ডেস্ক রিপোর্ট  : শরীয়তপুরে পদ্মার ভাঙ্গনে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার ৪ শতাধিক পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। পদ্মার তীরবর্তী জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর থেকে নড়িয়া উপজেলার শুরেশ^র লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত প্রায় ১০ কিলোমিটার এলাকায় ভাঙ্গনের শিকার হয়েছে সবচেয়ে বেশি এখানকার অধিবাসীরা। গত বছরও অন্তত দেড় হাজার পরিবার গৃহহীন হয়েছে। গত বছরের রেষ কাটিয়ে না উঠতেই এ বছর আবার শুরু হয়েছে ভাঙ্গন। নড়িয়ায় মোক্তারের চর এলাকার মানুষ ভাঙ্গনের কবলে পড়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছে।
গত ৫ জৃলাই থেকে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গনে জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার ৪১৫ পরিবার তাদের সহায় সম্বল হারিয়েছেন। জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের কলমিরচর বেপারী কান্দি, ইয়াকুব বেপারী কান্দি, আইন উদ্দিন বেপারী কান্দি, মমিন খালাসী কান্দি ও মাদবর কান্দি গ্রামের ৩০৬ পরিবার, বিলাসপুর ইউনিয়নের ইয়াসিন মাদবরেরকান্দি গ্রামের ১৭ পরিবার, জাজিরা ইউনিয়নের পাথালিয়া গ্রামের ৫১ পরিবার ও নড়িয়া উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের মেহেরআলী মাদবরেরকান্দি গ্রামের ৪১ পরিবার সহায় সম্বল হারিয়েছেন। ইতিমধ্যে জাজিরা উপজেলার কুন্ডেরচর ইউনিয়নের ইয়াকুব মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে একই ইউনিয়নের সুরত খারকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কালু বেপারীরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কাজিয়ারচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাহেদ আলী মাদবরকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এছাড়াও দুইটি মসজিদ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে রয়েছে কুন্ডেরচর কাইউম খার বাজার ও কালু বেপারী উচ্চ বিদ্যালয়টি।
নড়িয়া উপজেলার মোক্তারেরচর ইউনিয়নের মেহেরআলী মাদবরকান্দি গ্রামের আব্দুর রশিদ খান (৭০) জানান, যখন থেকে বুঝতে শুরু করেছি তখন থেকেই দেখছি পদ্মার এ পাড় ভাঙ্গে ওপাড় গড়ে। এই ভাঙ্গা-গড়ার খেলার মধ্যেই আমরা যুদ্ধ করে বেঁচে আছি।জাজিরার কুন্ডেরচর চর এলাকার রায়হান মিয়া (৫৫) জানান,নদী ভাঙ্গনে আমরা সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি। আমাদের বসত বাড়ি করার মতো আর কোন উপায় নেই।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ বৈদ্য জানিয়েছেন, পদ্মার বাম তীর অর্থাৎ মুন্সিগঞ্জ অংশে চর পরে নদীর গতি পরবির্তন হয়ে যাওয়ার কারণে শরীয়তপুর তীরে জাজিরা ও নড়িয়া অংশে ভাঙ্গন শুরু হয়েছে। নদীর চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী গতি পথ পরিবর্তনের কারণে পদ্মার শরীয়তপুর তীরে ভাঙ্গন আরো তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ভাঙ্গন রোধ কল্পে আমরা একটি ডিপিপি (ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট প্রোপোজাল) প্রণয়ন করেছি। এটি বাস্তবায়ন করা গেলে পদ্মার ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা হবে ।
শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাহমুদুল হোসাইন খান বলেন, গত ১৫-২০ দিন ধরে পদ্মায় ভাঙ্গন শুরু হলেও গত ৬ ও ৭ জুলাই খুব বেশী ভেঙ্গেছে। এতে এ যাবত জাজিরা ও নড়িয়া উপজেলার ৪১৫ টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। তবে গতকাল থেকে ভাঙ্গন অনেকটা কমে এসেছে। আমরা ভাঙ্গন কবলিতদের তালিকা যাচাই বাছাই শেষে এযাবত চুড়ান্ত তালিকা প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করেছি। খুব শীঘ্রই দুর্গতদের মাঝে বিতরণের জন্য ইতিমধ্যে চাল ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
শরীয়তপুর-১ আসনের সংসদ সদস্য ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বি. এম মোজাম্মেল হক বলেন, পদ্মা একটি খর¯্রােতা নদী। এই নদীর ভাঙ্গন রোধ করতে হলে দীর্ঘ মেয়াদি স্থায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। সেই আলোকে শরীয়তপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের মাধ্যমে ১২শ’ কোটি ৮২ লক্ষ টাকা ব্যয়ে জাজিরার কুন্ডেরচর থেকে নড়িয়া উপজেলার শুরেশ^র লঞ্চ ঘাট পর্যন্ত ৮.৯ কি.মি এলাকার জন্য একটি ডিপিপি প্রনয়ণ করে প্লানিং কমিশনে অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। আশা করছি এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এই এলাকার ভাঙ্গন রোধের একটি স্থায়ী সমাধান হবে এবং পদ্মা তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারীরা নিরাপদে বসবাস করতে পারবে।

বি/এস/এস/এন

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে