আগামী অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের মূল কৌশল হবে বিদ্যমান চাহিদার প্রবৃদ্ধি কমিয়ে সরবরাহ বাড়ানো। সরকার মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে অগ্রাধিকার দিয়ে জিডিপি প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেটে প্রণোদনা কার্যক্রমসহ খাতভিত্তিক বাজেট বরাদ্দ সুচিন্তিতভাবে নির্ধারণ করেছে।
‘কোভিড অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তন’ শিরোনামে বৃহস্পতিবার (৯ জুন) বিকেল ৩টায় জাতীয় সংসদে ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের বাজেট পেশকালে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ তথ্য জানান।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে অসঙ্গতি রোধের মাধ্যমে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার বদ্ধপরিকর। চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মূলত বহিঃস্থ এবং কিছু অভ্যন্তরীণ কারণে সম্প্রতি কিছুটা বেড়েছে। মূল্যস্ফীতির বৈশ্বিক কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাণিজ্য সহযোগীদের মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি, জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি, টাকার অবচিতি, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থার প্রতিবন্ধকতা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ- যে বিষয়গুলো আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে ২০২২ সালের গড় মূল্যস্ফীতি যথাক্রমে ৭ দশমিক ৬৮ এবং ৭ দশমিক ৪১ শতাংশ হবে মর্মে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল পূর্বাভাস দিয়েছে।
‘অভ্যন্তরীণ কারণের মধ্যে রয়েছে, কোভিড-১৯ পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার, যা অর্থনীতিকে পূর্ণ কর্মসংস্থানের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য যেন অস্থিতিশীল না হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়িয়েছে। দেশের স্বল্প-আয়ের জনগোষ্ঠী যাতে কম মূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য কিনতে পারে সে জন্য টিসিবির মাধ্যমে সেগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া দরিদ্র জনগোষ্ঠীর বৃহত্তর অংশকে সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতায় আনা হয়েছে। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসন মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে মজুতকারিদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিচ্ছে।’
তিনি আরও বলনে, মূল্যস্ফীতি যাতে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় এবং বেসরকারি খাতে প্রয়োজনীয় ঋণপ্রবাহ যেন অব্যাহত থাকে সেগুলো বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক মুদ্রা সরবরাহ বজায় রাখছে। মূলস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আগামী বাজেটে আমাদের কার্যক্রম সম্পর্কে আমি আগেই আলোচনা করেছি। এনব পদক্ষেপের কারণে আগামী ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে মূল্যস্ফীতি ৫ দশমিক ৬ শতাংশ হবে মর্মে আমি আশা করছি।
কোভিড-১৯ অভিঘাত পেরিয়ে উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় প্রত্যাবর্তনের লক্ষ্য নিয়ে প্রস্তাবিত ২০২২-২৩ অর্থবছরের বাজেটের আকার হচ্ছে ছয় লাখ ৭৮ হাজার ৬৪ কোটি টাকা। এবারের বাজেটের আকার যেমন বড়, তেমনি এ বাজেটে ঘাটতিও ধরা হয়েছে বড়। অনুদান বাদে এই বাজেটের ঘাটতি দুই লাখ ৪৫ হাজার ৬৪ কোটি টাকা, যা জিডিপির সাড়ে ৫ শতাংশের সমান। আর অনুদানসহ বাজেট ঘাটতির পরিমাণ দুই লাখ ৪১ হাজার ৭৯৩ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ দশমিক ৪০ শতাংশের সমান।
এটি বর্তমান সরকারের ২৩তম এবং বাংলাদেশের ৫১তম ও বর্তমান অর্থমন্ত্রীর চতুর্থ বাজেট। বাজেটে সংগত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, কৃষিখাত, স্বাস্থ্য, মানবসম্পদ, কর্মসংস্থান ও শিক্ষাসহ বেশকিছু খাতকে।
Jag/N