ডেস্ক রিপোর্ট : কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া মাঠে কড়া নিরাপত্তার মধ্যদিয়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে এবার অনুষ্ঠিত হলো দেশের সবচেয়ে বৃহত্তম ঈদ জামাত।
এতে লক্ষাধিক মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছেন বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
গতবছর শোলাকিয়ার এ ঈদ জামাতের আগে জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছিল। এতে জঙ্গিসহ একাধিক হতাহতের ঘটনা ঘটেছিল। তবে পরে ঈদ জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
প্রতিবছরের মতো এবারও সকাল ১০টায় শুরু হওয়া ঈদুল ফিতরের ১৯০তম এ জামাতে ইমামতি করেন ইসলাহুল মুসলিমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।
নামাজ শেষে মুসলিম উম্মাহর শান্তিু ও সমৃদ্ধি কামনা করে মোনাজাত করা হয়। নি¤œ আয়ের দেশ থেকে নি¤œ-মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হয় আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করা হয়।
মোনাজাতের আগে ফরিদ উদ্দীন মাসউদ বলেন, এদেশের মানুষ কোন চরমপন্থা কোনদিন গ্রহণ করেননি। এক সময় বামপন্থার নামে এদেশে সন্ত্রাসী কর্মকা- হয়েছে। এখন ধর্মের নামে হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশের শান্তি প্রিয় মানুষ এগুলো গ্রহণ করেনি। কোনদিন গ্রহণ করবেও না।
মুসল্লিদের উদ্দেশে আরো বক্তব্য রাখেন জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন খান এবং কিশোরগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট এম.এ আফজল।
সব ভয়কে জয় করে ভোর থেকেই মুসল্লিরা শোলাকিয়া মাঠে যেতে থাকে। কেউ গাড়িতে চড়ে কেউবা পায়ে হেঁটে জামাতে অংশ নিতে আসেন। সকাল নয়টার দিকেই পুরো মাঠ ভরে যায়। তবে কড়াকড়ি নিরাপত্তা ও মোবাইল ফোন নিয়ে মাঠে প্রবেশে পুলিশের নিষেধাজ্ঞা থাকায় অনেক মুসল্লিকে ফিরে যেতেও দেখা গেছে।
গতবছরের জঙ্গি হামলার পরিপ্রেক্ষিতে এবার শোলাকিয়ায় নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নিরাপত্তাকে প্রাধন্য দিয়ে সাজানো হয় পুরো আয়োজন। পাঁচ প্লাটুন বিজিবি, বিপুল সংখ্যক পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার সদস্যের সমন্বয়ে নিচ্ছিদ্র ও কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের পাশাপাশি মাঠে সাদা পোশাকে নজরদারি করে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা।
এছাড়া শহরসহ মাঠের প্রবেশ পথগুলোতে বসানো হয় সিসি ক্যামেরা ও ওয়াচ টাওয়ার। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ আবার তল্লাশি করা হয়। শোলাকিয়া মাঠ ও শহরের যত অলিগলি আছে, সবখানে বসানো হয় নিরাপত্তা চৌকি।
ধর্মীয় এ বৃহত্তম উৎসব উপলক্ষে শহরের মোড়ে মোড়ে নির্মাণ করা হয় শুভেচ্ছা তোরণ। রাস্তার দু’পাশে টাঙ্গানো হয় রঙ-বেরঙের পতাকা ও ব্যানার। সব মিলিয়ে বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা ও ধর্মীয় ভাবগম্ভীর্যপূর্ণ পরিবেশে এবার শোলাকিয়ায় উদযাপিত হচ্ছে ঈদুল ফিতর।
সকালে দুটি বিশেষ ট্রেন ভৈরব ও ময়মনসিংহ থেকে বিপুল সংখ্যক মুসল্লি নিয়ে কিশোরগঞ্জে আসে। রেওয়াজ অনুযায়ী জামাত শুরুর আগে শর্টগানের ৬টি ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়। জামাত শুরুর ৫ মিনিট আগে ৩টি, ৩ মিনিট আগে ২টি এবং ১ মিনিট আগে ১টি গুলি ছুড়ে নামাজের জন্য মুসল্লিদের সঙ্কেত দেওয়া হয়।
জনশ্রতি আছে, ১৮২৮ সালে এই মাঠে ঈদের জামাতে সোয়া লাখ মুসল্লি এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।
সাধারণ মুসল্লিদের বিশ্বাস বেশি লোক একসাথে নামাজ পড়ে প্রার্থনা করলে আল্লাহ তা কবুল করেন। সে কারণে বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন শোলাকিয়ায় নামাজ আদায় করতে আসেন।

 

B/S/S/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে