bbc3

বিডি নীয়ালা নিউজ(১৯ই মার্চ১৬)-স্পোর্টস ডেস্কঃ কলকাতায় আজকের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচের আগেও তিনদিন আগে ইডেন গার্ডেন্সে ঘটে যাওয়া আর একটা বিষয় নিয়ে তুমুল চর্চা চলছে, আর তা হল সেদিন বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ম্যাচে ইডেন কীভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করল?

বুধবারের ওই ম্যাচে গ্যালারির সিংহভাগের সমর্থন যে পাকিস্তানের দিকে ছিল তাতে কোনও সন্দেহ নেই, এবং এই বিষয়টি বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়াতেও প্রবল আলোড়ন ফেলেছে – যারা আশা করেননি যে ইডেনের দর্শক সেদিন পাকিস্তানের হয়ে গলা ফাটাবেন।

কিন্তু কলকাতা এই ঘটনার কী ব্যাখ্যা দিচ্ছে? আর গ্যালারিতে অপ্রত্যাশিত সমর্থন পেয়ে পাকিস্তানের প্রতিক্রিয়াই বা কী?

আজকের ম্যাচেও কি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের জন্য কেউ চেঁচাবেন?

কলকাতার খিদিরপুর অঞ্চলের ক্রিকেটপাগল তরুণ মিনহাজ হোসেন যেমন সরাসরি বলছিল বুধবারের বাংলাদেশ-পাকিস্তান ম্যাচে সে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছে, তার কারণ ‘পাকিস্তানের ক্রিকেটাররা অনেক বেশি বিখ্যাত – সব দেশেই তারা প্রচুর সমর্থন পায়’।

‘আর কলকাতা তো ক্রিকেট ভালবাসে, যে ভাল খেলে তার জন্যই এ শহর মন ঢেলে দেয়’ মিনহাজের সরল ব্যাখ্যা। সে না হয় বোঝা গেল, কিন্তু মিনহাজ কি আজকের ম্যাচেও পাকিস্তানের জন্য চেঁচাবে?

সে প্রশ্নই ওঠে না, কারণ ভারত যখন নিজেদের দেশে খেলছে – পুরো সমর্থন পাবে তারাই। মিনহাজের কথায়, ‘ভারত যখন খেলবে – সে ভাল খেলুক বা খারাপ খেলুক – তাদেরকেই সমর্থন করতে হবে’।

ফলে মিনহাজ আজ ভারতের পতাকা নিয়েই মাঠে ঢুকছে – কিন্তু এই তরুণ বা তার মতো আরও অনেকে যে বুধবার পাকিস্তানের জন্য টানা গলা ফাটিয়ে গেছে তাতে অসম্ভব আপ্লুত পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা ।

সদ্য আইসিসি-র নির্বাসন কাটিয়ে পাকিস্তান দলে ফেরা মহম্মদ আমের তো এদিন এক পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন ওরকম বিপুল সমর্থন পাওয়ায় তার মনে হচ্ছিল ইডেন গার্ডেন্স নয় – লাহোরের গদ্দাফি বা পাকিস্তানেরই কোনও স্টেডিয়ামে খেলছেন।

দলের কোচ ওয়াকার ইউনুসও বলেছেন, ‘আমাদের ভীষণ ভাল লেগেছে যে বাংলাদেশ ম্যাচে দর্শকরা পুরোপুরি আমাদের পাশে ছিল। আজকের ম্যাচে সেটা হবে আশা করছি না – কিন্তু সেদিনের ম্যাচ থেকে ওই সমর্থনটা আমাদের বড় প্রাপ্তি। কে জানে, আমাদের ক্যাপ্টেন শাহিদ আফ্রিদি পাকিস্তানের চেয়েও এখানে বেশি ভালবাসা পায় বলে যে মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছে – তার জন্যই হয়তো মানুষ এখানে আমাদের এত ভালবেসেছেন!’

ইডেনের অবশ্য পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের জন্য ভালবাসা উজাড় করে দেওয়ার প্রচুর নজির আছে – ইমরান খান, শোয়েব আখতার, আসিফ ইকবালরা তার সাক্ষী।

পাকিস্তান থেকে বিশ্বকাপ কভার করতে কলকাতায় আসা প্রবীণ ক্রিকেট সাংবাদিক আবদুর রশিদও বলছিলেন, পাকিস্তান সেদিনও ভাল খেলেই দর্শকদের মন জিতেছিল।

‘দেখুন আপনাকে মানতেই হবে পাকিস্তান সেদিন দারুণ খেলেছিল – আর দর্শকরাও তা ভীষণ উপভোগ করেছে। মহম্মদ আমের যেভাবে প্রথম ওভারেই বাংলাদেশেরে ওপেনারকে বোল্ড করল তাতে পরিবেশটাই এমন হয়ে গিয়েছিল যে মানুষ ভাবল আমার টিম খেলছে না-তো কি, এত ভাল খেলাটাকে সম্মান করতেই হয়’, বলছিলেন মি রশিদ।

পাকিস্তান যেভাবে ওই সমর্থনের ব্যাখ্যা দিচ্ছে, প্রায় অবিকল একই যুক্তি দিয়ে ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব বেঙ্গল বা সিএবি-র সচিব অভিষেক ডালমিয়াও বিবিসিকে বলছিলেন – ইডেনের সমঝদার দর্শক ভাল ক্রিকেটের কদর করতে জানে, তাই তারা সেদিন পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল।

তার কথায়, ‘ইডেন চিরকালই ভাল ক্রিকেটকে সমর্থন করে এসেছে – বিদেশি টিমগুলো ভাল খেললে তাদের হয়েও গলা ফাটিয়েছে।’

ভাল বিদেশি টিমকে ইডেনের দর্শক ভালবাসে তাতে কোনও অসুবিধা নেই – কিন্তু তাই বলে তারা বাংলাদেশের বিরোধিতা করবে? এবারে কিন্তু বেশ অপ্রস্তুত শোনায় প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়ার ছেলে অভিষেককে।

একটু আমতা আমতা করেই তিনি বলেন, ‘এটা কিন্তু বাংলাদেশের বিরোধিতা নয় – বরং ভাল ক্রিকেটের জন্য সমর্থন। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের, এমন কী সিএবি-রও ভীষণ ভাল সম্পর্ক। আমাদের মধ্যে অনেক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামও আছে – বন্ধনটাও খুব নিবিড়। বাংলাদেশ ইডেনকে অনায়াসে তাদের হোম গ্রাউন্ড বলে ভাবতে পারে। সে দন দর্শক শুধু ভাল ক্রিকেটকেই সাপোর্ট করেছে – এটাই বলব।’

ইডেনকে যতই তিনি বাংলাদেশেরও হোম গ্রাউন্ড বলে বর্ণনা করার চেষ্টা করুন, ১৬ মার্চের ম্যাচের পর বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুরাগীদের তা বিশ্বাস করতে অবশ্য বেশ কষ্ট হচ্ছে।

তবে পাকিস্তান থেকে ভিসা পেয়ে খুব কম সমর্থকই ইডেনে এসে পৌঁছতে পারছেন – ফলে আজ অন্তত পাকিস্তান গ্যালারি থেকে কোনও সমর্থন পাবে না সেটা তারা নিশ্চিন্তে ধরে নিতে পারেন।

BBC

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে