...................মোঃ আব্দুল মান্নান

বেশ কয়েক দিন থেকে পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি, মাদক ও ক্যাসীনো নামীয় জুয়ার মাধ্যামে কিছু অসাধু রাজনৈতিক নেতা অবৈধ ভাবে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অর্থ ও সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলেছে। তারা অবৈধভাবে প্রভাব খাঠিয়ে কতিপয় দুর্নীতিবাজ আমলার সাথে আঁতাত করে অবৈধ কর্মকান্ড চালিয়ে অর্থ লুঠপাট করে আসছিল বলে পত্রিকাগুলোতে এসব সংবাদ প্রকাশ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্পের কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত সরকারি আমলারাও দুর্নীতি মহোৎসবে মেতে উঠেছে। রূপপুর পারমানবিক কেন্দ্রের বালিশ ও পর্দা ক্রয় কেলেল্কারী, ফরিদপুর ও রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দূর্নীতির মাধ্যামে অর্থ আত্মসাৎ এর কেলেল্কারী,বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিগণের দূর্নীতির চিত্রের প্রকাশিত খবর দেশের মানুষকে হতবাক করেছে এবং দেশের সর্বোচ্চ পদধারি এসব উচ্চ পর্যায়ের মানুষের দূর্নীতির খবর দেশের সচেতন মহলকে উদ্বিঘ্ন করেছে। রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দ, সরকারী আমলা এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পদধারী ব্যক্তিগণের মানসিকতা যদি এ রকম হয় তাহলে দেশ এখন কোন পথে চলছে তা ভাববার সময় এসেছে।


দেশে যখন দুর্নীতিবাজ, লুটেরাদের রাজত্ব কায়েম হয়, সাধারণ মানুষ তখন সু-শাসন ও ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হতে থাকে। দুর্নীতিবাজ ও লুটেরারা তখন পেশী শক্তির জোরে অন্যায়কে অন্যায় মনে করে না। এসব কাজে তাদের মনে অপরাধবোধ জাগ্রত হয় না, ভালো-মন্দের বিচার না করে তারা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্থ-সম্পদ উপার্জনে লিপ্ত হতে থাকে। আর তখন সরকারী আমলারা সুযোগ বুঝে এসব দুর্নীতিবাজদের সাথে হাত মিলিয়ে নির্ভয়ে নিবিঘ্নে দেশকে দুর্নীতির স্বর্গ রাজ্য বানিয়ে ফেলে। তখন তাদের এসব দুর্নীতিতে বাধা দেওয়ার কেউ থাকে না। তারা ভাবেন, ক্ষমতাবান দুর্নীতিবাজ নেত্রীবৃন্দ যখন তাদের সাথে রয়েছে তখন তারা আর কা’কে ভয় করবে। এসব আমলাদের মাঝে অনেকে বলে থাকেন যে, রাজনৈতিক নেতাদের চাপে চাকরি হারানোর ভয়ে নাকি তারা এসব দুর্নীতিতে জড়িয়ে পরেন। কথাটির মাঝে সত্য ও অসত্য দুটোই থাকতে পারে। এক্ষেত্রে যারা সুযোগ সন্ধানী আমলা তারাই এ সুযোগের অপেক্ষা করে, আর যারা সৎ ও নিষ্ঠাবান তারা এ সুযোগ এড়িয়ে চলেন এবং নিজেকে এর আওতামুক্ত রাখার আপ্রাণ চেষ্ঠা করে থাকেন।


দুর্নীতিবাজ আমলারা একটি কাজে বেশ পারদর্শিতা রাখেন। দুর্নীতি পোক্ত করতে তারা সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে তথ্য গোপন রাখার সমস্ত কলা-কৌশল অবলম্বনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আর এদের সহযোগিতায় দুর্নীতিবাজরা টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী ও অন্যান্য অবৈধ কাজ করার সুবর্ন সুযোগ পায়। কেউই দুর্নীতিবাজ এসব আমলার নিকট থেকে সহজেই কোন তথ্য পান না। এসব আমলা তথ্য প্রদানে নানা অজুহাত সৃষ্টি ও কৌশল অবলম্বন করেন। যা’তে তথ্য দিলেও যথা সময়ে দুর্নীতি প্রকাশ না পায় তারা এ কারণে ওয়েব সাইডেও তথ্য প্রকাশে বিলম্ব করেন।
যেখানে অর্থ সেখনেই দুর্নীতি। দুর্নীতি বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সাথে হেঁটে বেড়ায়। অর্থের সাথে দুর্নীতির সম্পর্ক একটু গভীর। অর্থ ছাড়া দুর্নীতি হয় না, এমনটি ভাবাও ঠিক না। যেমনটি আগেই বলেছি, যেখানে সরকারের হাজার হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন কর্মকান্ড চলছে দুর্নীতি সেখানেই আঁখড়া বসিয়েছে। দুর্নীতিবাজরা এবং তাদের সহযোগি দুর্নীতিবাজ আমলারা ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট করছে এবং অনেকে বিদেশে এসব অর্থ পাচারও করছে। এরা এত শক্তিশালি যে, এদের বিরুদ্ধে কেউই টু-শব্দটি পর্যন্ত করতে সাহস পায় না।এদের রয়েছে নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী এবং নেপথ্যে রয়েছে অশুভ শক্তি। এরা ক্ষমতায় যাওয়ার আগে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করে। কিন্তু ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিই এদেরকে কাছে পেতে জিহাদ ঘোষণা করে। মজার ব্যাপার হল ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতিই এসব নেত্রীবৃন্দকে ছাড়তে চায় না এবং তারা দুর্নীতি করতে না চাইলেও দুর্নীতির আমন্ত্রণকে এরা হেলায় ফিরিয়ে দিতে চান না। ক্ষমতা বলে কথা। একটু দুর্নীতি যদি নাই করলো তাহলে তাদের ক্ষমতাই বা প্রকাশ পায় কিভাবে। তাই এ সুযোগ তারা হাত ছাড়া করে না। কেননা ক্ষমতা থাকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এ সময় চলে গেলে আমলারাতো আর তাদেকে মূল্যায়নই করবে না। তাছাড়া পরবর্তীতে ক্ষমতায় যেতে হলে প্রয়োজন হবে টাকার।


আসলে যেসব গুণাবলী জীবনকে পূর্ণতা দেয় তা-যেন ক্রমেই আমাদের মাঝ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। এখন দেশ ও সমাজ বলতে কে কত বিত্তশালী, কে কত শক্তিশালী। এখন বিত্ত যার শক্তি তার কিংবা শক্তি যার বিত্ত তার। যারা সমাজ উন্নয়নে টাকা খরচ করে, সমাজে তাদের প্রভাবতো একটু থাকবেই। রাজনীতির সাথে জড়িত ব্যক্তি এবং প্রশাসনিক অনেক আমলা নিজেদেরকে এখন বিত্তবান ও প্রভাবশালী মনে করেন। এদের অনেকেই এখন বিত্তশালীও বটে। এসব বিত্তশালী ও প্রভাবশালীদের বেশির ভাগই দুর্নীতি, মাদক, চাঁদাবাজ, টেন্ডাবাজীসহ ক্যাসিনোর মত অবৈধ কাজের সাথে জড়িত থেকে লুটে নিচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকা। এ কারণে এদের সাথেই জড়িয়ে যাচ্ছে অসাধু আমলারা। তারা এসব রাজনৈতিক অসাধু নেত্রীবৃন্দের সাথে আঁতাতের মাধ্যমে সুযোগ করে নিচ্ছে অবৈধভাবে রাতারাতি হাজার হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার। ভালো-মন্দের বিচার না করে লোভের বশবর্তি হয়ে তারাও দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে সমস্ত সরকারী আমলাদের চরিত্রে কালিমা লেপন করছে। দুর্নীতিবাজ রাজনৈতিক নেত্রীবৃন্দের দুর্নীতিও সমস্ত নীতিবান ও সৎ রাজনীতিবিদদের নীতি-নৈতিকতার উপর প্রভাব ফেলছে। সৎ, নিষ্ঠাবান নেত্রীবৃন্দকে করছে জাতির কাছে প্রশ্ন বিদ্ধ। যে কারণে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ হচ্ছে জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন।


এখন প্রশ্ন হচ্ছে যারা দুর্নীতি ও অবৈধভাবে অর্থ লুটপাট করে সম্পদের পাহাড় গড়ে তুলছে তাদের অপরাধ খাটো করে দেখা হবে কেন? যারা দুর্নীতি করে তারা আমলাই হোক অথবা রাজনীতিবিদই হোক তাদের অপরাধের শাস্তি তাদেরই প্রাপ্য। এক্ষেত্রে আইনের যে কোন রকমের শিথিলতা কিংবা ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে আইনের ফাঁক-ফোকর খুঁজে তারা বেড়িয়ে আসবে এধরনের কোন সুযোগ যা’তে তারা না পায় সেদিকে দেশের পদধারি ব্যক্তিগণের সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। কেননা যারা দুর্নীতি করে তাদের গডফাদাররা ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকে। তারা এদেরকে উদ্ধারের সমস্ত কলা কৌশল ও প্রভাব খাটানোর চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। আামাদের প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী, শেখ হাসিনা এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে যে সময়োপযোগি পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন দেশের মানুষ তা গুরুত্বের সাথে সাদরে গ্রহণ করেছে। তারা অপেক্ষা করছে এদের প্রকৃত পরিণতির জন্য। কেননা এ পদক্ষেপ দুর্নীতির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ সফল হলে দেশ থেকে সম্পুর্ণভাবে দুর্নীতি উচ্ছেদ না হলেও অন্ততঃ দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে থাকবে ইনশা আল্লাহ্। আর জাতির প্রত্যাশা এখন সেদিকেই।

লেখক ও সাংবাদিক

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে