সিরাজগঞ্জ থেকে,মারুফ সরকারঃছয় ভাই-বোনের মধ্যে সভাই ছিল প্রতিবন্ধী। বাড়ির উঠানে এরা প্রলাপ বকছেন। নির্মম এ দৃশ্য দেখলে সবারই দু’চোখ গড়িয়ে আসে অশ্রু। এদের বাবা মজিবুর রহমান মারা গেছেন বছর চারেক আগে। বাবার মৃত্যুর পর গোটা পরিবারের ধকল সামলাতে হয় একমাত্র মা বলি খাতুনকে। এদের সবারই বয়স ৩০ থেকে ৪০ বছরের মধ্যে। সিরাজগঞ্জের কাজিপুর উপজেলার দুর্গম চরাঞ্চলের চরগিরিশ ইউনিয়নের অবহেলিত একটি গ্রামের নাম চরডগলাশ। এই গ্রামের একই পরিবারের ৬ ভাই-বোনের মধ্যে সভাই মানসিক, শারীরিক ও দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। এদের মধ্যে ৪ ভাই ও ২ বোন। এক বোন রোগে ভুগে এক বছর আগে মারা গেছে। ছোট ভাই ভোলা (৩০) রোগে ভুগছে।

তাকে পায়ে রশি দিয়ে বেঁধে রাখতে হয়। ইসমাইল হোসেন, সাইফুল ইসলাম শাহাদৎ মানসিকভাবে এখন সুস্থ নন। তাদের নিকট দু’দগু দাঁড়ালে মনে হবে মানুষের এই হাল কেন? কেন এই কষ্ট। নিজেদের সম্পর্কে কিছুই বোঝেন না তারা। স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারে না তারা। তাদের দেখে মনে হয় এরা ভিন্ন জগতের বাসিন্দা। বর্তমানে বৃদ্ধা মাও অসুস্থ। তিনি সংসার চালন। মা বলি খাতুন এ প্রতিবেদককে বলেছেন, জন্মে থেকে সভাই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। তিন বছর আগে ম্বামী মারা গেছে। আমি প্রতিবন্ধী সন্তানদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন। এসব বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি চোখের অশ্রু মুছলেন কয়েকবার। বললেন, জন্মগতভাবেই এরা প্রতিবন্ধী। এদের সুস্থ করার জন্য চেষ্টার কমতি করেননি মা-বাবা।

এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছি। যখন যে কবিরাজ যা করতে বলে তাই করেছি। উন্নত চিকিৎসার জন্য ডাক্তার দেখানোর মতো অর্থ আমাদের নেই। আমার স্বামী সামান্য জমি চাষবাদ করে আমাদের সবার মুখের ভাত জোগাতে। প্রতিবন্ধী ছেলে-মেয়েদের সামলাতে বলি খাতুন দিন কাটে কতোটা কষ্টে তার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরো জানান, সরকারিভাবে গত বছর থেকে একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ভাতার দেয়। মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন এনজিও ওদের ছবি তুলে নিয়ে যায়, সহযোগিতার আশ্বাস দেয়, পরে কারোরই খোঁজ থাকে না। প্রতিবেশীদের অনেকেই আমাদের প্রতি সহানুভূতি দেখায়।

কাদা-মাটি মেখে, সারাদিন কতোটা কষ্টে ওদের দিন কাটে তা ভাষায় বর্ণনা করা সত্যিই কঠিন। সন্ধ্যা নেমে আসলে ওরা ঘরে উঠে বসে। রাতের খাবার মুখে তুলে খাইয়ে দিতে হয় কারো কারো। রাতে ঘুরের সময় শুরু করে চিৎকার চেঁচামেচি। বৃদ্ধা মাকে ওদের সামলাতে নির্মুঘ রাত কাটাতে হয়। গ্রামের জাহিদ হোসেন তালুকদার ও রবিউল ইসলামসহ অনেকেই বললেন, প্রতিবন্ধীদের পাশে দাঁড়ালে ওরা সুস্থ হয়ে না উঠলেও জীবনের আর যে কটা দিন বেঁচে থাকবে সে ক’টা দিনতো তারা স্বস্তি পাবে। প্রতিবন্ধীদের দুঃখ-দুর্দশার সব কথা লিখে সবাইকে জানানো সত্যিই কঠিন।

গ্রামের মসজিদের পাশে ওদের বাড়ী। অতি সম্প্রতি তাদের বাড়ীতে গেলে দেখা যায়, বাড়ীর উঠানে কোনো সুস্থ মানুষ নেই। একটি ঘরের সামনে রশি দিয়ে বাঁধা একজন। এরপর একে একে একটি ঝুপড়ি ঘর থেকে বের হয়ে আসল অন্যরা। সবারই চোখের দিকে তাকালে মনে হয় ওরা কি যেন বোঝাতে চাইছে। কি আহবান লুকিয়ে আছে ওই প্রতিবন্ধী ৫ ভাই-বোনের চোখে বুঝে ওঠা অসম্ভব, তবে তারা যে সবার সহযোগিতা চাইছে তা অনুমান করা খুব সহজ। আসুন আমরা ওই পরিবারের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়াই, আবেদার কষ্ট ভাগাভাগি করে নিই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে