ডেস্ক রিপোর্ট : বিদ্যুৎ চালিত সেচ ব্যবস্থা চাষের খরচ কমিয়ে এবং উৎপাদন বাড়িয়ে জেলার কৃষি খাতকে আরও লাভজনক করে তুলেছে।
কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক (ডিএই) এস এম আশরাফ আলী সম্প্রতি জানান, বিদ্যুৎ চালিত ৯২১ টি গভীর নলকূপ ১৬,৭৫১ টি অগভীর নলকূপ এবং পাঁচটি লো-লিফট পাম্পের মাধ্যমে জেলার ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এর পাশাপাশি ৬৮ হাজার হেক্টর জমিতে সেচ দেয়ার লক্ষে কৃষকরা চারটি ডিজেল চালিত গভীর নলকূপ, একটি সৌর বিদুুৎ চালিত গভীর নলকূপ, ৫৬ হাজার ১৩১ টি ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপ, ৬৫টি সৌর বিদ্যুৎ চালিত অগভীর নলকূপ এবং ২০ টি ডিজেল চালিত লো লিফট পাম্প ব্যবহার করছে।
কৃষকরা বিদ্যুৎ চালিত নিজস্ব সেচ পাম্প এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) এবং বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) পরিচালিত গভীর নলকূপ, অগভীর নলকূপ, লো লিফট পাম্প ব্যবহার করে সেচ সুবিধা পাচ্ছে।পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি) পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি (পিবিএস) এবং নর্দান জোন বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের মাধ্যমে সেচ পাম্পের জন্য বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে।বিদ্যুৎ চালিত সেচ সুবিধা ব্যবহার করে কৃষকরা ২০১৬ সালের ১১.৫২ লাখ টন আলুর স্থলে ২০১৭ সালে ১৩ লাখ ৩৪ হাজার টন আলু উৎপাদন করে এবং ২০১৬ সালের ২ লাখ ৫২ হাজার টনের স্থলে ২০১৭ সালে তিন লাখ টন শাকসব্জি রফতানি করে।আশরাফ আরও বলেন, এখানে বেশী পানি নির্ভর ফসল চাষ নিরুৎসাহিত করার পরও কৃষকরা ২০১৭ সালে ৫.৪৪ লাখ টন বোরো ধান উৎপাদন করে, ২০১৬ সালে এই উৎপাদনের পরিমান ছিল ৫.৪৬ লাখ টন এবং ২০১৫ সালে ৫.৬১ লক্ষ টন বোরো ধান উৎপাদিত হয়।
বাসসের সঙ্গে আলাপকালে সদর উপজেলার নাজিরঙ্গীর গ্রামের কৃষক আরিফুল হক বাতুল বলেন, তিনি নিজের বিদুুৎ চালিত সেচ পাম্প ব্যবহার করে তার সাড়ে তিন একর জমিতে বোরো চাল ও অন্যান্য শস্য চাষ করেন।আরিফুল মাত্র ৩ হাজার টাকা খরচ করে তার বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্প ব্যবহার করে এক একর বেলেমাটির জমিতে বোরো ধান চাষ করছেন পক্ষান্তরে একই পরিমান জমি চাষে এক এবং অন্যান্য কৃষকরা নিজস্ব ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপ ব্যবহার করে প্রতি একর প্রতি ১০ হাজার টাকা খরচ করছেন।
‘আরইবি’র রংপুর পিবিএস-১ এর সরবরাহকৃত প্রতি ইউনিট ৩.৮২ টাকা দরের বিদ্যুৎ দিয়ে আমি আমার সেচ পাম্প চালাচ্ছি। এতে মোট বিদ্যুৎ বিলের ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি দেয়া হয়। তিনি তার জমিতে আলু, সবজি ও অন্যান্য ফসলও চাষ করেন।
মিঠাপুকুর উপজেলার তাহিরপুর গ্রামের আবুল হোসেন বলেন, তিনি তার এক একর বেলে-দোআশ মাটির জমিতে ডিজিটাইজড প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে বিএমডিএ-র গভীর নলকূপ থেকে সরবরাহকৃত সেচের পানি ব্যবহার করে জমিতে বোরো ধান উৎপাদন করেন।
তিনি বলেন, ‘আমি বিদ্যুৎচালিত গভীর নলকূপ থেকে সেচের পানি ব্যবহার করে বোরো ধান চাষের জন্য একর প্রতি ২১০০ টাকা খরচ করছি তবে আলু, সবজি, ভুট্টা, আউশ ধান এবং অন্যান্য শস্যের চাষের জন্য সেচ খরচ অনেক কম।’বিএমডিএ-র নির্বাহী প্রকৌশলী রেজা মো. নুর আলম জানান, বিএমডিএ-র ৬৭৪ বিদ্যুৎ চালিত গভীর নলকূপ থেকে ডিজিটাল প্রিপেইড কার্ড ব্যবহার করে ঘন্টা প্রতি ১০০ টাকা হারে সারচার্জ প্রদানের মাধ্যমে কৃষকরা সেচ সুবিধা পাচ্ছে।তিনি বলেন, আমরা ১২,৫৯৯ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ, ২০৮ হেক্টর জমিতে গম, ৩,৬৩৩ হেক্টর আলু, ৬৫২ হেক্টর ভুট্টা, ২৬৮ হেক্টর সরিষা, ১৯,০৬২ হেক্টর আউশ এবং ১,৬০৬ হেক্টর জমিতে অন্যান্য ফসল চাষের জন্য সেচ দেই।’কাওনিয়া উপজেলার রাজীব গ্রামের কৃষক মাহবুব হোসেন বলেন, তিনি স্থানীয় একটি কৃষক গ্রুপের সদস্য হিসেবে গ্রামে একটি স্কিমের অধীনে বিএডিসি থেকে ভাড়া করা গভীর নলকূপ থেকে দেয়া সেচের পানি ব্যবহার করে তার এক একর জমিতে বোরো ধান ও অন্যান্য ফসল চাষ করেছেন।
তিনি বলেন, ‘এই প্রকল্পের অধীনে বোরো চাষের জন্য সেচের খরচ দাঁড়িয়েছে একর প্রতি ২,০০০ থেকে ২২০০ টাকা, সেখানে মোট ১২০ একর জমিতে অন্যান্য ফসল চাষ হচ্ছে।’বিএডিসি’র সহকারী প্রকৌশলী শাহে আলম জানান, তার সংস্থা সারা জেলায় বিভিন্ন গ্রুপের সংগঠিত কৃষকদের সেচ প্রকল্পে ভাড়ার ভিত্তিতে ২৩০ টি গভীর নলকুপ, ২২ টি অগভীর নলকূপ এবং ছয়টি লো লিফট পাম্পের মাধ্যমে সেচ সুবিধা প্রদান করছে। আরইবি’র সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার বলেন, কৃষকরা কম খরচে খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর জন্য পিবিএস পাম্পের মাধ্যমে ব্যবহৃত বিদ্যুতের ওপর ২০ শতাংশ হারে সরকারি ভর্তুকি পেয়ে থাকেন।নর্দান জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের নির্বাহী প্রকৌশলী গোলাম মুর্তজা বলেন, ইউনিট প্রতি প্রায় আট টাকা উৎপাদন খরচের বিপরীতে কোম্পানি কৃষকদের জন্য প্রতি ইউনিট ৩ টাকা ৮২ পয়সা দরে সেচ পাম্পের বিদ্যুৎ সরবরাহ করে।
বি/এস//এস/এন





