ডেস্ক রিপোর্টঃ চলতি জুলাই মাসে ১২ দিনে মারা গেছে ৫ শ্রমিক, ২ শিক্ষার্থী ও কৃষক দম্পতিসহ ১১ জন। অসাবধানতার কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বলে দাবি করেছেন ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোঃ লিঃ ও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তারা।

বরিশাল বিভাগের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকে প্রাপ্ত তথ্যমতে, চলতি জুলাই মাসে এ পর্যন্ত বিদ্যুৎস্পৃস্ট হয়ে মৃত্যুবরণকারী ১১ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছে থানা পুলিশ। শুক্রবার, বরিশাল জেলার গৌরনদী পৌরসভার চরগাধাতলী মহল্লায় সুরাইয়া জান্নাত খাদিজা (১৮) বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ দিন পর ১২ জুলাই হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করে সে। খাদিজা গৌরনদী গার্লস স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষার্থী ও একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সহকারী শিক্ষক মাওলানা গিয়াস উদ্দিনের কন্যা।

ওই দিন (১২ জুলাই) পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে সাহেব আলী সিকদার (৫০) নামের এক গাছকাটা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। তার বাড়ী পার্শ্ববর্তী বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ গ্রামে। গাছ কাটার সময় গাছের একটি ডাল বিদ্যুতের তারে পড়ে যায়। এ সময় বিদ্যুতায়িত হয়ে সাহেব আলীর মৃত্যু হয়।

ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মিলন হোসেন (৩৫) নামের এক রাজমিস্ত্রির মৃত্যু হয় ১২ জুলাই। মিলন উপজেলার সূর্য্পাশা গ্রামের মো. আলমগীর হোসেনের ছেলে। ভবনের ছাদে কাজ করার সময় হাতে থাকা লোহার রড বিদ্যুতের তারের সংস্পর্শে এলে তিনি বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন।

একই দিন (১২ জুলাই) ওই উপজেলায় একটি বাড়ির ছাদে পল্লী বিদ্যুতের পড়ে থাকা তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান মগড় ইউনিয়ন ছাত্রদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক রায়হান।

এর আগে ১১ জুলাই বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে এক কৃষক দম্পতির মৃত্যু হয়। কৃষক কামাল হোসেন (৪০) ও তার স্ত্রী মমতাজ বেগম (৩০) নিজ বসতবাড়ি সংলগ্ন পাট ক্ষেতে বিদ্যুতের ছিঁড়ে পড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান।

১০ জুলাই বানারীপাড়া থানা কমপ্লেক্স সংলগ্ন নির্মাণাধীন একটি ভবনে রড তুলতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে শহিদুল ইসলাম খান (২৩) নামের নির্মাণ শ্রমিকের মৃত্যু হয়।

৯ জুলাই বরিশাল নগরীর রূপাতলীতে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মারা যান মাহাতাব হোসেন (৩৫) নামের একজন নির্মাণ শ্রমিক। ৭ জুলাই ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে এনামুল হক মিয়াজী (৪০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ওই দিনই (৭ জুলাই) পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে বিদ্যুতের তার জড়িয়ে কাদের আকন (৮০) নামের এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়।

এছাড়া ৩ জুলাই পিরোজপুরের মঠবাড়িয়ায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে জামাল হাওলাদার নামের শ্রমিকের মৃত্যু হয়। নির্মাণ কাজে পানি ব্যবহারের জন্য বৈদ্যুতিক মটরে সংযোগ দিতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হন তিনি।

এ বিষয়ে বরিশাল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর জিএম প্রকৌশলী সংকর কর বলেন, বিদ্যুৎ সম্পর্কে এ অঞ্চলবাসীর অধিক সচেতন হতে হবে। যে সকল খালি স্থান থেকে বিদ্যুতের তার টানা হয়েছে এখন সেই সকল স্থানে গৃহ কিংবা ভবন নির্মাণ হচ্ছে। যার কারণে ভবনের বেলকনি কিংবা ছাদের উপরে বিদ্যুতের তারের অবস্থান থাকছে। এতে ঘটছে দুর্ঘটনা ‘

তিনি বলেন, ‘ঝড় কিংবা দুর্যোগে তার ছিড়ে পড়লে আমাদের কাছে তাৎক্ষণিক কোন অভিযোগ আসে না। যখন ওই ছেঁড়া তারে বিদ্যুতায়িত হয়ে কেউ মারা যান, তখনই কেবল আমরা জানতে পারি।’

তিনি আরো বলেন, ‘ইতোমধ্যে সারা দেশে ইউআরআইডিএস প্রকল্পের মাধ্যমে পল্লী বিদ্যুতের ঝুঁকিপূর্ সংযোগ (ঘর-বাড়ীর ছাদ ও বেলকনি ঘেষা সংযোগ তার) গ্রহকদের বিনা খরচে সরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এতে করে দুর্ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে।’

পিবিএ /ইকে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে