ডেস্ক রিপোর্ট : বাংলাদেশ জাতীয় দলের একজন ক্রিকেটার মোহাম্মদ শহীদের বিরুদ্ধে নির্যাতন এবং বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িত থাকার অভিযোগ এনেছেন তার স্ত্রী ফারজানা আক্তার।রবিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড বা বিসিবির সভাপতির কাছে তিনি এ নিয়ে লিখিতভাবে অভিযোগ করেছেন। তবে ক্রিকেটার শহীদের পরিবার থেকে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে স্ত্রীর বিরুদ্ধেই পাল্টা অভিযোগ করা হয়েছে।এ নিয়ে গত প্রায় দু’বছরের মধ্যে জাতীয় দলের মোট চারজন ক্রিকেটার দাম্পত্য কলহসহ নানা ধরনের অভিযোগের মুখে পড়লেন।মুন্সীগঞ্জের মেয়ে ফারজানা আক্তারের বক্তব্য অনুযায়ী ছয় বছর আগে তার সঙ্গে বিয়ে হয় বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের পেসার মোহাম্মদ শহীদের।

সে সময় অবশ্য জাতীয় দলে খেলতেন না তিনি। তখন সংসারে তেমন কোনও টানাপোড়েনও ছিল না।কিন্তু ২০১৫ সালে জাতীয় দলে অভিষেকের পর থেকেই শহীদের আচরণে পরিবর্তন আসতে শুরু করে। দ্বিতীয় সন্তান জন্মের আগে তিনি তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতনও করেছিলেন বলে ফারজানা বলছেন।এমন কী ঐ সময় শহীদ ফোনে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন নারীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়েন বলে ফারজানার অভিযোগ।তার কথায়, “যখন জাতীয় দলে গেছে, তখন থেকে ও অন্য দিকে অন্য মেয়ের দিকে ‘ই’ হতে শুরু করে। আমার ছেলে আরাফ যখন হয়, কিছু বলে নাই। কিন্তু মেয়ে যখন পেটে, তখন অনেক চেষ্টা করছে মেয়েটা নষ্ট করে ফেলতে। অনেক মারধর করছে।”

“এখন ও ছেলেকে ওর কাছে রেখে আমাকে আর মেয়েকে পাঠিয়ে দিতে চায়। আমাদের দুই লাখ টাকা কাবিন হইছিলো, এখন বলে পাঁচ লাখ বা দশ লাখ টাকা দেব, কিন্তু আমার সঙ্গে থাকবে না। আমি এসব অভিযোগই বিসিবিকে জানিয়েছি।”ফারজানা আরও অভিযোগ করেছেন, গত প্রায় দুই বছর ধরে তিনি স্বামী ও শ্বশুর শ্বাশুড়ির সঙ্গে বাস করলেও শহীদ তার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক রাখছিলেন না।এমন পরিস্থিতিতে পারিবারিকভাবে বিষয়টি মীমাংসা করার চেষ্টা চালানো হলেও তাতে শহীদ সাড়া দিচ্ছিলেন না বলে অভিযোগ করেছেন তার স্ত্রী। শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখে তিনি বিসিবির কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন।”পরিবার থেকে বসতে চাইলে, ও বলছে ওর এক ভাই বিদেশ থাকে, সে আসলে বসবে। আমার ভাই বলছে নিয়ে যেতে কিন্তু শহীদ আসবে না বলে দিছে।”বিষয়টি নিয়ে মোহাম্মদ শহীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তিনি এর কোনও জবাব দেননি। এক পর্যায়ে তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে, শহীদের মা ডলি বেগম নিজের ছেলেকে নির্দোষ বলে দাবি করেন।

তিনি ফারজানার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তোলেন। এবং তার ছেলেকে তার স্ত্রী মারধর করেছে বলেও তিনি অভিযোগ করেন।ডলি বেগম জানান, “আমার ছেলে অস্ট্রেলিয়া ছিল, সে কোনও অত্যাচার করে নাই। বউকে আমি বারডেমে নিয়ে সিজার করাইছি। আর বউ মিলেমিশে থাকে না, ঝগড়া কাইজা করে। জমিদারের লাহান বারোটা বাজে ঘুমের থেকে উঠে।”ছেলে তার বউকে এখন নিজের কাছে নিয়ে আসছে না কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “আমার ছেলেরে বউ মারছে, সেই দু:খে ছেলে যায় না।”শহীদ ও ফারজানা দম্পতির দুটি সন্তান। একজনের বয়স মাত্র ১১ মাস, অপরজনের বয়স আড়াই বছর।এদিকে, ফারজানার অভিযোগের বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হননি বিসিবির কোন কর্মকর্তা। তবে, ফারজানা জানিয়েছেন বিসিবি তাকে আশ্বাস দিয়েছে এই সমস্যার একটি সমাধান করা হবে।

গত দুই বছরের মধ্যে এই নিয়ে জাতীয় দলের অন্তত চারজন ক্রিকেটারের বিরুদ্ধে নানা ধরনের অভিযোগ উঠল।২০১৪ সালের ডিসেম্বরে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন এবং ধর্ষণের অভিযোগে চলচ্চিত্র অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপী নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ক্রিকেটার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা করেন।২০১৫ সালেই গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন আরেক ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন।এছাড়া এ বছরের শুরুতে জাতীয় দলের আরেক খেলোয়াড় আরাফাত সানির বান্ধবী তার বিরুদ্ধে তথ্য প্রযুক্তি আইনে মামলা করলে গ্রেপ্তার হন সানি।নাম প্রকাশ না করে বিসিবির একজন কর্মকর্তা বলছিলেন, একের পর এক এ ধরণের ঘটনায় বিসিবি বিব্রত। তবে যে সব ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেসব ঘটনায় বিসিবি অভিযুক্ত খেলোয়াড়ের পক্ষ নেয়নি।বরং আইনি ব্যবস্থার প্রতি বোর্ড শ্রদ্ধা দেখিয়েছে উল্লেখ করে ঐ কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ সত্যি হলে কোন খেলোয়াড়ই দায়মুক্তি পাবেন না।

বি/বি/সি/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে