প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিডি নীয়ালা নিউজ( ১ লা সেপ্টেম্বর, ২০১৬ইং )-ডেস্ক রিপোর্টঃ সীমান্ত ব্যাংক বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সকল সদস্যদের জন্য ঈদ উল আযহার উপহার বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার পিলখানায় বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)-এর সদর দফতরে সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে  নিজের হিসাব খোলার মাধ্যমে ব্যাংকের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল আজিজ আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও  উপস্থিত ছিলেন  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোজাম্মেল হক খাঁন প্রমুখ।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘মাত্র কয়েক দিন পরই আমাদের পবিত্র ঈদ উল আযহা। সীমান্ত ব্যাংকের উদ্বোধন এই বাহিনীর সকল সদস্যদের জন্য আমি ঈদের শুভেচ্ছা হিসাবে উপহার দিলাম। ঈদ উপহার। আমি আশা করি, এই ব্যাংক বিভিন্ন সদস্যদের জন্য এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও যথেষ্ট অবদান রাখতে পারবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সীমান্তে বিজিবির কঠোর অবস্থানের ফলে চোরাচালান, মাদক পাচার, নারী-শিশু পাচার, সীমান্ত অপরাধ অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। যারা এসব কাজে লিপ্ত রয়েছে, তারা প্রায়ই ধরা পড়ছে। বিজিবি-বিএসএফ এর সঙ্গে একটা সমঝোতাপূর্ণ সম্পর্কের ফলে সীমান্তে নিহতের সংখ্যাও কমে এসেছে।’
তিনি বলেন, ‘সীমান্তে কোনও কারণে বিএসএফের হাতে কোনও বাংলাদেশি নাগরিক আটক হলে যোগাযোগের মাধ্যমে ফিরিয়ে আনা যাচ্ছে। বাংলাদেশের স্থল সীমানায় একদিকে মিয়ানমার আরেক দিকে ভারত। এই জায়গাগুলোতে সততার সাথে সীমিত সম্পদ নিয়েও বিজিবি তার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ‘সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবিকে আধুনিক ও যুগোপযোগী বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে আমরা ‘বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ আইন- ২০১০’ পাস করেছি। এর ফলে বিজিবির সাংগঠনিক কাঠামো শক্তিশালী হয়েছে। রিজিওনাল সদর দফতর স্থাপন করে কমান্ড বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে, যা বাহিনীকে গতিশীল ও সুসংগঠিত করছে। বিজিবির গোয়েন্দা সংস্থাকে আরও শক্তিশালী করে বর্ডার সিকিউরিটি ব্যুরো প্রতিষ্ঠা করেছি।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন,‘আমাদের যে স্থল সীমানা রয়েছে, সেখানে ভারত এবং মিয়ানমারের সাথে ৪৭৯ কিলোমিটার অরক্ষিত সীমান্ত এলাকায় গত বছর ডিসেম্বর পর্যন্ত ৫৫টি বিওপি নির্মাণ করা হয়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে দুর্গম সীমান্ত রয়েছে, সেটা সুরক্ষার জন্য ‘সীমান্ত সড়ক নির্মাণ প্রকল্প’ গত ৭ জুলাই আমরা একনেকে অনুমোদন করে দিয়েছি। আশা করি, অচিরেই এর কাজও শুরু হবে।’

তিনি বলেন, ‘এ সব জায়গায় যোগাযোগ করার সুবিধার্থে আমরা বিজিবির এয়ার উইং গঠন করে দিয়েছি। তবে সেখানে একটি মাত্র হেলিকপ্টার, তাও বেশ পুরনো হয়ে গেছে। কাজেই আমি নিজেই মহাপরিচালককে বলেছি, অন্তত আরও দুটি হেলিকপ্টার আপনাদের প্রয়োজন। আমি নিজেই প্রস্তাবটা দিয়েছি এবং বলেছি, এক সঙ্গে দু’টি কিনতে পারবো না। একটা একটা করে কিনবো।আমাদের এয়ার ফোর্স আছে তারা সহযোগিতা করবে। পুলিশেরও হেলিকপ্টার আছে তারাও সহযোগিতা করবে।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুটো প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক বজায় রেখেই আন্তর্জাতিক আদালত থেকে রায় পেয়ে বিশাল সমুদ্রসীমা পেয়েছি।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই আমাদের এই বাহিনী আরও শক্তিশালী ও আত্মনির্ভরশীল হোক। আজকে যে আমরা সীমান্ত ব্যাংক চালু করলাম এটা বিজিবি ওয়েল ফেয়ার ট্রাস্টের স্বনির্ভর প্রতিষ্ঠান। আমি আশা করি, বিজিবি ট্রাস্ট আরও নতুন নতুন উপার্জনশীল প্রকল্প গ্রহণ করবে। তাতে এই বাহিনীর সদস্যরাই লাভবান হবেন।’

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই সকল বাহিনীকেই আমরা একেকটা ব্যাংক করে দিয়েছি। আমাদের সেনা বাহিনী রয়েছে। আমাদের নৌ-বাহিনী, বিমান বাহিনীও চাচ্ছিলো। তাদেরকে বলেছি, যৌথভাবে করতে। তারা সে উদ্যোগটাও নিয়েছে, তাদেরটাও হয়ে যাবে। আমাদের বিজিবির ব্যাংকের প্রয়োজন ছিল, সেটা করে দিলাম।’

তিনি বলেন, ‘আমরা খুব শিগগিরই পল্লী রেশনিং চালু করতে যাচ্ছি। অতি দরিদ্র, পঙ্গু প্রতিবন্ধীদের জন্য এই পল্লী রেশনিং ব্যবস্থা করবো। রেশন কার্ড যাদের হাতে থাকবে, ১০ টাকায় তারা চাল কিনতে পারবে। সে সুযোগটা আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’

তিনি বলেন, ‘পঁচিশে মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু দেওয়া স্বাধীনতার ঘোষণা ইপিআর সদস্যরা ওয়ারলেস মেসেজ থেকে সারা দেশে প্রচার করে। সেই সদস্যদের চার দিন অমানসিক নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী। আমি তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। বারো হাজার বিজিবি (তৎকালীন ইপিআর) সদস্যরা মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘২০১০ সালের ঘটনায় তৎকালীন মহাপরিচালকসহ ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা এবং ৭৪টি মূল্যবান প্রাণ আমরা হারিয়েছি। আজকের দিনে আমি তাদেরকেও স্মরণ করি এবং তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাই।’

বিজিবির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে ২০১৩ সালের শেষের দিক থেকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে, নির্বাচনের সময় এবং নির্বাচনের পরবর্তীতে ২০১৫ সালের সেই ৫ জানুয়ারি থেকে দীর্ঘ তিন মাস বিএনপি-জামায়াত জোটের যে অগ্নিসন্ত্রাস, অর্থাৎ আগুন দিয়ে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করা, তাদের ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ তারা চালিয়ে যাচ্চিলো এবং সরকারি সম্পদ তারা ধ্বংস করছিল। নৈরাজ্য ও ধ্বংসের পথে ঠেলে দিচ্ছিল, সেই সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থা পুলিশ-র‌্যাবের সঙ্গে আমাদের বিজিবিও ভূমিকা পালন করেছিলেন। তাদের সে বলিষ্ঠ ভূমিকা আমরা সব সময় স্মরণ করি।’

 

বা/ট্রি

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে