জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ একদিকে কাজ চলছে, অন্যদিকে উঠে যাচ্ছে রাস্তার কার্পেটিং। নিম্নমানের উপকরণে একেবারে নামকাওয়াস্তে কাজ করায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কাজের মান খারাপ হওয়ায় এলাকাবাসী প্রতিবাদ করলেও উপজেলা প্রকৌশলী কোন ভ্রুক্ষেপ করেনি। ফলে গায়ের জোরেই এমন অবস্থাতেই কাজ করে চলেছে ঠিকাদার। রাস্তা সংষ্কারে এমন অনিয়ম দূর্নীতির ঘটনা ঘটেছে নীলফামারীর সৈয়দপুরে।

এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে ঘটনাস্থলে গেলে দেখা যায়, উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের বসুনিয়াপাড়া ব্রীজ হতে পাঠানপাড়াগামী সড়কের শ্বাষকান্দর কাঙালপাড়া ভাই ভাই মোড় থেকে প্রামাণিক পাড়া পর্যন্ত সংষ্কার করা হচ্ছে। এক হাজার চারশ’ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সংষ্কার কাজের প্রায় তিনভাগ ইতোমধ্যে শেষ করা হয়েছে। কাঙালপাড়ার ভাই ভাই মোড়ের কিছু অংশ বাকি রয়েছে।

উপস্থিত লোকজন জানান, গত রমজান মাসের মাঝামাঝি সময়ে রাস্তার কাজ শুরু করা হয়েছে। ঈদুল ফিতরের ৩-৪ দিন আগে সম্পন্নকৃত অংশে কার্পেটিং করা হয়। একাজে সোলিংয়ে অত্যন্ত নিম্নমানের ইটের খোয়া বিছানোসহ কার্পেটিংয়ে পাথরের সাথে খুব কম পরিমানে বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে। তাছাড়া খোয়ার উপর কোন প্রকার লিকুইড প্রলেপ দেয়া হয়নি। যে কারণে হাত দিয়ে টানতেই কার্পেটিংয়ের পাথর উঠে আসছে।

জিকরুল হক নামে এলাকার একজন কৃষক সাংবাদিক দেখে রাস্তার পাশের ক্ষেতে ধান কাটা বাদ দিয়ে ছুটে এসে বলেন, খুব কারাপ কাজ করেছে। এক ইঞ্চি কার্পেটিং করার কথা থাকলেও মাত্র আধা ইঞ্চি করেছে। এনিয়ে প্রতিবাদ করলে ঠিকাদারের প্রতিনিধি বলেছে এভাবেই কাজ হবে। কার কি করার আছে করেন। এই রাস্তা বেশীদিন টিকবেনা বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন ওই কৃষক।

এসময় ওই পথে চলাচলকারী জনৈক স্কুল শিক্ষক মোটর সাইকেলে যাওয়ারকালে বলেন, এত বাজে কাজ করা হয়েছে যে, এক সপ্তাহের মধ্যে পাথর উঠে যাচ্ছে। দায়সারা ভাবে কাজ করায় শেষ না হতেই অনেক জায়গায় গর্ত হয়ে গেছে। মোটর সাইকেল নিয়ে যেতে সমস্যা হচ্ছে। এমনকি এলাকার লোকজন ধান খড় শুকাতে দেয়ার পর নাড়াচাড়া করার সময় পাথর উঠে আসছে। রাস্তার দুইপাশের অবস্থা আরও শোচনীয়। এলাকাবাসী প্রতিরোধ করায় ঠিকাদার বাকি কাজ বন্ধ রেখেছে।

এব্যাপারে প্রকল্প কর্মকর্তা প্রকৌশলী মোখছেদুল ইসলাম ও উপজেলা প্রকৌশলী এ এস এম রেজা আলী জানান, এলাকাবাসীর অভিযোগ ঠিক নয়। কাজের মান ভালো। তারপরও বৃষ্টি হওয়ায় হয়তো কোথাও কোথাও একটু মাটি ডেবে সামান্য গর্ত হয়েছে। এটা হতেই পারে। রাস্তার কাজ এখনও শেষ হয়নি। বাকি কাজ শেষ করে যেখানে সমস্যা দেখা যাবে তা ঠিক করে নেয়া হবে।

তিনি জানান, ৭২ লাখ ৯ হাজার ২শ’ টাকা বরাদ্দে এই কাজটি করছে মেসার্স মহসেনা এন্টারপ্রাইজ। নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলার কানিয়ালখাতার এই প্রতিষ্ঠানের বেশ সুনাম রয়েছে। তাই তাদের কাজ নিয়ে আমরা কখনই চিন্তিত নই। মেয়াদকালে কোন ত্রুটি হলে তারা তা মেরামত করে দিবে।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী মাহাবুবুল আলমের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি মোবাইল কল রিসিভ না করায় তাঁর মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তবে তাঁর সাইড ম্যানেজার বিদ্যুৎ রাস্তার সমস্যার কথা স্বীকার করে মোবাইলে জানান, ঠিকাদার নীলফামারী জেলা আওয়ামীলীগের নেতা ও চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি। তাই তার কাজ নিয়ে অহেতুক বাড়াবাড়ি না করাই ভালো হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে