football2

বিডি নীয়ালা নিউজ(১৫ই ফেব্রুয়ারী ১৬) মারুফ সরকার (সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি): উনিশ শতকের গোড়ায় ভারতীয় উপমহাদেশের মাটিতে প্রথমবারের মতো কলকাতা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা ঘটে। ভারত ভাগের পর ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের অভিষেক ঘটে চল্লিশ দশকের শেষার্ধে। দ্বি-জাতিতত্ত্বের পরবর্তী কলকাতার কিছু সংখ্যক মুসলিম খেলোয়াড় পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান স্বাধীন বাংলাদেশ) প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকায় চলে আসেন। ঢাকা ফুটবল লীগ গোড়াপত্তন হলে সেখানেই গঠিত হলো ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। নবাব খাজা সলিমুল্লাহ, শাহজাহানসহ আরো অনেক ক্রীড়াবিদ মিলে ঢাকা মোহামেডানকে সুসংগঠিত ক্লাব হিসেবে গড়ে তোলেন। ঢাকা ফুটবল লীগ ওই পঞ্চাশ ও ষাট দশকে ঢাকা মোহামেডান যথেষ্ট শক্তিশালী ও দুর্ষর্ষ একটি শ্রেষ্ঠ দল হিসেবে গড়ে ওঠে। আসল কথা এখন লেখা যাক : প্রথমে প্রশ্ন তুলি-সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের সর্বপ্রথমবার আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক কে ছিলেন? এই প্রশ্নোত্তর সঙ্গে সঙ্গে জবাব পাওয়া যাবে-কেন দাদা, আব্দুল লতিফ মির্জা। যিনি একাধারে বীরমুক্তিযোদ্ধা, সাবেক এমপি, রাজনীতিবিদ ও ক্রীড়ামনষ্ক ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি এখন ইহজগতে বেঁচে নেই। আব্দুল লতিফ মির্জাই সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের আহ্বায়ক কমিটির প্রথম আহ্বায়ক। মোহামেডানের প্রথম যুগ্মআহ্বায়ক কে ছিলেন? ক্রীড়া সম্পাদক কে ছিলেন-খেরোখাতায় চলে আসতে বাধ্য। সে কথায় পরে আসছি। ১৯৮৪ সাল ঢাকায় অনুষ্ঠিতব্য ফেডারেশন কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট। ফাইনাল খেলা। ঢাকার দুই চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব বনাম আবাহনী ক্রীড়াচক্র। ২-০ গোলে জিতে মোহামেডান স্পোটিং ফেডারেশন কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়। সিরাজগঞ্জ মহকুমার মহল্লায়-মহল্লায় সাদা-কালো পতাকাধারী ফেডারেশন চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় মোহামেডান সমর্থকগোষ্ঠীরা বিজয়ের মিছিলে যোগ দেন। সে এক অভূতপূর্ব বিশাল বিজয় মিছিল! তবে কখন, কিভাবে সিরাজগঞ্জ মোহামেডান গড়ে উঠে, সেই ইতিহাস খুঁজে পাওয়া যায় না। কিংবা কারোর কাছে এমন তথ্য নেই। তারিখ বা সালও নেই। যা হোক, প্রতিকূল-অনুকূল পরিস্থিতিতে সিরাজগঞ্জের বেশ কয়েকজন ফুটবলারাগীরা স্থানীয় মোহামেডান ক্লাব গঠনে অনুভব করেন। জড়িয়ে পড়েন বাহিরগোলার আবদুল ওয়াহাব, খেদন সর্দারের মোড়ে মরহুম আব্দুল মান্নান ঢোল, বিএ কলেজ রোডের মরহুম জয়নাল আবেদীন, আমলাপাড়ার মরহুম আবদুল পাশা, মাড়োয়ারী পট্টি’র আজাদুর রহমান আজাদ, আমলাপাড়ার জাহিদুর রহমান পীর, কালীবাড়ীর আবদুল ওয়াহাব, টিএম শামীম পান্না, গোপাল দাসসহ নাম না জানা আরো অনেকে। এরা উষালগ্ন থেকে সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। মোহামেডানের সক্রিয় ক্লাব কর্মকর্তারা অনেক চড়াই-উৎরাইয়ের পরও আজকে ধরে রেখেছেন। এটাই সবচেয়ে বড় কৃতিত্ব। সময়টা ছিল ১৯৮৬ সালে। সারা বাংলাদেশে ফুটবল খেলার জোয়ার ছিল স্বর্ণযুগ। তখনও কিন্তু সিরাজগঞ্জ শহরে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গঠিত হয়নি। স্থানীয় জেলা শহরে বেশ কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠক অনুভব করেন সাদা-কালো মোহামেডান নিয়ে একটা কিছু করা। সমর্থিত ভাষ্যমতে, শহরের ব্যস্ততম বাহিরগোলার ক্রীড়ামোদী ব্যক্তিত্ব আবদুল ওয়াহাবকে আহ্বায়ক করে সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গঠিত হয়। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর একটা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত হলো। সভাপতি/আহ্বায়ক কমিটিতে ৭ সদস্যরা ছিলেন, মরহুম এ্যাডভোকেট হায়দার আলী, মরহুম মোতালেব হোসেন লেবু, হাজী মোদাসসের হোসেন লরেন্স, মরহুম আব্দুল লতিফ মির্জা, আলহাজ্ব মীর রওশন আলী, আলহাজ্ব হুমায়ুন ইসলাম খান ও ডাঃ আব্দুস সামাদ আজাদ খোকন। সাধারণ সম্পাদক/সদস্যসচিব কমিটিতে ছিলেন যারা-মোঃ আব্দুল ওয়াহাব (চেয়ারম্যান), মোঃ নজরুল ইসলাম রতন ও আব্দুল ওয়াহাব। এবং উপদেষ্টা কমিটিতে ছিলেন-মরহুম মফিজউদ্দিন তালুকদার (সাবেক এমপি), আব্দুল মান্নান তালুকদার (সাবেক এমপি), মরহুম জয়নাল আবেদীন, মরহুম আব্দুল মান্না ঢোল (সাবেক কমিশনার) ও মরহুম টিএম শামীম পান্না (বীরমুক্তিযোদ্ধা)। পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে মরহুম আব্দুল লতিফ মির্জাকে সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত করা হয়। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন মোঃ আব্দুল ওয়াহাব। যিনি আহ্বায়ক কমিটিতে যুগ্মআহ্বায়ক হিসেবে অভিষিক্ত হন। সেটা ছিল ওই দু’জনের জীবনে প্রথম লাইমটাইম। একেবারে পাগল ক্রীড়ামোদী। আহ্বায়ক কমিটিতে প্রথম সাংগঠনিক সম্পাদক হন আবিদ হোসেন সাদী। প্রথম ক্রীড়া সম্পাদক শামীম হোসেন, প্রথম কোষাধ্যক্ষ জাহিদুর রহমান পীর, প্রচার সম্পাদক আজাদুর রহমান রাজাসহ আরো অনেকে। আরেকটি সমর্থিত প্রাপ্ত তথ্যমতে, পরবর্তী সিরাজগঞ্জ প্রেসক্লাবে মরহুম আবদুল লতিফ মির্জাকে আহ্বায়ক ও আবদুল ওয়াহাবকে যুগ্মআহ্বায়ক করে একটি শক্তিশালী সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গঠিত হয়। জেলা প্রতিষ্ঠার পর মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গঠনে শহরে বেশ কয়েকজন ক্রীড়া সংগঠকের যথেষ্ট অবদান রেখেছেন। ক্লাব গঠনের শুরুতে কিছু খেলা পাগল ক্রীড়া সংগঠক সিরাজগঞ্জ মোহামেডানকে লাইমলাইটে আনেন। তারা হলেন, সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় মরহুম আবদুল লতিফ মির্জা, সাবেক এমপি (উল্লাপাড়া), সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় টি.এম. আবদুল মান্নান তালুকদার, (সাবেক এমপি), সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় মরহুম জয়নাল আবেদীন, মরহুম আবদুল মোতালেব লেবু, গোপাল কৃষ্ণ বসাক, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক খেলোয়াড় মরহুম টি.এম.শামীম পান্না, মরহুম আবদুল মান্নান ঢোল, আবদুল মান্নান সরদার, ফয়সাল ওয়াহিদ বাবু, ধানবান্ধি’র নজরুল ইসলাম রতন, বিএ কলেজ রোডে’র শামীম হোসেন, ব্যাপারীপাড়া’র আবদুস সাত্তার প্রমুখ। এর পাশাপাশি মরহুম আবদুল লতিফ মির্জা, গাজী হুমায়ুন ইসলাম খান, ডাঃ আবদুস সামাদ আজাদ, মোঃ আবদুল ওয়াহাব চেয়ারম্যান (বড়), আবদুল ওয়াহাব (ছোট) দফায় দফায় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে দীর্ঘদিন মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবের দলগঠনে অগ্রণী ভূমিকা ও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। খন্ডিত প্রাপ্ত তথ্যমতে, সিরাজগঞ্জ মোহামেডানকে ঘিরে দেশের ফুটবল তখন পূর্ণ জোয়ারের সময়। বাংলাদেশের ফুটবল আবহাওয়ার মেজাজ ছিল অন্যরকম। এক নম্বর জনপ্রিয় খেলা। এ সময়ে সিরাজগঞ্জ মোহামেডানের জন্ম হয় আশি দশকের শেষপ্রান্তে অর্থাৎ ১৯৮৫ কিংবা ১৯৮৬ সালে। পূর্ব পাকিস্তান আমলে ইয়ং স্টার ক্লাবের সাবেক ফুটবল খেলোয়াড় ও আমলাপাড়ার উকিল মরহুম হায়দার আলীকে (আমলাপাড়ার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সাবেক ক্রীড়াবিদ হাসান আলী তালুকদার জনের বাবা) আহ্বায়ক করে সিরাজগঞ্জ মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব গঠিত হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে