ডেস্ক রিপোর্ট : জেলার পটিয়া, বোয়ালখালী ও চন্দনাইশ উপজেলার বিস্তীর্ণ পাহাড়ি জমিতে এবার ‘কাগজী লেবু’র বাম্পার ফলন হয়েছে। ভোক্তাদের কাছে জনপ্রিয় এই লেবু এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ এ লেবুর চাহিদা বিদেশেও দিনদিন বাড়ছে। তবে পুষ্ট, অপক্ষোকৃত বড় ও দেখতে সুন্দর- এমন লেবুর রপ্তানি সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। তাই রপ্তানিযোগ্য মানসম্পন্ন লেবু উৎপাদনের জন্য সরকারের কাছে ‘বিশেষায়িত অঞ্চল’ প্রতিষ্ঠার দাবি জানিয়েছেন চাষিরা।

বর্ষার শুরুতে প্রচুর বৃষ্টিপাত হওয়ায় লেবুর ভালো ফলন হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। অন্যদিকে লেবুর নায্য দাম পেয়ে কৃষকেরাও মহাখুশি। কয়েকদিন আগে শেষ হওয়া রমজান, ঈদ- পাশাপাশি আবহাওয়ার উষ্ণতার কারণে লেবুর চাহিদা থাকায় চাষিও খুচরা বিক্রেতারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এছাড়া পুষ্টি বিষয়ে সাধারণ মানুষের সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় কমদামে ‘ভিটামিন পেতে লেবুর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বলে জানালেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ রহিম। তিনি বলেন, ‘মানুষ এখন শরীর সুস্থ রাখার বিষয়ে আগের তুলনায় অনেক সচেতন। লেবুতে গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন সিতে ভরপুর। এখন বাজারে লেবুর দাম বেশ ভালই। তারপরও মানুষ এখন ডজন-ডজন লেবু কেনে। এটি ভালো সাইন বলে আমি মনে করি।’

তিন উপজেলার প্রায় ২৫ হাজার একর পাহাড়ি জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ‘কাগজী লেবু’ নামের বিশেষ জাতের এ লেবুর চাষ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এছাড়া পাতি, এলাচি, বাতাবি ও সিডলেস- এ চার জাতের লেবুরও চাষ হয়। চৈত্র-বৈশাখ মাসে লেবুর ফুল আসে। আষাঢ়-শ্রাবণে লেবুর ভরা মৌসুম। চাষিও পাইকারী ব্যবসায়ী ছাড়াও ৭-৮ হাজার খুচরা ব্যবসায়ী লেবু বিপননের সাথে জড়িত। সবমিলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের লেবু চাষে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে।

আশির দশকে দক্ষিণ চট্টগ্রামের পাহাড়ি এলাকায় প্রথম কাগজী লেবু চাষ শুরু হয়। ধীরে ধীরে পটিয়া উপজেলার খরনা, হাইদগাঁও, কেলিশহর, চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর, হাশিমপুর, বোয়ালখালী উপজেলার করলডেঙ্গা, জৈষ্ঠ্যপুরা ও কানুনগোপাড়ার পাহাড়ি এলাকার লাভজনক লেবুচাষ সম্প্রসারণ হতে থাকে। বাণিজ্যিকভাবে লেবু উৎপাদনে সাফল্যের কারণে উল্লিখিত গ্রামগুলোকে লেবু গ্রামও বলে থাকেন অনেকে। লেবু মৌসুমে পটিয়ার কমলমুন্সির হাট এবং বোয়ালখালী-চন্দনাইশে পাইকারি লেবু বিক্রির হাট বসে।
পটিয়ার খরনার লেবু চাষি মোহাম্মদ আলী জানান, ‘পাহাড়ি উর্বর ভূমিতে ভালো ফলন হওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে লেবু চাষের প্রতি অনেকেই ঝুঁকে পড়েছেন।’ তিনি পরিত্যক্ত পাহাড়ি ভূমি চাষিদের লিজ দিয়ে লেবু চাষের আওতায় নিয়ে আসার জন্য সরকারের কাছে আহবান জানান। তাহলেই বিশেষায়িত জমি তৈরি করে পুষ্ট ও ভালো মানের রপ্তানিযোগ্য কাগজী লেবু উৎপাদন ও রপ্তানি করা সম্ভব হবে বলে মনে করেন ওই চাষি।

এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা রঘুনাথ নাহা জানান, ‘শুধু পটিয়ার ১০ হাজার একর পাহাড়ি ভূমিতে লেবুর চাষ হয়ে থাকে। সবচেয়ে ইতিবাচক বিষয় হলো- এ এলাকার লেবু দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে।’ তিনি বলেন ‘দেশের ঐতিহ্যবাহী কাগজী লেবুর সবচেয়ে বেশি চাষ হয় পটিয়া উপজেলার পাহাড়ি অঞ্চলে। এ ঐতিহ্য ধরে রাখতে লেবু বাগান রোগমুক্ত রাখতে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।’

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে