ডেস্ক রিপোর্ট : চিকিৎসা ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর কথা বলে লন্ডনে গিয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের কর্মকর্তা ও মৃত্যুদণ্ডাদেশ পাওয়া দুই যুদ্ধাপরাধীর সঙ্গে গোপন বৈঠক করেছেন—এমন অভিযোগ উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও বিষয়টি ছড়িয়ে পড়েছে এবং এ নিয়ে দেশে-বিদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে এ ব্যাপারে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।

পূর্বপশ্চিমবিডিডটনিউজে গত বুধবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গোপন বৈঠকের বেশ কিছু তথ্য তাদের কাছে এলেও তারা নিজস্ব অনুসন্ধান চালায়নি। তবে সেগুলোর বিষয়ে তারা বিএনপির কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগ করলে ওই নেতারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।

পূর্বপশ্চিমবিডিডটনিউজে ‘লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে পাকিস্তানি গোয়েন্দাদের গোপন বৈঠকের খবর কতটা সত্য?’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘আমাদের কাছে যেসব তথ্য এসেছে সেগুলোর মধ্যে চিকিৎসা ও পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে বর্তমানে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সেখানে তিনি পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করছেন বলে জানা গেছে। খুব গোপনীয়ভাবে সেন্ট্রাল লন্ডনে একটি হোটেলে তাঁরা বসেছিলেন। গোপন ওই বৈঠকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে ছিলেন তারেক রহমান, লন্ডনে পালিয়ে থাকা যুদ্ধাপরাধী চৌধুরী মঈনুদ্দীন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে এসেছেন আরেক যুদ্ধাপরাধী আশরাফুজ্জামান এবং লন্ডনের জামায়াতের কয়েকজন নেতা। ’

প্রভাবশালী পশ্চিমা একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা খালেদা জিয়ার কর্মকাণ্ড নজরে রেখেছে উল্লেখ করে পূর্বপশ্চিমবিডিডটনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘তাদের তথ্য অনুযায়ী লন্ডনস্থ পাকিস্তান এমবাসিতে কর্মরত জুনায়েদ নামের এক ব্যক্তি, যিনি সম্ভবত পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের আন্ডার কাভার একজন অফিসার, তিনি খালেদা জিয়ার সঙ্গে তাঁর লন্ডনে পৌঁছানোর পরই দেখা করেন। ’

অনুসন্ধানে জানা যায়, ছদ্মবেশী ওই জুনায়েদ লন্ডনে  থাকাকালে খালেদাপুত্র এবং বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে গোপনে খুবই নিবিড় সম্পর্ক বজায় রেখে চলেন। জুনায়েদের সাক্ষাতের পর পাকিস্তানের আইএসআইয়ের পূর্বাঞ্চল গোয়েন্দা শাখার কর্মকর্তা রিয়াজ আশফাক লন্ডনে পাড়ি জমান এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। জুনায়েদ ও রিয়াজের সঙ্গে খালেদা জিয়ার দুটি সাক্ষাৎই ঘটে লন্ডনের সেন্ট জেমস কোর্ট এরিয়ায় অবস্থিত তাজ হোটেলে ১৮ ও ১৯ জুলাই গভীর রাতে।

উল্লেখ্য, এই তাজ হোটেলেই তারেক রহমান বাংলাদেশে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে গোপন বৈঠক করতেন। যুক্তরাষ্ট্রের দুজন সিনিয়র কর্মকর্তার সঙ্গেও এখানে তারেকের সাক্ষাৎ হয়েছিল বলে জানা যায়। আইএসআই এই হোটেলকে বহুবার তাদের গোপন বৈঠকের জন্য ব্যবহার করে বলে অভিযোগ রয়েছে। বিশেষ করে, ১৯৯৫-৯৬ সালে আইএসআই এই হোটেলেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি আবদুর রশিদের সঙ্গে বৈঠক করে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করে বলে জানা যায়।

গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে পূর্বপশ্চিমবিডিডটনিউজ জানায়, আইএসআই সদস্যরা নেদারল্যান্ডসের রাজধানীর উপকণ্ঠের একটি শহর ব্রেডায় বঙ্গবন্ধুর খুনিদের সঙ্গে দেখা করে। এ ছাড়া বাংলাদেশ বংশোদ্ভূত জনৈক খালেদ মহিউদ্দিনের সঙ্গেও তারা বৈঠক করে। এরই ধারাবাহিকতায় বিএনপির এক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ফারুক-রশিদদের সঙ্গে বৈঠক করে শ্রীলঙ্কার বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন এলটিটিইর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে শ্রীলঙ্কার এলটিটিই যেভাবে আত্মঘাতী হামলা চালিয়ে হত্যা করেছিল, সে ধরনের কোনো প্রক্রিয়ায় শেখ হাসিনাকেও হত্যা করা যায় কি না সে উপায় খোঁজার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু সে সময় ভারতীয় উপমহাদেশের একটি দেশের গোয়েন্দা সংস্থা ওই চক্রান্ত জেনে যাওয়ায় তা ভেস্তে যায়।

পূর্বপশ্চিমবিডিডটনিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে খালেদা জিয়ার লন্ডন সফরে এই উপমহাদেশের প্রভাবশালী একটি গোয়েন্দা সংস্থা ধারণা করছে যে হয়তো খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানসহ আওয়ামীবিরোধী চক্র বাংলাদেশে নির্বাচনী প্রচার চালানোর সময় বা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে সফররত অবস্থায় শেখ হাসিনার ওপর আত্মঘাতী বোমা হামলা চালানোর চেষ্টা করতে পারে। এ ছাড়া আত্মঘাতী হামলা চালানোর জন্য এ কাজে পারদর্শী পাকিস্তানি জিহাদি গোষ্ঠীর সদস্য এবং বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা নারী ও শিশুদের ব্যবহার করা হতে পারে। পার্বত্য অঞ্চলের সরকারবিরোধীদেরও এ হামলার জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে—এমন তথ্যেরও উল্লেখ রয়েছে ওই প্রতিবেদনে।

জানা যায়, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের আইএস কানেকশনের খবর নতুন নয়। ২০১৩ সালের ২৬ অক্টোবর ভারতের আনন্দবাজার পত্রিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল—‘খালেদাপুত্রের সহযোগী আইএসআই, উদ্বিগ্ন দিল্লি’। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, লন্ডনে স্বেচ্ছা নির্বাসনে থাকা তারেক রহমান ও তাঁর দলকে সাহায্য-সহযোগিতা করে চলেছে আইএসআই। তারেক রহমান উপমহাদেশের সক্রিয় মৌলবাদী ও জঙ্গি নেতাদের সঙ্গেও নিবিড় যোগাযোগ রেখে চলছেন। বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। এখানে কে ক্ষমতায় এলো তা ভারতের বিবেচ্য বিষয় নয়। কিন্তু আইএসআই কানেকশন বা আইএসআইকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় আসার চেষ্টার ব্যাপারে ভারতের উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ আছে। কারণ বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এই আইএসআইয়ের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় বাংলাদেশ কার্যত মৌলবাদের ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছিল। সেই মৌলবাদ-জঙ্গিবাদের উত্থান শুধু বাংলাদেশকেই নয়, পুরো উপমহাদেশকেই ঝুঁকিতে ফেলেছিল।

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বরাবরই এসব অভিযোগকে খালেদা জিয়া, তারেক রহমান ও দলের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হিসেবে অভিহিত করেছেন। ২০১২ সালে খালেদা জিয়া ভারত সফরে গিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন, অতীতের মতো ভুল আর হবে না। কিন্তু সেই আশ্বাসের সঙ্গে কর্মকাণ্ডের সংগতি নেই বলেই অভিযোগ উঠেছে।

ক/ল/ক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে