morai-rased1

বিডি নীয়ালা নিউজ(২১ই মে১৬)-ডেস্ক রিপোর্টঃ কবি চন্দ্রশিলা ছন্দা এর ক‌বিতার বই
“ ভালোবাসার দ্রোহে
ভালোবাসার মোহে”
বাস্তবতাকে হার মানায় বিনিদ্রে ।

চন্দ্রশিলা ছন্দা, একজন প্রতিভাবান কবি, সাহিত্যের সব শাখায় বিচরণ করলেও মূলত কবিতাই লেখে যাচ্ছেন সমান তালে । মানুষের আবেগ অনুভূতি ,স্বপ্ন,ইচ্ছা কল্পণা, রহস্যস্বপ্ন ইত্যাদি ব্যক্তি মানসের জীবন ব্যপ্তি প্রবণতার অংশ, এগুলোর সঙ্গে যখন শিল্পমন্ডিত সৃষ্টি হয়ে কোন ব্যঞ্জনাময় বাক্য গড়ে উঠে তখন একটি কবিতার জম্ম হয় । আবেগ আসে কখনো হরষের কারণে, কখনোবা ব্যদনার কারণে। কবি চন্দ্রশিলা ছন্দার, কবিতা পড়লেই প্রথমে যে সত্যটি দৃষ্টি গোচর হয় সেটি হলো শিল্পের প্রতি তার বিশ্বস্ততা । বলা যায়, তিনি শিল্পের মধ্যে পুরোপুরি সমর্পিত। কবিতার প্রতি অগাত ভালোবাসা ।
“ভালোবাসার দ্রোহে, ভালোবাসার মোহে’’ এটি কবি দ্বিতীয় কবিতার বই ।বইয়ের কবিতায় উঠে এসেছে মানবীয় প্রেম, ভালোবাসার রুপ-রস, সমাজের কঠিন ও রুঢ় বিষয় এবং রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামতে, বাস্তবতায়, নারী বৈশম্যর বর্ণিল রুপ ।
কবির হদয়ে বিনিদ্র অনুভূতি,অভিঞ্জতা, মানস চিন্তা, চেতনাকে প্রকাশ করেন চিত্রপট নির্মানের মধ্য দিয়ে ,তার কবিতা পড়লে পাঠকের মনে চমক দেয়, স্নায়ুতে ক্রিয়া করে, আন্দো‌লিত করে, ভবিষতের জীবনের জন্য বিশ্বাস করায় যেমন-

“ চন্দ্র,আমার জন্য অপেক্ষা করো
অথচ বুক খুঁড়ে গড়ে ছিলেন
অব্যক্ত প্রেমের গ্রভীর সমুদ্র ”।
(খোলা চিঠি )
“ শ্বাস ভরে বাঁচতে চাই নিজের মতন
আপসে নয়,দাপটেও নয়
চাই আদর্শ জীবন ”
( জীবন চাই সচ্ছন্দময় )

কবির প্রথম কবিতার বই “ছি’’ বইটি আমার হাতে নেই । এটা আমার ব্যথর্তা । সতুরাং কবির দ্বিতীয় বই “ভালোবাসার দ্রোহে ভালোবাসার মোহে’’ বইয়ের কিছু কিছু কবিতা নিয়েই একটু আলোচনা করবো ।তার আগে বলি, আমি সাধারণ পাঠক, লেখক নই, নই কবিতা সোমালোচক । কবিতা আলোচনা করা একটা কঠিন কাজ তার পরেও আমি স্বল্পঞ্জাণ নিয়ে আলোচনা করবো কেননা আগেতো (আলোচনা )লেখতে হবে তার পরেইতো লেখা (আলোচনা ) হলো কি না তা নিয়ে নীরীক্ষা ।
মানুষ যে সব সময় আশ নিয়েই চলেন, মানুষ জীবনে আশা করলে উহসাহ উদ্দিপনা আসে,ভব্যিষতে জীবনে সামনে দিকে এগিযে নেয় । কবি কেবিতায় তা সুন্দর করে তুলে ধরছেন –
“ ভেব না অভিমানে সরে গেছি দুরে ।
~আমি আছি এই সংসারে
ঘুমহীন রাতে এক চিলতে বারান্দায় এসে
আকাশ খুঁজি এখনো” ।
(বৃষ্টি এবং কান্না’র কাব্য)

কবি খুব সহজেই মানুষের না পাওয়ার আকাঙ্খাটা কবির হৃদয়ে বরণ করেই নিয়েছেন । কবি বিদীর্ণ ইচ্ছা বাস্তবায়নের জন্য যে, বৃক্ষের নীচে ঠাঁই নিয়েছেন, সেই বৃক্ষ ছায়া হয়ে ছায়া দেননি । সে আশার মুক্তির জন্য পথ খুঁজে নিয়েছেন কোন এক বিশালতার মাঝে, যেখানে রোদ – ছায়ার মানচিত্রের কোন সিমানা নেই, যেখানে মনের ইচ্ছে গুলো উড়ে প্রজাপতির রঙ্গীন ডানা মেলে। সেই রকমের কবির কলম থেকে বেড়িয়ে এসেছে —

“~তাই ঠিক করেছি, আকাশের কাছেই যাব আমি ।
যেখানে মনে সমস্ত ইচ্ছেগুলি লুকানো আছে
কৃষ্ণপক্ষের অন্ধকারে বলা হাজার হাজার কথা
যেখানে শুল্কপক্ষের তারা হয়ে জ্বলে
আমার অভিযোগ অভিমান আকাঙক্ষা আনন্দ
রাতের ওই আকাশ জানে
আমি যাব সেই আস্তাচলে- ”
( বৃষ্টি এবং কান্না’র কাব্য )

কবির ভাবনা, সে তার মনের সাথে বসবাস করেছেন, নাকি মন তার সাথে বাসবাস করেন । এনিয়ে মৃদ দ্বন্দ, নিজে নিজে আপস করে এইভাবে-

“ তুমি নিঃস্ব !হতো দরিদ্র
দারিদ্রেরের সীমা করেছ অতিক্রম ।
আর আমি
তোমার মৌন মগ্ন শীতল বুকের তলায়
খুঁজেছি প্রেমাশ্বৈর্যে সজ্জিত
রাজকীয় মন !”
( আনমনা একা একা )

কবি সমসাময়িক দেশাত্ববোধ কবির হৃদয়কে বড় ব্যথিত করে, নাড়া দেয়, দেশের জন্য কত রক্ত দিয়ের আজ যে স্বাধীন দেশ পেলাম, দেশের ভাবনা কেবল দেশপ্রেমিকরাই ভাবেন ,শুধু ভাবেন নাই এটাও সংশয় করেন দেশের মৌলিকত্ব আরও যে কতবার কত ক্ষত-বিক্ষত হবে এই ভাবনায় কবির হৃদয়ে প্রশ্নবৃদ্ধ।

“বড় দুঃসময় গেছে বাহান্ন,একাত্তর,পচাত্তর,
এমনি ভাবে নব্বই- ওয়ান ইলেভেনে..
দুঃসময় এখনো,
পাঁচ বছর কাড়াকাড়ি ভাগাভাগি
হরতালে হরতালে হালভাঙা বেসুর বেতাল
বিশ্বে মানচিত্রে আমাদের ভূমি !
বারাংবার কাটাছেঁড়া সংবিধানে
পালাক্রমে হাত বদলে !
আর কত ?”
(আশা ব্যক্ত)

এখানে কবি মেশাত্বাবোধ ভালোবাসা সুন্দর ভাবে প্রকাশ করছেন । কবিকে আমি ব্যক্তিগত ভাবে চিনি না বা জানিনা তবে ফেসবুকে থেকে যতদুর বুঝতে পেরেছি তিনি সদা কষ্টকে হাসির আড়ালে লুকেযে রেখে কবিতা রচনা করে যাচ্চেন নিরলস ভাবে ।বিদ্রহী কবি কাজি নজরুল ইসলামতো বলেছেন “…সাহিত্য হইতেছে প্রাণের অভিব্যক্তি, যাহার নিজের প্রাণ নেই, যে নিজে জড় হইয়া গিয়াছে, সে লেখায় প্রাণ দিবে কোথা হইতে ? যাহার নিজের বুকে রঙ-এর আলিপনা ফোটেনা সে চিত্রে রঙ ফুটাইবে কেমন করিয়া ?…সাহিত্যের মুক্তধারায় থাকবে চলার আনন্দ, স্রোতের বেক এবং ঢেউ-এর কলগানও চঞ্চলতা ।”

মানুষ জম্মগ্রহণ করেই সব কিছু শিখে না, মানুষ দিন দিন প্রতিদিন, নানান ঞ্জাণ অভিঞ্জতার মধ্যে দিয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত ও বিকশিত করে থাকে । মানুষের জীবনে এই পর্যায় গুলো এক কঠিন পরীক্ষায় সমকির্ন্ন, প্রেম ভলোবাসা, অভাব অনটন ,বিরহ ব্যদনা হুতাশন,আর্থিক প্রতিবদ্ধকতা মানুষের এই পর্যায়গুলোকে আগুনে পুড়ে ছাড়খাড় করে দেয় একনিমিষে, তবুও মানুষ বাঁচার জন্য করে চেষ্টা এবং আত্বচেষ্টায় তা কোনদিন বিফলে যায় না।কবিও সেই রকমটাই বুঝিয়েছেন নিজ হয়ে যন্ত্রণাকে হাসির আড়ালে লুকিয়ে রেখে সময় যাপন করেন প্রফুল্লচিত্তে, এবং আত্বচেষ্টায় লড়াই করে সেটা নিজের সাথে ।

খুড়েঁ খুঁড়ে গোলাপ ফোটাই
তোমার শরীরের ভাঁজে ভাঁজে
খাঁজে খাঁজে মুক্ত জ্বলে ঘামের লোনা জলে
আলীক স্ব‌প্নে সাজি ভেত‌রে ভেত‌রে
ফুলে ফুলে ঘ্রাণে ক্রন্দনে ভাসি
উচ্ছেঃস্বরে হাসি একান্ত নির্জনে ।
(অন্ধকারের ভাবনা )

সৎ মানুষ যে, নিজের বিবেকে তাড়িত হয়ে …. মুক্তির পথ খুঁজেন আত্ববিশ্বাসের মধ্যে দিয়েই ক‌বিও সেরকমটাই ভে‌বে লেখেছেন –

“বোধের দুয়ার খুলে দিতে আমরা আছি জেগে
শুদ্ধ প্রাণ, সভ্য জাতি, সত্যের শুভ্রতায
লেখনি যুদ্ধ চালিয়ে যাব, লড়ব শেষ লড়াই ।
(শেষ লড়াই)

আত্ববিশ্বাস মানুষকে যে তার গন্তব্যে নিয়ে যাবে সে সংশয় ক‌বির কাছে অতি তুচ্ছ –

“গহীন অন্ধকারের নিষ্ঠুরতার সাথে
মোকাবিলা শেষে
ঘন অরণ্য থেকে নিশ্চয় পৌঁছে যাব
সবুজ স্বপ্নীল উদ্যানে ”।
(অমীমাংসিত জীবনের কাব্য)

“একদিন সূর্মুখীর বাগানে হারাব আমি
ঘুমাব মাথা রেখে শুকনো পাতার বিছানায় ।
তুমি এসো অভিসারে
মাতানো ফুলের আড়ালে
হলুদ পাপড়ি ছড়িয়ে দেব তোমার করতলে।”
(স্বপ্ন বিলাস)

এটা তার আত্ববিশ্বাস, তার পরেও এই সমাজের জীবনের ভবিসৎ নিয়ে কঠিন উদ্দিগ্ন , কবিকে ভাবিয়ে তুলেন সব সময়,তাইলেখেছেন-

“মুদিত চোখে ফিরে আসে বার বার
লাঞ্চিত রমণীয় অসহায় আতনাদ”
(একুশে বই মেলা)

“ যখন অনাকাঙ্খিত অসভ্য কিছু হাত
বিকৃতি লালসায় খোঁজে নারীর শরীর!
আমি প্রশ্নবিদ্ধ তখন,ববর পুরুষত্বে !
শিহরিত তাদের বীভৎসতায় !
আমরা তবে বাস করেছি কোন সভ্যতায় ? ”
(একুশে বই মেলা)

“ ভয় করে সন্তানের অনিশ্চিত নিরাপত্তায়
আমার সন্তান যদি কখনো
ঘটনার শিকার হয় !- ”
(একুশে বই মেলা)
এখানে কবি একটু স্বার্থপরতার প‌রিচয় দিয়েছেন, ফুল যেমন তার অপার সৌন্দয় অপরের ভোগের জন্য ফুটে, ঠিক তেমনি লেখক বা কবিরা পরের কথা চিন্তা করেন মানুষের মনের জ্বালা-যন্ত্রণাকে মুক্তি দেন তাদের লেখনির মধ্যে দিয়ে “আমার সন্তান যদি কখনো/ঘটনার শিকার হয় ?/” এই লাইন দু’টি লেখতে পারতেন ,
আমার নালেখে যদি লেখা হতো, আমাদের সন্তানরা যদি কখনো / ।

বর্তমান সম‌য়ে মানুষের জীবন প্রযুক্তি নির্ভর , একদিকে যেমন মানুষের মনো আকাংখা বুদ্ধি পাচ্ছে অন্যদিকে তেমনিই মনতৃপ্তি কমছে বা পাচ্চেনা । ঠিক সেই রকমেই নারীরাও পুরুষদের জন্য যতোকিছুই করুক না কেন পুরুষেরা যেন মনোতৃপ্তি পাচ্ছেননা ।

পৃথিবী সৃষ্টি শুরু থেকেই নারীরা বৈষম্যর স্বীকার । র্বমানের নারীরা সংসারের জন্য অনেক ত্যাগ স্বীকার করেও পুরুষের মন রক্ষা করতে পার‌ছেনা , তারই বাস্তব রুপ তার কবিতায় উঠে এসেছে

“মেয়ে তুমি যতোই করো মাছ কুটে রান্না
ঝাড় পোচ গোছ গাছ এই কাজ,কাজ না ।
…স্বামীদেব দিন শেষে ঘরে ফিরে মেজাজে
পাহাড় ভাঙেন তিনি এসি রুমে অফিসে ।
হম্বিতম্বি চলে খেদমত দরকার
রোজগেরে বউ হলেও নেই তার কোন ছাড় ।
একহাতে সামলে শাশুড়ি ও সংসার
চাকুরীটা ঠিক রাখা সব দায় মেয়েটার ।
সলতের মত যেতো পোড়াও না নিজেকে
সম্মান স্বীকৃতি মিলবেনা সহজে ”।
(স্বীকৃতিহীন নারী )

তার পরেও নারীরা চায় প্রেম চায় হৃদয়মুগ্ধকর ভালোবাসা মূলত নারী প্রেম ভালোবাসার জন্য শত কষ্ট মুখ বুঝে সহ্য করে সেই হৃদয়মুগ্ধকর ভালোবাসার দিয়ে যায় ভালোবাসার জন্যই ।এভালোবাসা পেলেই তার জীবনের সব আশা একদি পূর্ণতা পাবে নিশ্চয়ই,তাই সে লেখেছেন –

“ প্রেমে চাই চাঞ্চল্য বৈশাখী তান্ডব
বুনোঝড় তছনছ
দেহের মাঝে উত্তাল প্রাণ
নীদ্রাকুসুম তেলে শীতলতা নয়
প্রেমে শুধু উন্মাদনা উত্তাপ চাই ” ।
(অবিনাশী প্রেম )
আমি সাধারণ পাঠক, লেখক নই, নই কবিতা সোমালোচক । তার পরেও লেখলাম পাঠকের কাছেতো বটেই, বিশেষ করে কবির কাছে ক্ষুমা চেয়ে নিচ্ছি, কারণ কবিতা হচ্ছে ভাবের বিষয় বহু রৈখিক অথে কবিতা ভাব প্রকাশিত হয়, আমি আমার মত করে ভাব বুঝে লেখলাম ।“ভালোবাসার দ্রোহে ভালোবাসার মোহে ” বইয়ের প্রতিটি কবিতাই চিত্তকে ব্যথিত করে ,আন্দোলিত করে এবং চিত্তের অনন্ত জিঞ্জাসা ,নৈতিকতার নানান প্রশ্ন উঠে এসেছে, যে প্রশ্ন গুলো আপনার, আমার ও সবার ।এবইয়ের শেষ কবিতা “ সূর্যরা বেঁচে থাক” এর দু’টো লাইন দিয়ে শেষ করলাম –
“শুধু বুক ঘেঁষে থাকা প্রিয় মুখ
যেন আর না হয় ছবি ”
–0–
আলোচক- কবি ও সাহিত্যিক মোরাই রাশেদ।

 

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে