জয়নাল আবেদীন হিরো, নীলফামারী জেলা প্রতিনিধিঃ কাজ দুই নয় তিন নম্বরই হচ্ছে। তাতে কি, এটাই মন্দের ভালো। কারণ যে বাজেট, তা দিয়ে তিন নম্বর কাজও করা সম্ভব নয়। তবুও এলাকাবাসীর অসুবিধার কথা চিন্তা করে নিম্নমানের উপকরণেই রাস্তাটা করে দিচ্ছি। এরপরও যদি কারো কিছু করার থাকে করুক। এমনই মন্তব্য করেছেন নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার খাতামধুপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মাসুদ রানা পাইলট।

একেবারে ব্যবহার অযোগ্য ইট দিয়ে সোলিং এবং ঢালাইয়ের কাজ করে নামকাওয়াস্তে রাস্তা সংষ্কার করায় এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে সত্যতা পেয়ে সংবাদকর্মীরা জিজ্ঞাসা করলে এমন মন্তব্য করেন তিনি। প্রশাসন যেখানে নিরব সেখানে সাংবাদিকদের মাথা ব্যাথা কেন?

ইউনিয়ন পরিষদের সচিব মো. জাকির হোসেন বলেন, ইউনিয়নের ৭ নং ওয়ার্ডের মুশরত ধুলিয়া সর্দারপাড়ার হাজী মমতাজ আহমেদের বাড়ির সামনে ১.১৯ মিটার (৪০০ ফিট) কাঁচা রাস্তা ইটের সোলিংসহ সিসি ঢালাই করা হচ্ছে। এজন্য স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে ইউনিয়ন উন্নয়ন সহায়তা তহবিলের ৩ লাখ ৪৩ হাজার ৬শ’ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ঠিকাদার মোকছেদুল কাজটি করছেন।

ঠিকাদার মোকছেদুল বলেন, কাজটি আমার নামে নিয়ে মূলতঃ ভাইস চেয়ারম্যান করছেন। আর এলাকাবাসী জানান, কাজটি করছেন চেয়ারম্যান নিজেই। একেবারে নিম্নমানের ইট দিয়ে কোনরকমে কাজ শেষ করা হচ্ছে। এলাকাবাসী এমন নামকাওয়াস্তে কাজের প্রতিবাদ করেন। কিন্তু স্থানীয় মুরুব্বী ও চেয়ারম্যানের কাছের লোক নীলফামারী জেলা এলজিইডি অফিসের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী হাজী মমতাজ এলাকাবাসীকে দমিয়ে রেখে নয়ছয় কাজই মেনে নিতে বাধ্য করছেন। তার মতে বাধা দিলে যে কাজ হচ্ছে তাও হবেনা। তাই মন্দের ভালো হিসেবে তিন নম্বরই যথেষ্ট।

হাজী মমতাজের সাথে কথা বললে তিনি বলেন,
আমাদের এলাকা দীর্ঘ দিন থেকে অবহেলিত। বিগত চেয়ারম্যান জুয়েল চৌধুরী পর পর দুইবার দায়িত্বে থাকলেও প্রতিহিংসা বশতঃ ৭, ৮ ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডে এক পয়সারও কাজ করেনি। সেখানে বর্তমান চেয়ারম্যান এই এলাকাকে গুরুত্ব দিয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে রাস্তাটি সংষ্কারের উদ্যোগ নিয়েছেন।

তিনি আরও বলেন, রাস্তা সারাবছরই চলাচল অযোগ্য। বর্ষায় এক হাটু কাদা হয়। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়ে আমরা যাতায়াত করি। এমন পরিস্থিতি দেখে আমাদের সাথে কেউ আত্মীয়তাও করতে চায়না। এমতাবস্থায় চেয়ারম্যান মাসুদ যেটুকু বরাদ্দ পেয়েছেন তা দিয়ে যতটা সম্ভব কাজ করছেন।

নিম্নমানের উপকরণ বিষয়ে তিনি বলেন, কি করবে বলেন? বাজেট যখন করা হয় তখন ইটের দাম ছিল ৮ হাজার টাকা। আর এখন ১৩ হাজার টাকা প্রতি হাজার ইটের দর। তাই ওই বাজেটে ১ বা ২ নম্বর ইট দিয়ে কাজটা করা সম্ভব নয়। তাই যেমন করেই হোক রাস্তাটাতো চলাচলের মত হবে। তা না হলে এলাকাবাসীর কষ্ট লাঘব করা দূরহ ব্যাপার। এজন্য সবাইকে বুঝিয়ে এই কাজই মেনে নিয়েছি।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রকৌশলী এস এম রেজা আলী রাজু জানান, নিম্নমানের ইট দিয়ে কাজ করার অভিযোগ পাইনি। জুন মাস ক্লোজিং নিয়ে ব্যস্ত থাকায় কাজ চলাকালে যাওয়াও সম্ভব হয়নি। তবে এখন তদন্ত করে দেখবো। সত্যতা পাওয়া গেলে বিল দেয়া হবেনা।

উল্লেখ্য, মাসুদ রানা পাইলট চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর এলাকা ভিত্তিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন। মাটি কাটার কাজে স্বচ্ছল ব্যক্তিদের নাম দিয়ে প্রকৃত দুস্থ অসহায়দের বঞ্চিত করেছেন।

ইউনিয়নের দক্ষিনাংশকে নিজ এলাকা হিসেবে একতরফাভবে ওই অঞ্চলেই সব সুবিধা দিচ্ছেন। এমন অভিযোগ করেছেন উত্তরাংশের ১ থেকে ৬ নং ওয়ার্ডের মেম্বার ও সংরক্ষিত নারী সদস্যরা। এমনকি তারা পরিষদের সার্বিক কার্যক্রম বর্জন করেছিল।

এসব ব্যাপারে সংবাদ প্রকাশ করায় চেয়ারম্যানের মন্তব্য হলো একজন নির্বাচিত চেয়ারম্যান তার ইচ্ছেমতই পরিষদ চালাবে। তাতে কেউ বেজার হলে কিছুই করার নাই। আগের চেয়ারম্যানও তো ১০ বছর এভাবে চলেছে। তখন সমস্যা না হলে আমার ক্ষেত্রে কেন হবে?

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে