দ্রুত ভবন নির্মানের দাবি জানাচ্ছি।এব্যাপারে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদেকুর রহমান বলেন, যমুনার ভাঙনের বিষয়টি উর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। আর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে শিক্ষা খাতকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিয়ে পাঠদানের বিষয়টি সার্বক্ষনিক তদারকি করা হচ্ছে। এছাড়া নতুন ভবন নির্মানের জন্য বরাদ্দ চেয়ে প্রস্তবনা পাঠানো হয়েছে। নতুন ভবন নির্মান হলে দূর্ভোগ অনেকটাই লাগব হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে