আজিজ খান, গোলাপগঞ্জ থেকে : সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্স নানা সমস্যায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে। সরকার শতভাগ স্বা¯’্য সেবা নিশ্চিত করতে উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্সটিকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করলেও চিকিৎসকসহ জনবলের অভাবে রোগীদের স্বা¯’্যসেবা ব্যাহত হ”েছ। হাসপাতালে আসা রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খেতে হ”েছ চিকিৎসকদের। এ উপজেলায় চিকিৎসা সেবা উন্নত থাকায় পাশ^বর্তী বিয়ানী বাজার ও জকিগঞ্জ উপজেলার অনেক লোক আসে চিকিৎসা সেবা নিতে। এদিকে হাসপাতালে এক্সরে মেশিন থাকলেও টেকনোলজিষ্ট অভাবে দীর্ঘদিন থেকে পরিত্যক্ত অব¯’ায় বন্ধ রয়েছে। এক্সরে কক্ষটিও স্টোর রুমে পরিণত হয়েছে। এতে অনেক গরীব ও অসহায় রোগীরা এক্সরে করতে এসে টেকনোলজিষ্ট না থাকায় ফিরে যা”েছ। ফিরে যাওয়া অনেক রোগীর মধ্যে ধার দেনা করে কেউ কেউ প্রাইভেট এক্সরে করলেও অনেক রোগী সময়মত তা করাতে পারছেনা। জানা যায়, গত কয়েক মাস আগে এক্সরের টেকনোলজিষ্ট অন্যত্র বদলী হয়ে যাওয়ার পর আর এ পদে শূন্য রয়েছে। অনেক সময় দুর্ঘটনা কবলিত জরুরী রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নিতে আসলে তাদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাবে অনেক সময় রোগীদের সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বিশেষ করে অসহায় গরীব রোগীরা বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিতে গিয়ে অর্থ সংকটের মুখোমুখি হতে হয়।

এমন পরি¯ি’তির জন্য চিকৎসক ও জনবল সংকটকে দায়ী করছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। জনস্বার্থে অনতিবিলম্বে হাসপাতালের সমস্যাগুলো সমাধানে সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।

সরজমিনে দেখা যায়, মেডিসিন সার্জারী, এ্যানেসথেসিয়া, শিশু, চক্ষু, কার্ডিওলজি, অর্থো, ই.এন.টি, চর্ম ও যৌনসহ এসব বিভাগের ৯জন জুনিয়র কনসালটেন্টের পদ শূন্য ও সহকারী সার্জন ৪টি পদের মধ্যে ২টি শূন্য, ডেন্টাল সার্জনসহ মোট ২১ টি পদের মধ্যে ১২টি পদ শূন্য রয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট বিভাগের (এস.আই, ইপি আই, ল্যাবরেটরী, ফার্মাশিষ্ট, রেডিও গ্রাফার, ডেন্টাল, ফিজিও) ১০টি পদের মধ্যে ৮টি শূন্য। তাছাড়া সহকারী নার্স, প্রধান সহকারী, কার্ডিওগ্রাফার (এক্সরে), কম্পাউন্ডার, স্বা¯’্য সজকারী পদ গুলো রয়েছে শূন্য।

দ্বিতীয় তলার অন্যান্য ডাক্তারের চেম্বার যথাক্রমে মেডিসিন সার্জারী, এ্যানেসথেসিয়া, শিশু, চক্ষু, কার্ডিওলজি, অর্থো, ই.এন.টি, চর্ম ও যৌন বিভাগ ফাঁকা পড়ে আছে চিকিৎসকের অভাবে। তবে এসব বিভাগের রোগীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

অপরদিকে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বা¯’্য সেবা নিশ্চিত করতে গোলাপগঞ্জের গোলাপগঞ্জ, ঢাকাদক্ষিণ ও ভাদেশ^র ইউনিয়নে তিনটি সাব সেন্টার রয়েছে। এই তিনটি সাব সেন্টারের মেডিকেল অফিসার ও উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার নেই। এতে এসব ইউনিয়নে চিকিৎসা সেবা মারাত্বক বিঘিœত হ”েছ। এছাড়াও ঢাকাদক্ষিণ ও ভাদেশ^র ইউনিয়নে দুইটি সাব সেন্টার ফামাশিষ্ট ছাড়াই চলছে চিকিৎসা সেবা।

তাছাড়া ঢাকাদক্ষিণ ইউনিয়ন সাব সেন্টারে কর্মরত মেডিকেল অফিসার বর্তমানে ডেপুটেশনে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে রয়েছেন। কিš’ তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্স থেকে বেতন-ভাতা উত্তোলন করে থাকেন।

ঢাকাদক্ষিণ বাজারের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও ঢাকাদক্ষিণ সরকারী কলেজের সাবেক প্রভাষক(অর্থনীতি) সালমান আহমদ জানান, চিকিৎসা সেবার মান ভালো করতে হলে লোকবল সংকট দূর করতে হবে। তিনি উপজেলাবাসীর চিকিৎসা সেবার একমাত্র আশ্রয়¯’ল উপজেলা স্বা¯’্য কমপ্লেক্সের সমস্যা সমাধানে কতৃর্পক্ষের দৃষ্টি আকষর্ণ করেন।

হাসপাতালে আরএমও মেডিক্যাল অফিসার ডা. শাহিন আহমদ জানান, প্রতিদিন সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত প্রায় চার শতাধিক রোগীকে আউটডোরে চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে মারাত্মক হিমশিম খেতে হয়। এছাড়া লাইনে অনেক রোগীদের দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। তবে প্রায়ই ইমারজেন্সি বিভাগের রোগীদেরকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার করা হয়ে থাকে বলে অনেক রোগীরা জানান। আবার মাঝে মধ্যে ২/৪ জনকে চিকিৎসাও দেয়া হয় বলে অনেকে জানায়।

উপজেলা স্বা¯’্য পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা (টিএইচও) ডা.মনিসর চৌধুরী বলেন, পর্যাপ্ত চিকিৎসক না থাকায় মানুষের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হ”েছ। শূন্য পদে ডাক্তার বাড়ানোর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, কিš’ চিকিৎসক বাড়ানো হ”েছ না। তবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আশ্বাস প্রদান করেছেন খুব শীঘ্রই শুন্য পদে ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হবে।

এ ব্যাপারে সিলেট জেলা সিভিল সাজর্ন ডাক্তার প্রেমানন্দ মন্ডল জানান, খুব শিগগিরই গোলাপগঞ্জ হাসপাতালের মেডিকেল টেকনোলজিষ্ট বিভাগের শূন্য পদগুলোতে ডাক্তার নিয়োগ দেয়া হবে। বাকি পদগুলোতে সরকার যখনই নিয়োগ দিবে তখনই পূরণ করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে