ডেস্ক রিপোর্ট : অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত বলেছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশিত পথে সরকার উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়তেই ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এ বাজেট দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, এ বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমেই ২০২১ সালে মধ্যম আয় এবং ‘৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করার দিকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে।
গতকাল সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সমাপনী বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
অর্থমন্ত্রী বলেন, প্রস্তাবিত বাজেট বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্জিত সাফল্য সকল নাগরিকের সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি নিশ্চিত করবে।
আবুল মাল আবদুল মুহিত সমাপনী বক্তৃতায় প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর সংসদে এবং সংসদের বাইরে বিভিন্ন সমালোচনার জবাবে বলেন, এ সমালোচনা বাজেট সংস্কার ও বাস্তবায়নে সহায়ক হবে। তিনি বাজেট উচ্চাভিলাষী এবং বাস্তবায়নে সংশয় রয়েছে এমন সমালোচনার জবাবে বলেন, বিগত বছরগুলোতে দেশের অর্থনীতির শক্তি-সামর্থ্য এবং সরকারের নেতৃত্বের চৌকষতা ও গতিশীলতায় সংশয়বাদীদের সকল সংশয় অমূলক প্রমাণিত করে দেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ২০০৯ সালে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই সরকার বাজেটের খুঁটিনাটি বিষয়গুলো গণমানুষের কাছে বছরের পর বছর উপস্থাপন করেছে। পাশাপাশি বাজেট প্রক্রিয়ায় জনগণকে অধিকতর সম্পৃক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। এর ফলে বাজেটের উপর মানুষের আগ্রহ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী তার বক্তৃতায় বাজেটে প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৪ শতাংশ অর্জন সম্ভব বলে দৃঢ়প্রত্যয় ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোতে প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি অর্জন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া তিনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি, দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ নিশ্চিত, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সামাজিক নিরাপত্তা ও কল্যাণ, যোগাযোগ অবকাঠামো, রাজস্ব আহরণ কার্যক্রম, প্রযুক্তি খাতসহ বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দসহ এসব খাতের উন্নয়নে সরকার গৃহীত বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথা বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, সরকার উচ্চতর প্রবৃদ্ধি নিয়ে উন্নয়নের মহাসড়কে যাত্রা করতে চায়। ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ এবং ২০৪১ সালে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশে উন্নীত হতে হলে বিপুল সরকারি বিনিয়োগ প্রয়োজন। আর সে লক্ষ্য নিয়ে সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
অর্থমন্ত্রী এই বাজেটকে তার একাদশতম বাজেট উল্লেখ করে বলেন, ‘আমি বলেছিলাম যে এটি হবে আমার জীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ বাজেট। বাজেট প্রথমে মন্ত্রিসভা পাস করে ১ জুনে, সেদিনই অপরাহ্নে এই বাজেট প্রস্তাব সংসদে পেশ হয়। দীর্ঘ আলোচনা ও বিতর্কের পর বাজেটটিকে নানাভাবে সমৃদ্ধশালী ও জনবান্ধব করে আজকে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন ও পরামর্শ গ্রহণ করে যেভাবে এটি প্রস্তাবিত হয়েছে তাতে সত্যিই দাবি করছি যে এটি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠতম বাজেট।’
তিনি বলেন, বিগত এক দশকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে অভাবনীয় অগ্রগতি সাধিত হয়েছে তার পেছনে রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর প্রাজ্ঞ ও দূরদর্শী উন্নয়নের দর্শন। তাঁর রচিত উন্নয়নের রূপকল্প দেশের আপামর মানুষের মনে সৃষ্টি করেছে এক অসাধারণ আত্মপ্রত্যয়। দেশের অগ্রগতির এ মহাযজ্ঞে দেশের সকল মানুষই গর্বিত অংশীদার।
মুহিত ব্যক্তিগত লাভ-ক্ষতির উর্ধ্বে ওঠে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ গঠনের মাধ্যমে জাতির জনকের স্বপ্ন পূরণে আত্মনিয়োগ করার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, সকলের সম্মিলিত প্রয়াসে একটি সমৃদ্ধ, উন্নত, সুখী ও শান্তিময় বাংলাদেশ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
তিনি তার বক্তব্যে বাজেটে কর প্রস্তাবে সংশোধনী আনেন। সংশোধিত প্রস্তাব অনুযায়ী মেডিটেশন সেবাকে আগামী ২ বছরে ভ্যাটের আওতার বাইরে রাখার ঘোষণা দেন। পাশাপাশি কম্পিউটার, সেলুলার ফোন এবং এর যন্ত্রাংশ, স্থানীয় মোটর সাইকেল শিল্পের ওপর মূসক অব্যাহতি প্রদান করা হয়। স্থানীয় পর্যায়ে উৎপাদিত রেফ্রিজারেটর যন্ত্রাংশ সংযোজনের ওপর মূসক হ্রাস করা হয়। প্লাস্টিক ও গ্লাস ফাইবার নির্মিত কন্টেইনারের ওপর আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়। সোলার প্যানেলের ওপর বর্ধিত আমদানি শুল্ক প্রত্যাহার করা হয়।
তিনি বলেন, এছাড় তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ বহাল রেখে সবুজ কারখানার ক্ষেত্রে আয়কর হার ১০ শতাংশ এবং অন্যদের ক্ষেত্রে ১২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ব্যাংক সঞ্চয়ী হিসাবে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত শূন্য শুল্ক, ১ লাখ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বিদ্যমান ১৫০ টাকা, ৫ লাখ থেকে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত ৫শ’ টাকা, ১০ লাখ থেকে ১ কোটি টাকা পর্যন্ত ২ হাজার ৫শ’ টাকা, ১ কোটি থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ১২ হাজার টাকা এবং ৫ কোটি টাকার ঊর্ধ্বে ২৫ হাজার টাকা আবগারি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে।

 

B/S/S/N

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে